শাহনূর শাহীন: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটে কাবা শরীফ অবমাননার ঘটনায় রাজ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৩ জুলাই সৌভিক কুমার নামক এক যুবক পবিত্র কাবা ঘরের উপর নোংরা ছবি বসিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার পর স্থানীয় মুসলমান অধিবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
বিক্ষোভের মুখে বসিরহাট জেলা পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করে। কিন্তু উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে গত দুদিন ধরে টানা বিক্ষোভে বসিরহাটে অচলাবস্থার সৃস্টি হয়েছে। পরে বিক্ষোভ প্রশমনে স্থানীয় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ বিক্ষুব্ধ মানুষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
এদিকে এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের রাজ্যপালের মধ্যে শুরু হয়েছে তুমুল বাকযুদ্ধ। গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেন।
ফোনে দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। কথা কাটাকটির এ পর্যায়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাগে ফোন কেটে দেন।
এরপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী’র বিরুদ্ধে একগাদা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।
মমতা বলেন, রাজ্যপাল আমাকে অপমান করেছেন। আমার রাজনৈতিক জীবনে এরকম অপমানিত আর কখনো হইনি। তিনি আমার সাথে যে ভাষায় কথা বলেছেন এভাবে তিনি বলতে পারেন না।
তিনি বলেন, রাজ্যের প্রধান হিসেবে রাজ্যপাল বিশেষ কোনো দল বা সম্প্রদায়ের নন। তিনি রাজ্যের সব নাগরিকের অভিভাবক।। তিনি কোনো পক্ষ নিতে পারেন না। বিশেষ একটা দলের কারো চিঠির প্রেক্ষিতে তিনি আমাকে এভাবে শাসাতে পারেন না।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে বলেন, দেশটাকে ভেঙে দিয়ে নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে আগুন লাগিয়ে বাইরে গিয়ে তিনি মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছেন।
তিনি বিদেশের ঐক্য চান আর দেশের মধ্যে আগুন লাগান। এটার ইতি হওয়া উচিত। আমাদের মতো লোকেরা এ সব সহ্য করবে না।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী যে ভাষায় ও ভঙ্গিমায় কথা বলেছেন, রাজ্যপাল তাতে বিস্মিত। রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে কথা একান্ত গোপনীয়। রাজ্যপালের বিশ্বাস ছিল, দু’পক্ষের মধ্যে যা কথা হয়েছে, তা কেউই প্রকাশ করবেন না।
তা ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী অপমানিত বোধ করতে পারেন এমন কোনও কথা দু’পক্ষের মধ্যে হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীকে হুমকিও দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যায় রাজভবন থেকে দেওয়া এক প্রেস বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিক্ষোভকারীদেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যে ছেলেটি অন্যায় করেছে, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা কী দেখলাম? আরেকটা দল গিয়ে সাম্প্রদায়িক ভাবে এটাকে উস্কে দিল। কাল দিন-রাত ঘুমোতে পারিনি।
খুবই দুঃখের সঙ্গে বলছি, এত কাজ করার পরেও দুটো দলের মধ্যে এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা অভিপ্রেত নয়। ওই ছেলেটিকে গ্রেফতার করার পরেও যে পক্ষ কাল সকাল থেকে রাস্তা আটকে লুঠ করেছে, তারা মোটেই রাজ্যের পক্ষে বলে আমি বিশ্বাস করি না।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়াক তা আমি চাই না। দু’পক্ষের কাছেই আমার আবেদন, দাঙ্গা নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না। কেউ প্ররোচনা দিলে আপনারা তাতে পা দেবেন কেন? বিজেপি তো প্ররোচনা দেওয়ার জন্যই আছে।
এই প্ররোচনায় যদি অন্যের ঘরে আগুন লাগে, কাউকে ছেড়ে কথা বলব না। আমি যখন এই চেয়ারে বসেছি তখন আমার কাছে সবাই সমান।
আমি কোনও গোষ্ঠী করি না। সব গোষ্ঠীই আমার কাছে সমান। আমি বিজেপির মতো একটা গোষ্ঠীর সঙ্গে থেকে আরেকটা গোষ্ঠীতে আগুন জ্বালাই না। হিন্দুর গায়ে লাগলেও আমার গায়ে জ্বালা ধরে, মুসলমানের লাগলেও একই হয়।
সুতরাং আমি আবেদন করব, যে গুটি কয়েক নেতা টাকার বিনিময়ে পুলিশের গাড়ি জ্বালাচ্ছে, থানা ঘেরাও করছে, তাঁদের আমি সম্মান করি না। আমি দুঃখিত, আমাকে এ সব বলতে হচ্ছে।
মা-মাটি-মানুষের সরকার আপনাদের অনেক নিরাপত্তা দিয়েছে এবং দিচ্ছে। কিন্তু আপনারা যদি মনে করেন, আমার দিকেই শেল ছুড়বেন, আমার বুকেই শেল বিঁধবে, তা হলে জেনে রাখুন, মমতা ব্যানার্জি কিন্তু কারো পক্ষে নয়, মানুষের পক্ষে। আমি দু’পক্ষের নেতাদের বলছি, আপনাদের জন্য আমাকে অনেক অসম্মানিত হতে হয়েছে।
আপনারা শান্ত হউন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। কাউকে প্ররোচিতও করবেন না।
এসএস/