গতকাল এক মসজিদে ইফতারের দাওয়াত ছিলো। তাই ওখানে ইফতার করলাম। ঘটলো এক অপ্রীতিকর কাণ্ড। কয়েকজন লোক দস্তরখান ছাড়া ইফতারে বসে যাওয়ায় এক বয়োবৃদ্ধ চাচা তাদের খুব তিরস্কার করলেন। একপর্যায়ে এ কথাও বললেন, 'এই রোযা আর ইফতারে কী ফায়দা হবে? ইফতারে বসে নবীর সুন্নত নাই, বেকার, সব বেকার...।'
আসলেই কি দস্তরখান বিছানো সুন্নত? আর এই বাড়াবাড়ি কি ঠিক হলো? বিশিষ্ট ফিকহবিদ আল্লামা মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন বলেন, 'হ্যা, দস্তরখান ব্যবহার সুন্নত, তবে দস্তরখান কোনটা? যে পাত্রে খাবার রেখে আহার করা হয়, মূলত তাই দস্তরখান, খাবারের পাত্র যার উপর রাখা হয় তা দস্তরখান নয়। পাত্রের নিচে বিছানো চামড়া, প্লাষ্টিক বা কাপড়কে যে দস্তরখান বলা হয়, তা আসলে দস্তরখান নয়। কেননা খাবার এগুলোর উপর রেখে খাওয়া হয় না, বরং পাত্রে রেখে খাওয়া হয়। বিধায় ঐ পাত্রই দস্তরখান এবং সুন্নত এটাই। তবে তা নবিজির অভ্যাসগত প্রয়োজনীয়অভ্যাসগত প্রয়োজনীয় সুন্নত (সুন্নতে আদিয়া লিলহাজাহ)।
অতএব খাবারের সময় প্রচলিত দস্তরখান বিছানো সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে যে কথা প্রসিদ্ধ আছে তা ঠিক নয়, বরং খানা খাওয়ার উপযোগী যে কোন বস্তুর উপর খানা রেখে খেলেই এ সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। চাই তা কাচের পাত্র হোক কিংবা মাটির বাসন, মেলামাইনের প্লেট হোক বা কাঁসার বাটি অথবা অন্য কিছু। তথাপিও প্লাষ্টিক, চামড়া বা কাপড় ইত্যাদি বিছিয়ে তার উপর খাওয়া নিষেধ নয় এবং এতে দোষের কিছু নেই। বরং বিছিয়ে নেয়াই ভালো। কারণ এতে খাবারের শান প্রকাশ পায়। কিন্তু একে 'সুন্নতে হুদা' মনে করা এবং এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়।' .
(প্রমাণাদি ও রেফারেন্সসহ বিস্তারিত জানতে দেখুন হযরতের লিখিত-'ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা' পৃঃ৬৮-৭৬, সুনানে গায়রে হুদার বহস) . ইমাম গাযযালী রহ.ও এ কথা বলেছেন। তিনি লিখেন- . ﺇﻥ ﻣﻦ ﺁﺩﺍﺏ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﺃﻥ ﻳﻮﺿﻊ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺴﻔﺮﺓ ﺍﻟﻤﻔﺮﻭﺷﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ ... ﺃﻥ ﻫﻨﺎﻙ ﺃﺭﺑﻌﺔ ﺃﺷﻴﺎﺀ ﺣﺪﺛﺖ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻌﻢ ﻭ ﻫﻰ ﺍﻟﻤﻮﺍﺋﺪ ﻭ ﺍﻟﻤﻨﺎﺧﻞ ﻭ ﺍﻷﺷﻨﺎﻥ ﻣﺜﻞ ﺍﻟﺼﺎﺑﻮﻥ ﻭ ﺍﻟﺸﺒﻊ ... ) ﺍﺣﻴﺎﺀ ﻋﻠﻮﻡ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻟﻠﻐﺰﺍﻟﻰ ٢ / ١٨ ﺁﺩﺍﺏ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ )