শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

শবে বরাত নিয়ে সমাজে প্রচলিত ৬টি ভ্রান্ত আমল ও বিশ্বাস!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মনযূরুল হক

কোরআন ও হাদিস মতে শবে বরাত হলো ইবাদতের রাত। এ জন্যে মুসলিম দেশগুলিতে এ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। অনেক মসিজদ ও মহল্লায় অনুষ্ঠিত হয় মিলাদ মাহফিল ও জিকিরের মজলিস। কিন্তু আমরা পরম বিস্ময়ের সাথে দেখতে পাই শবে বরাতে আমাদের আকাশ মুহুর্মুহু আতশবাজিতে কেঁপে ওঠে।

যারা বছরের হাতে গোণা কয়েক দিনের জন্যে মসজিদে আসেন, তারা ভেবে নেন, জীবনের সব গোনাহ মাফির জন্যে আজ বিশেষ বিশেষ ধরনের ইবাদত করতে হবে । কেউ কেউ এ জন্যে দুপুর রাত পর্যন্ত মসজিদে কাটিয়ে সকালের গাঢ় ঘুমের চাপে ফজরের নামাজখানাও কাযা করে ফেলেন। তারপর আবার অপেক্ষায় থাকেন পরের বছর শবে বরাতের । শবে বরাতের মূল শিক্ষা ও আমল ভুলে যাওয়ায় আমাদের সমাজে অনেক ভ্রান্ত আমল ও আকিদার সৃষ্টি হয়েছে । যেমন-

এক. একশত রাকাত নামাজ পড়তেই হবে

কেউ কেউ এ রাতে একশত রাকাত পড়ে থাকেন। তারা এ নামাজকে বলেন, ‘সালাতুল আলফিয়া’। এই একশ’ রাকাত নামাজ পড়ার পদ্ধতিও বড় অদ্ভুত। এ নামাজে প্রতি দুই রাকাতের পরে সালাম ফেরাতে হয় । প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর দশ বার সুরা ইখলাস পাঠ করা হয়। তো একশ’ রাকাত নামাজে যেহেতু সুরা ইখলাস পাঠ হয় মোট এক হাজার বার, তাই এ নামাজকে ‘সালাতুল আলফিয়া’ বা হাজারি নামাজ বলা হয়। ইসলামে এ ধরনের নামাজ পড়ার কোনো নিয়ম গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে সমর্থিত নয় । রসুল স. ও তার সাহাবিগণ কখনো এ নামাজ পড়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। এ নামাজের ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, ইব্‌ন আবুল হামরা নামে ফিলিস্তিনের নাবলুস শহরের এক বাসিন্দা ৪৪৮ হিজরি বাইতুল মাকদিসে আসেন। তার কণ্ঠ সুন্দর ছিলো বিধায় মনোমুগ্ধকর তেলাওয়াতের মাধ্যেমে তিনি লোকজন জড়ো করে এ নামাজের প্রচলন ঘটান। (আল মাউযুয়াত খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১২৭)

দুই. একদিনে হবে না, তিন দিন রোজা রাখা

অনেকেই এ সময় তিন দিন রোজা রেখে থাকেন । তারা ভাবেন, শবে বরাতের রোজা মোট তিনটি । একটি ১৪ শাবান শবে বরাতের আগের দিন, ১৫ শাবান একটি এবং শবে বরাতের পরদিন অর্থাৎ ১৬ শাবান একটি- এভাবে মোট তিনটি। এই তিনটি রোজা রাখার বিষয়টিও বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং রাসুলের [সা.] সুন্নাত হলো, শাবান মাসের প্রথম থেকেই বেশি বেশি নফল রোজা রাখা । আয়েশা রা. বলেন, ‘রসুল স. শবানের শুরু থেকেই এত বেশি রোজা রাখতেন, মনে হতো যেনো আর তিনি রোজা ভাঙবেন না । কিন্তু শাবানের ১৫ তারিখের পর এমনভাবে রোজা রাখা ছেড়ে দিতেন, যেনো আর তিনি রোজা রাখবেন না ।’ বরং তিনি মধ্য শাবনের পরে রমজানের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন । (সহিহ ইবনে হিব্বান) সুতরাং বিশেষ করে তিনটি রোজা রাখা নিতান্তই অমূলক । তিন. শবে বরাতে ছবি ও মূর্তির খাবার তৈরি করা শবে বরাত উপলক্ষে দেখা যায়, বাজার নানা রঙের ছবি ও মূর্তি দিয়ে বানানো মিষ্টান্নতে সয়লাব হয়ে গেছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিক্রেতারা মাছের আকৃতিতে তৈরি রুটি, মযূরের মতো কাবাব ইত্যাদির পসরা সাজিয়ে থাকেন। অথচ ছবি ও মূর্তি তৈরি ইসলাম আদৌ সমর্থন করে না । হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি কোনো প্রাণীর প্রকৃতি তৈরি করবে, সে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে । (বুখারি ও মুসলিম) তাছাড়া এ কাজের মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া রিজিক নিয়ে নিদারুণ তামাশা করা হয়ে থাকে । যা অত্যন্ত নিন্দিত ও গর্হিত কাজ ।

চার. ধারাবাহিক কবর জেয়ারত

একদল মানুষ এ রাতে গোরস্থান বা মাজার জেয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে থাকেন। দেখা যায়, তারা এ রাতে ধারাবাহিকভাবে এলাকার সকল কবর জেয়ারত করতে থাকে। এ জন্যে তারা হাদিসের প্রমাণও উপস্থাপন করেন যে, শাবান মাসে রসুল স. জান্নাতুল বাকি কবরস্তানে জেয়ারতের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইবনে জাওযি রহ. তাদের এ বর্ণনাকে জাল আখ্যায়িত করেছেন। (আল মাউযুয়াত খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩০)

পাচ. আলোকসজ্জা ও আতশবাজি ব্যবস্থা করা

আমাদের সমাজে দেখা যায়, শবে বরাত উপলক্ষে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, মসজিদ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয় । এলাকার যুবকেরা মিলে আতশবাজি ও পটকা ফুটানোর হল্লা করে । এসব কাজের মাধ্যমে অজস্র টাকা অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয় না। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘অপচয়কারী শয়তানের ভাই ।’ (সুরা বানি ইসরাঈল) এছাড়া এইসব কর্মকাণ্ড অগ্নিপূজকদের সাথেও বেশ সাদৃশ্যপূর্ণ। যা ইসলামে পরিপূর্ণ নিষিদ্ধ।

ছয়. এই রাতে মৃত-আত্মার পুনর্গমনের বিশ্বাস

শবে বরাত উপলক্ষে অনেক অঞ্চলের নারীদের দেখা যায়, তারা ঘর-বাড়ি পরিচ্ছন্ন করে বেশ পরিপাটি করে রাখেন এবং চারিদিকে সুগন্ধি ছিটিয়ে দেন । বিশেষ করে বিধবা নারীদের এমনটি করতে দেখা যায় বেশি । অনেকে আবার কাপড়ের পুটলিতে কিছু খাবার ঝুলিয়ে রাখেন । কারণ, তাদের বিশ্বাস, মৃত স্বামী-স্বজনদের আত্মা এ রাতে নিজ নিজ পরিবারের সাথে দেখা করতে আসে । এই বিশ্বাস অত্যন্ত মূর্খতাপ্রসূত বিশ্বাস বৈ নয় । মানুষ মারা গেলে তাদের আত্মা বছরের কোনো একটি সময় আবার দুনিয়াতে ফিরে আসবে- এ বিশ্বাস ইসলাম সমর্থন করে না । বরং এটা তা হিন্দুদের পুনর্জন্মের বিশ্বাসের সাথে বেশ মিলে যায় । কেউ এমন বিশ্বাস পোষণ করলে তার ঈমানের ব্যাপারে সংশয় এসে যাবে। (আত্‌তাহযীর মিনাল বিদা) আল্লাহ আমাদের সবাইকে এসকল বিশ্বাস ও আমল থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ