শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা

বন্ধ করে দেয়া হলো ভেনিস জামে মসজিদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

venis-mosqueপলাশ রহমান,ইতালি খেকে: অবশেষে বন্ধ করে দেয়া হলো ভেনিস জামে মসজিদ। স্থানীয় প্রশাসন গত শুক্রবার এক নোটিশের মাধ্যমে মসজিদটি বন্ধ করে দেয়।

জানা যায় মসজিদের উপরের কয়েকটি ফ্লাটের বাসিন্দারা দীর্ঘ দিন মসজিদটির বিরোধীতা করছিল। তারা মসজিদের কারনে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিল এমন অভিযোগে তারা একাধিকবার প্রশাসনের কাছে নালিশ করে। পত্রপত্রিকায় বিবৃতি দেয়। সর্বশেষ তারা তাদের জানালায় নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে ফেসটুন লটকে দেয়।

এ নিয়ে গত কয়েক দিন স্থানীয় পত্রপত্রিকায় বেশ লেখালেখি হয়। নগরপিতাসহ প্রশাসনের উদ্ধতন কর্মকর্তারা বেশ কয়েক দফায় বৈঠক করে এবং এক নটিশের মাধ্যমে মসজিদ কমিটিকে জানিয়ে দেয় রোববারের পরে সেখানে আর নামাজ আদায় করা যাবে না।প্রশাসনের দাবী মতে মসজিদ বা ইসলামি কালচারাল সেন্টারটিতে ধারণ ক্ষমতার বেশি মানুষ প্রবেশ করে। অনেক মানুষ এক সাথে কথা বলে। এতে প্রতিবেশিদের অসুবিধা হয়। তারা ভয় পায়। বার বার সতর্ক করার পরেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার কারনে তারা আপাতত ওটা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
উল্লেখ্য, গেল বছর প্রায় অভিন্ন অভিযোগে রোমের অন্তত ৪টি নামাজের স্থান এবং ভেনিসের বিয়েন্নালে নির্মিত একটি অস্থায়ী মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়। ভেনিসের মেসত্রেস্থ মসজিদ বা নামাজের স্থানটি যে বন্ধ করে দেয়া হতে পারে তা গত ক'দিন থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। স্থানীয় পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হয় এবং অবশেষে সকলের আশঙ্কা সত্যি হয়। পরিস্থিতির মোকাবিলায় মসজিদ কমিটি এবং কম্যুনিটির নেতৃবৃন্দ পরবর্তি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় বসেন। আইনি লড়াই এবং আন্দোলন কর্মসূচির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এদিকে স্থানীয় বিভিন্ন সামাকিজ সংগঠন, ধর্মীয় সংগঠন এবং বাম ধারার রাজনীতিকরা মসজিদ কমিটির সাথে আলোচনা করেছে। তারা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক এবং ইতালিয় সংবিধান বিরোধী বলে উল্লেখ করেছে।
প্রতিবাদের অংশ হিসাবে খোলা জায়গায় নামাজ আদায়ের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। মসজিদের মুসল্লিরা বলেছেন, প্রয়োজনে তারা শহরের প্রাণকেন্দ্র পিয়াচ্ছা ফেরেত্তোর খোলা চত্ত্বরে নামাজ আদায় করবেন। ইতালির সবচেয়ে বড় জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ফিনকানতিয়েরির সামনে, পৌরসভার (কমুনে) সামনে এবং পিয়াচ্ছা সান মারকোর সান বাজিলিকার সামনে নামাজ আদায় করে প্রতিবাদ জানাবে।
উল্লেখ্য, ভেনিসে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি মুসলমান বসবাস করেন এবং ফিনকানতিয়েরিতে কয়েক হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী চাকরী করেন। কয়েকটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিকানাও রয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের।
একজন ইতালিয় নারী পরামর্শ দিয়ে বলেন, তোমাদের প্রার্থনার জায়গা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, এর প্রতিবাদে তোমরা শহরের সব ক'টি গির্জার সামনের চত্ত্বরে চাদর পেতে নামাজ আদায় করতে পারো এবং পোপ ফ্রানসেসকোর কাছে ধর্মীয় অধিকারের কথা উল্লেখ করে চিঠি লিখতে পারো। মসজিদের ইমাম বলেন, একদম ভিত্তিহীন অভিযোগে মসজিদ বন্ধের নোটিশ দেয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। মুসল্লিরা অত্যান্ত সুশৃংক্ষল ভাবে নামাজ আদায় করেন এবং খুব সতর্ক থাকেন যেনো অন্য কারো অসুবিধা না হয়। এর পরেও এই নোটিশ অত্যান্ত দুঃখ জনক।
শনিবার মাগরিবের ওয়াক্তে মসজিদে গিয়ে দেখা যায় প্রায় শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করছেন এবং সকলের মন খারাপ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন।
বাম ধারার রাজনীতিকরা পরামর্শ দিয়েছেন, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষনা করা উচিৎ। মুসল্লিরা বলেছেন, প্রয়োজনে তারা একদিনের কর্মবিরতি পালন করতেও প্রস্তুত আছেন। এছাড়াও সমাবেশ, মিছিল, সংবাদ সম্মেলন, মেয়রের কাছে স্মারক লিপি পেশসহ যে কোনো কর্মসূচিতে তারা এগিয়ে আসবেন বলে জানান। তারা মসজিদ কমিটি এবং কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান বিষয়টি নিয়ে গড়িমষি না করার জন্য। তারা বলেন, যারা ভীতি তাদের নেতৃত্বে না থাকাই উত্তম।
সাংবিধানিক ভাবে ইতালিতে বসবাসকারী সকল মানুষের ধর্ম পালন এবং প্রচারের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর পরেও কেনো ঠুনকো অভিযোগে মুসলমানদের নামাজে স্থান বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে অনেক ইতালিয় নাগরিককেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, প্রায় ৮ বছর আগে মসজিদটি প্রায় দুই লক্ষাধিক ইউরো দিয়ে ক্রয় করেছিলেন ভেনিসে বসবাসকারী মুসল্লিরা। সেখানে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ হয়। জুমার দিনে অন্তত ৩টি জামায়াত করতে হয়। শিশু কিশোরদের ধর্ম শিক্ষা দেয়া হয়। রোজার দিনে ইফতারের আয়োজন করা হয়। গতবছরের শেষের দিকে মসজিদের একজন ইমাম অপসরণকে কেন্দ্র করে মসজিদ কমিটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় এবং এ বিষয়ে বেশ জটিলতা হতে দেখা যায়। সে সময় অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মসজিদটির ভবিষ্যৎ নিয়ে।

এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ