শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২৮ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
‘মার্চ ফর গাজা’য় অংশগ্রহণকারীদের জন্য জরুরি ৫ নির্দেশনা তালিবুল ইলমের আবশ্যকীয় পাঁচটি কাজ পাকিস্তানের সব সমস্যার পেছনে ইহুদি ষড়যন্ত্র থাকে: মাওলানা ফজলুর রহমান বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল নাহিদ মানবতার জন্য আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে: শায়খ আহমাদুল্লাহ ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার: বিএনপি মাদরাসাছাত্রদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কাজ করছে এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখন সশস্ত্র ল’ড়াই ফরজ: মুফতি তাকি উসমানি ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান শায়খে চরমোনাই’র নড়াইলে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলায় আ. লীগের ৪৮ নেতাকর্মী কারাগারে

দামের ওপর দাম করার ব্যাপারে হাদিসে যে ধরনের নিষেধাজ্ঞা এসেছে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘কোনো মুসলিম যেন অপর মুসলিমের দামের ওপর দাম না করে এবং তার বিয়ের প্রস্তাবের ওপর প্রস্তাব না দেয়।’ (মুসলিম : ৩৩৩১ বোখারি : ২১৩৯-২১৪০)

কারও দরদামের ওপর দরদাম করা নিষিদ্ধ। হাদিসে এ বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

ইসলামি ফিকহের পরিভাষায় এটিকে ‘সাউমুন আলা সাউমি আখিহি’ এবং ‘বাইউন আলা বাইয়ি আখিহি’ বলা হয়। এর ব্যাখ্যা হলো, ক্রেতা-বিক্রেতার দরদাম চলাকালে অথবা দরদাম সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর তৃতীয় ব্যক্তি এসে দাম বাড়িয়ে পণ্যটি খরিদ করে ফেলা। এ বিষয়ে চার ধরনের নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। সাউমুন আলা সাউমি আখিহি বাইউন আলা বাইয়ি আখিহি ইজারতুন আলা ইজারতি আখিহি খিতবাতুন আলা খিতবাতে আখিহি

সাউমুন আলা সাউমি আখিহি : এ পরিভাষাটির অর্থ হলো, ক্রেতা-বিক্রেতার দরদাম চলাকালে তৃতীয় ব্যক্তি তাদের দরদামের ওপর দরদাম করে বেশি দামে পণ্যটি খরিদ করার প্রস্তাব করা। এভাবে অন্যের হক নষ্ট করা বড় অন্যায়। হাদিসে লেনদেনের এ হঠকারিতাকে নিষিদ্ধ ও হারাম আখ্যা দেয়া হয়েছে।

অন্য হাদিসে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, ‘নবী সা. নিষেধ করেছেন গ্রামের লোকদের পক্ষ থেকে পণ্যদ্রব্য শহরের লোকদের বিক্রয় করে দিতে, অথবা কৃত্রিম ক্রেতা সেজে দাম বাড়িয়ে বলতে, একজনের বিয়ের প্রস্তাবের ওপর অপরজনের প্রস্তাব দিতে, একজনের ক্রয়-বিক্রয়ের দরদাম করার ওপর অপরজনের দরদাম করতে এবং কোনো স্ত্রীলোককে তার বোনের পাত্র পূর্ণ করার উদ্দেশে তার তালাক দাবি করতে।’ আমরের বর্ণনায় আরও আছে, ‘একজনের দর করার ওপর অপরজনকে দর বলতে।’ (মুসলিম : ৩৩২৮)।

বাইউন আলা বাইয়ি আখিহি : এ পরিভাষাটির অর্থ হলো, ক্রেতা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাখা বা না রাখার স্বাধীনতার ভিত্তিতে কোনো পণ্য খরিদ করার পর তৃতীয় ব্যক্তি এসে বিক্রেতাকে কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি তার কাছে আরেকটু বেশি মূল্যে বিক্রি করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া। এভাবে ক্রয় করলেও অন্যের হক নষ্ট করা হয়। তাই এভাবে মানুষের হক নষ্ট করে ক্রয় করা নিষিদ্ধ।

হাদিসে এরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘কোনো মুসলিম যেন অপর মুসলিমের বেচাকেনার ওপর বেচাকেনা না করে এবং তার বিয়ের প্রস্তাবের ওপর প্রস্তাব না দেয়।’ (বোখারি : ২১৩৯-২১৪০)।

সাউমুন আলা সাউমি আখিহি ও বাইউন আলা বাইয়ি আখিহির মাঝে মৌলিক পার্থক্য : এ দুইটি চুক্তির মাঝে মৌলিক পার্থক্য হলো, সাউমুন আলা সাউমি আখিহিতে বেচাকেনা সম্পন্ন হওয়ার আগে তৃতীয় ব্যক্তি হস্তক্ষেপ করে কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আর বাইউন আলা বাইয়ি আখিহিতে বেচাকেনা সম্পন্ন হওয়ার পর তৃতীয় ব্যক্তি হস্তক্ষেপ করে কাক্সিক্ষত পণ্যটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

ইজারতুন আলা ইজারতি আখিহি : ভাড়ায় প্রদানকারী ও ভাড়াটিয়ার মাঝে কোনো পণ্য বা বস্তুর ভাড়ার ব্যাপারে আলোচনা চলাকালীন বা চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর তৃতীয় ব্যক্তির হস্তক্ষেপ করা এবং বস্তুটিকে নিয়ে যাওয়া। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপও নিষিদ্ধ।

খিতবাতুন আলা খিতবাতি আখিহি : কোনো মেয়েকে একজন বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর পর মেয়েপক্ষ বিয়েতে হ্যাঁ বা না কিছু বলার আগেই অথবা বিয়েতে সম্মতি ব্যক্ত করার পর তৃতীয় ব্যক্তি এসে প্রভাব বিস্তার করা এবং ওই মেয়েকে নিজের স্ত্রীরূপে পেতে চাওয়া- এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো, কেউ যখন কোনো মেয়েকে স্ত্রীরূপে পেতে চায় তার জন্য সমীচীন হলো, তার অভিভাবকদের মাধ্যমে যোগাযোগ করা এবং বিয়ের প্রস্তাব করা।

এক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি। তার অন্যতম হলো, অন্যের বিয়ের প্রস্তাবের ওপর প্রস্তাব না দেয়া। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী সা. থেকে বর্ণিত, ‘তোমরা কারও প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করো না। কেননা খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। একে অপরের ছিদ্রান্বেষণ করো না, একে অন্যের ব্যাপারে মন্দ কথায় কান দিও না এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা রোখো না; বরং পরস্পর ভাই হয়ে যাও। এক মুসলিম ভাইয়ের প্রস্তাবিত মহিলার কাছে বিয়ের প্রস্তাব করো না; বরং ওই পর্যন্ত অপেক্ষা করো, যতক্ষণ না সে তাকে বিয়ে করে অথবা বাদ দেয়।’ (মুসলিম : ৪৭৮৮, ইনআমুল বারি : ৬/২৬০-২৬১)।

দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের সামাজিক জীবনে ইসলামের এ বিধানগুলো চরম অবহেলার শিকার। আমরা প্রাত্যহিক জীবনে এমন অনেক কাজ করি, যা উল্লিখিত নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে; কিন্তু আমরা সেগুলোর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করি না। কেউ হয়তো নির্দিষ্ট কোনো জিনিস খরিদ করার জন্য আমার সঙ্গে পরামর্শ করল, আর আমি নিজেই সে জিনিসটি খরিদ করে নিলাম। অথবা কোনো মেয়েকে বিয়ে করার ব্যাপারে পরামর্শ চাইল, অথচ আমি নিজেই সেই মেয়েকে বিয়ে করে ফেললাম। কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীকে বেশি বেতনে আমার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে এলাম। যাত্রী রিকশাচালকের সঙ্গে দরকষাকষি করছে আর আমি বেশি দামে রিকশাটি নিয়ে নিলাম- এসবই নিষিদ্ধ ও ‘বাইউন আল বাইয়ি আখিহি’র অন্তর্ভুক্ত।

নির্মম সত্য হলো, আমাদের আলেম সমাজও আজ এ ব্যাধি থেকে মুক্ত নয়। কোনো মাদরাসার শিক্ষক অথবা মসজিদের ইমামকে অধিক বেতন দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়াও ‘বাইউন আল বাইয়ি আখিহি’র অন্তর্ভুক্ত। অথচ এ জাতীয় ঘটনা আমাদের আলেম সমাজের চিরাচরিত চিত্র।

লেখক : সম্পাদক, মাসিক আলহেরা


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ