কাজী আখতারুজ্জামান
২০০১ সাল থেকে ঢাকায় থাকি। প্রায় সব ঈদই মা-বাবা ও নিজ গ্রামের সবার সাথে করা হয়। তবে মা বাবার হজের সফরের বসরসহ কয়েকটা ঈদ ঢাকায় করা হয়েছে। এতে একটা জিনিস আঁচ করতে পেরেছি, গ্রামের চেয়ে ঢাকার অসহায় মানুষগুলোর ঈদের আরো করুণ দশা। আর আমি অসহায়ত্ব একদম সহ্য করতে পারি না। সেই ছোট্ট থেকেই ভাবি এদের জন্য কি কিছু একটা করা যায় না? আর বড় হয়ে দেখি আসলে সব মানুষই কোনো না কোনোভাবে অধিকার বঞ্চিত। একধরনের মজলুম।
এসব চিন্তা থেকেই গত ২০১৬ সালে অধিকার বঞ্চিত মজলুম অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য একটি সংগঠন দাঁড় করিয়েছি। নাম দিয়েছি- অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি [অবাক]। এক বছরে খুদ্র পরিসরে অনেকগুলো কাজ করেছি।সর্বশেষ গত ২৫ রমযান তার আওতায় গুলিস্তান খন্দকার কনভেনশন সেন্টারে বিশিষ্টজনদের নিয়ে ইফতারির আয়োজন করেছি। সেখানে পথশিশুদের সমান কাতারে বসিয়ে খাইয়েছি। ওদের আকুতি শুনেছি।
আলহামদুলিল্লাহ সেদিন অতিথিবৃন্দের প্রশংসায় ভূষিত হয়েছে অবাক। অনুষ্ঠানে আমরা জানিয়েছি ইনশাআল্লাহ গুলিস্তানের পথশিশুদের ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে দেব না। তাদের মাঝে ঈদবস্ত্র বিতরণ করব।
২৯ রোজা। চানরাত। তখন আকাশে ঈদের চাঁদ হাসছিল। সব শিশু আনন্দে ভাসছিল। কিন্তু ওদের চেহারায় হতাশার ভাব ছিল। কারণ একটাই, নতুন জামা নাই। এই অসহায়ত্ব ঘুচাতে আমরা ‘অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি [অবাক]’ ওদের পাশে দাঁড়াই এবং একটি নতুন জামা পড়িয়ে ওদের মুখেও চাঁদের হাসি ফুটাই। আলহামদুলিল্লাহ!
ঈদের ভোরে নামাজ পড়তে বেরিয়েছি।বাইতুল মুকাররমে ৩য় জামাতে নামাজ আদায় করে বের হলাম। চোখে পড়ল বাইরে অনেক দরিদ্র শিশু মুসুল্লিদের সদকাহ গ্রহণ করছে। চতুর্থ জামাতের পরে ওদের নিয়ে পছন্দের চটপটির দোকানে বসালাম। ওরা আনন্দসহকারে তৃপ্তিভরে খেল। খানা শেষে স্টেডিয়ামের সুন্দর গলিটায় ওদের নিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরলাম। অনেক আনন্দ পেল ওরা। দোয়া দিয়ে ওরা বিদায় নিল।
এভাবে ওদের মুখে হাসি ফুটাতে পেরে স্বস্থি পেলাম মোরা। এরপর বন্ধুদের নিয়ে মুক্তাঙ্গনে আমার মসজিদের মুসুল্লিদের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় করলাম। অনেক হাদিয়াও পেলাম। যাক ভালই হল। শাওকত, রিয়াজ সালমান আরমানসহ আমরা সাত আটজন বন্ধু ছিলাম। সবাই মিলে এটাসেটা খেলাম। আনন্দ বিলাস করলাম। যোহর গড়িয়ে এলো। নামাজ পড়লাম। এরপর হালকা কিছু খেয়ে পল্টনের বাসায় একটু বিশ্রাম। বন্ধুদের নিমন্ত্রণ ফোনে ঘুমটা আর হয়নি। বের হলাম ঢাকায় আমার প্রিয় একটি ঘরের মেহমান হতে। ওরা ছোট বড় সবাই আমাকে ভালবাসে।অত্যন্ত অমায়িক একটি ধার্মিক পরিবার। শুধু খাওয়া দাওয়া নয়। ওদের সব বিষয়ে আমার মনের সাথে মিলে। তাই যতক্ষণ থাকি পুরো সময়টাই ভিষণ আনন্দে কাটে।
এরমাঝে বাড়ি থেকে মা-বাবা, ভাই-বোন, ভাইস্তা-ভাস্তি সবাই ফোনকলে আবেগ প্রকাশ করল। ঈদ মোবারক গ্রহণ করলাম। বললাম এইতো শিগগির আসছি।এভাবে সবার সাথে মন খুলে ঈদ আনন্দ শেয়ার করে ঈদটা পুরোপরি উপভোগ করলাম।
লেখক: সভাপতি, অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি [অবাক]