শাহিদুল ইসলাম: গরু ছাড়াই পাওয়া যাবে গরুর দুধ! বিষয়টি হাস্যকর ও অবাস্তব মনে হলেও এটাই এখন বাস্তব। যুক্তরাষ্ট্রের ‘পারফেক্ট ডে’ নামক একটি কোম্পানি কৃত্রিমভাবে দুধ উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা শুধুমাত্র দেখতেই যে গরুর দুধের মতো হবে তা নয়, বরঞ্চ স্বাদ, গন্ধ কিংবা গুণগতমানের দিক থেকেও হবে প্রায় একই রকম।
রায়ান পান্ডিয়া ও পেরুমাল গান্ধ নামের দুই স্বপ্নবাজ তরুণ মিলে গড়ে তুলেছেন তাদের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান ‘পারফেক্ট ডে’। পেশায় বায়োমেডিকেল প্রকৌশলী দুই তরুণের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল গাভী ছাড়া গরুর দুধ বানানো।
বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, তারা দুজন যে দীর্ঘ দিন ধরে এক সঙ্গে গবেষণা করছেন তা কিন্তু নয়। কিছু দিন আগেও এরা একে অন্যকে ভালোভাবে চিনতেন না। কারণ একজন গবেষণা করতেন বোস্টনে আর অন্যজন নিউ ইয়র্কে। তবে একে অন্যের স্বপ্নের কথা জানতেন। এরপর দুজন মিলে তাদের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে এক সঙ্গে কাজ শুরু করেন এবং দুজনে মিলেই উদ্ভাবন করেছেন কৃত্রিম দুধ।
ভাইস মানচিজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রায়ান পান্ডিয়া বলেন, ‘বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম প্রোটিন তৈরি করা হয়। কৃত্রিম প্রোটিন দিয়ে আজকাল লাখ লাখ মেডিসিন ও মাল্টিভিটামিন প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই ধরনের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েই আমরা ভিটামিনযুক্ত কৃত্রিম দুধ তৈরির চেষ্টা করেছি।’
কৃত্রিম দুধ তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দুধটি বানাতে প্রথমে ঈস্ট (মদ প্রস্তুত বা রুটি তৈরির কাজে প্রয়োজনীয় ছত্রাক) নেওয়া হয়। তবে এটি যেকোনো ধরনের ঈস্ট নয়। বাটারকাপ নামের বিশেষ ধরনের ঈস্ট এটাতে ব্যবহার করা হয়। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার কর্তৃক সরবরাহকৃত এই ঈস্টে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে গরুর দুধের জিন সিকুয়েন্স ঢুকিয়ে সেটিকে গরুর দুধের মতো তরলে রূপান্তরিত করা হয়।’
এটা খাওয়ার সময় আপনি বুঝতেই পারবেন না, আসল না নকল। কারণ এর স্বাদ একেবারে গরুর দুধের মতো! কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে- এতে কোনো ল্যাকটোজ নেই। রয়েছে বাড়তি উদ্ভিজ চিনি, ভিটামিন এবং মিনারেল যা শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপাদেয়।
এটি মোড়কজাত করার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা বা ভেজাল নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। তাছাড়া এটি জিএমও (জেনেটিক্যালি মডিফাইড অরগানিজম) মুক্ত। ফলে প্রাণীর ডিএনএ সিক্যুয়েন্স পরিবর্তন আনা হয়েছে- ভোক্তার এমন আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।
পৃথিবীতে প্রচুর লোক রয়েছেন যারা প্রাণীজ আমিষ পরিহার করে চলেন। তারা দুধের চাহিদা পূরণের জন্য সাধারণত সয়াবিন বা বাদামের দুধ পান করেন। তবে এগুলোর স্বাদ ও গন্ধ কোনোটাই গরুর দুধের মতো নয়। কিন্তু পারফেক্ট ডে তাদের উদ্ভাবিত কৃত্রিম দুধ এমনভাবে বানানোর চেষ্টা করছেন, যাতে তার স্বাদ, মান ও পুষ্টিগুণে গরুর আসল দুধের মতোই হয়।
চলতি বছরের শেষের দিকে এটি বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তরুণ এই বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, কৃত্রিম এই দুধ একদিকে যেমন গরুর উপর চাপ কমাবে তেমনি তা কোটি মানুষের দুধের চাহিদা মেটাবে।