লুৎফুর রহমান তোফায়েল
কে ঐ শোনালো মোরে আযানের ধ্বনি,
মর্মে মর্মে সেই সুর,
বাজিলো কি সুমধুৃর,
আকুল হইলো প্রাণ, নাচিলো ধ্বমনি।
কি-মধুর আযানের ধ্বনি।
ছোটবেলায় পড়া মহাকবি কায়কোবাদের অমর এই কবিতাটি আজ খুব মনে পড়ছে, কানে বাজছে। মর্মে মর্মে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সেই সুমধুর সুর।
পৃথীবিতে দিন-রাতের ২৪ ঘণ্টায় এমন কোনো একটি মুহূর্ত নেই যে আযানের সুর ছাড়া। অর্থাৎ আহ্নিক গতির প্রভাবে যে দিন-রাত হয় এবং গোলাকার পৃথিবী আর সূর্য যখন নিজ নিজ কক্ষপথ অতিক্রম করে তখন পৃথিবীর এক প্রান্তে দিন হলে অপর প্রান্তে রাত। এমনি করে ঘুরতে থাকে সারাক্ষণ। এদিকে সূর্যের উদয়-অস্তের সাথে নামাজের সময় নির্ধারিত। এভাবে সূর্যের পরিভ্রমণের সাথে সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় আবর্তিত হয় পৃথিবীতে। সে হিসেবে দেখা যায় দিনের ২৪ ঘণ্টাই অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষণই পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে কোনো না কোনো ওয়াক্তের নামাজের আযান হচ্ছে। এছাড়া মুসলিমদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী নবজাততের জন্মের পরই তার কানে আযান দিতে হয়।
এবার একটু পরিসংখ্যানের দিকে নজর দেই- প্রতি মিনিটে পৃথিবীতে ২৫০ শিশু জন্মগ্রহণ করে। ২০১৫ সালের ৭ জুলাই প্রকাশিত জাতিসংঘের বিশ্ব জনসংখ্যা সমীক্ষা-২০১৫-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৩০ কোটি। বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেশি। আর উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের এক ভাগ মুসলমান। এখন ৭৩০ কোটি জনসংখ্যা ধরে যদি হিসাব করি তবুও বর্তমান বিশ্বে ১৮২.৫ কোটি মুসলমান (এরই মধ্যে জনসংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে)। সুতরাং সহজেই বুঝা যাচ্ছে, প্রতি মিনিটে জন্ম নেওয়া ২৫০ শিশুর চার ভাগের একভাগ অর্থাৎ ৬২.৫ জনের কানে আযান দেওয়া হচ্ছে প্রতি মিনিটে। সেটা দিন-রাতের যেকেনো সময়।
উপরের দুই পরিসংখ্যান থেকে পরিষ্কার হলো, এই আযানের ধ্বনি পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রতিটি মুহূর্ত ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
গত ১৭ এপ্রিল সোমবার ভারতের বিতর্কিত গায়ক সনু নিগম টুইটারে লেখেন, ‘সৃষ্টিকর্তা সবার ভালো করুন। আমি মুসলিম না, তা-ও আমাকে আজান শুনে ঘুম থেকে উঠতে হয়। ভারতে কবে এই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ধর্মভার শেষ হবে।’
আরেকটি পোস্টে সনু লেখেন, ‘মুহাম্মদ সা. যখন ইসলাম তৈরি করেছিলেন, তখন তো বিদ্যুৎ ছিল না। তাহলে এডিসনের পর থেকে কেন আমাদের এই কর্কশ শব্দ সহ্য করতে হবে?’
এরপর থেকে ভারত ও বাংলাদেশে শুরু হয় ব্যাপক প্রতিবাদ। প্রতিবাদে শামিল হন ভারত ও বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্পীরাও। মুসলিমদের পাশাপাশি বাংলাদেশসহ ভারতীয় বেশ ক’জন হিন্দু অভিনেতা-অভিনেত্রী-শিল্পীও আযানের প্রতি ভালোবাসা-শ্রদ্ধার কথা জানালেন। এটা অবশ্য প্রশংসার বিষয়। অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেও বেশ বড়ো মনের প্রয়োজন। তারা সে মনের পরিচয় দিয়েছেন। তবে যা-ই হোক, যে যা-ই বলুক, আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিকে দিকে প্রতিধ্বনিত হবে কেয়ামত পর্যন্ত। এটাই চিরন্তন।
সনু নামের অর্বাচিনরা আযানকে কাটাক্ষ করলেও, আযান তাদের ভালো না লাগলেও আযানের ঐ সুমধুর সুর পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে ধ্বনিত হবেই সারাক্ষণ। সেটা মহান আল্লাহর কুদরতেই হচ্ছে-হবে। সনু নিগমরা থাকবে না। থাকার কথা নেই, সুযোগও নেই। লাঞ্চনার মাধ্যমেই তাদের মৃত্যু হবে।
আরেকটা মজার ব্যাপার হলো- বিবিসির খবরে জানা যায়, মসজিদের মাইকে আজানের শব্দে ঘুম ভাঙার আপত্তি তোলা সনু নিগমের বাড়ি থেকে ৬০০ মিটার ভেতরে মসজিদে আজান দেয়ার জন্য কোনো মাইকই নেই! ফজরের আজানের শব্দ শোনা যায় কীনা তা পরখ করার জন্য সাংবাদিকরা গত বুধবার (১৯ এপ্রিল) খুব ভোরে ওই গায়কের বাড়ির সামনে উপস্থিত হলে বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঐদিন বিবিসির সাংবাদিক ভোর ৫টা নাগাদ সনুর বাড়ির সামনে উপস্থিত হন। তার আগেই সেখানে অন্য সাংবাদিকরা অপেক্ষায় ছিলেন। ওই সময় সেখানে অন্ধকার ছিল। সাধারণভাবে ব্যস্ত থাকা মুম্বাইয়ের সড়ক সেসময় শুনশান হয়ে ছিল। কয়েকজন সাংবাদিক ফজরের আজানের সময় তার বাড়ির আশেপাশে অবস্থান নিয়ে জানতে পারেন সেখান থেকে কখনই আজান শোনা যায় না। ৬০০ মিটার দূরে যে মসজিদ রয়েছে সেখানে মাইকই নেই।
স্থানীয়রাও জানিয়েছেন, তারা ওই এলাকা থেকে আজানের ধ্বনি শুনতে পান না। সনু নিগম ডাহা মিথ্যা কথা বলেছেন বলে এলাকাবাসীরা জানান। বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকজন শিল্পী বলছেন, বলিউডের গানে রাহাত ফতেহ আলী খানদের মতো শিল্পীদের দাপটে সনু নিগমের নাম মুছে যাওয়ার পথে। তিনি অপকৌশলের মাধ্যমে আবারও নিজের নামটি সামনে আনতে চেয়েছেন। তাই আযানের মতো একটা বিষয় নিয়ে সমালোচনা করেছেন।
আজানের শব্দে কেন এই জ্বলুনি: শরীফ মুহাম্মদ
আরআর