মুহাম্মদ ইনআমুল হাসান
কাতার থেকে
ইহুদি-খৃস্টানদের জয় জয়কার চারিদিকে। উন্নত বিশ্বের সময় আবর্তিত হচ্ছে তাদের অঙ্গুলি হেলনে। তারা দিনকে রাত আর রাতকে দিন বলে প্রচার চালাচ্ছে মিডিয়া সন্ত্রাসের মাধ্যমে। বিশেষ করে ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে তারা ব্যয় করেছে তাদের সর্বশক্তি।
মুসলমানদের বিদেশ ভ্রমণে তারা বাগড়া দিচ্ছে নিরাপত্তার অযুহাতে। মুসলমানদের জন্য পৃথিবীর মানচিত্র সংকুচিত করার পায়তারা করছে সন্ত্রাসবাদের অন্যায় ও ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে।
ইসলামের বিরুদ্ধবাদীদের এহেন অপকর্ম ও অপকৌশল নতুন কিছু নয়; বরং তাদের পূর্বসূরিদের থেকে পাওয়া ‘উত্তরাধিকার’ মাত্র।
এত কিছুর পরও ইসলাম টিকে আছে, থাকবে কেয়ামত অবধি। ইসলামের জন্য অগণন মানুষ তাদের দাওয়াতি কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাবে দেশ-দেশান্তরে, পুরো পৃথিবীর পটে পটে।
বরাবরের মত গত চব্বিশে মার্চ থেকে এবারও কাতারে আয়োজিত হয়েছে তাবলীগি ইজতেমা। লাগাতার ছয়দিন চলবে এর দাওয়াতি ও আমলি কার্যক্রম।
এতে কাতারের স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি বাংলাদেশ-পাকিস্তান-ইন্ডিয়াসহ প্রায় দশ-বারোটি দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। আনুমানিক ত্রিশ-চল্লিশ হাজার মানুষের এক নুরানি জমায়েত হয়েছে কাতারের রুক্ষভূমিতে।
উপমহাদেশের মুরব্বিগণের তত্ত্বাবধানে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলেছে আমলি হালকা, আম বয়ান, তালীম ও কোরআন শরীফের সহি উচ্চারণের প্রশিক্ষণ।
কাতারের এবারের ইজতেমায় চার সদস্যের একটি দল কাকরাইলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এতে রয়েছেন ওয়াসিফুল ইসলাম, মাওলানা ফারুক, মাওলানা জাকির ও ইঞ্জিনিয়ার আনিস।
মাওলানা জামশেদের জিম্মাদারিতে সাত সদস্যের একটা দল দিল্লীর নিজামুদ্দিনের প্রতিনিধিত্ব করছেন। পাকিস্তান থেকেও এসছেন চার সদস্যের সংক্ষিপ্ত একটি প্রতিনিধি দল।
বাংলাদেশের মত কাতারেও নির্দিষ্ট দিন বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন এলাকার সাথীদের অংশগ্রহণের জন্য, যেন সবাই পুরোপুরি ফায়দা অর্জন করতে পারেন।
আলেম-উলামা ও ইমামদের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে খাস বয়ানের ব্যবস্থা। যে মোবারক সময়টার জন্য সকল ইমাম উৎসুক হয়ে থাকেন এবং বে-হদ ইন্তেজার করেন।
তেমনিভাবে আরব-অনারবের জন্যও আছে স্বতন্ত্র ব্যবস্থাপনা। সকলেই আপন ভাষা ও পদ্ধতিতে শিখছেন দ্বীনের জরুরি মাসআলা ও রীতিনীতি।
কাতারে বাংলাদেশের মত চব্বিশঘন্টা ইজতেমা ময়দানে অবস্থানের সুযোগ নেই, কেননা এখানকার সবাই কর্মব্যস্ত। তাই দিনের অধিকাংশ সময় স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রবাসীরা তাদের কর্মস্থলেই কাটান। (অবশ্য একটি জামাত চব্বিশ ঘন্টাই ময়দানে অবস্থান করছেন।) নির্দিষ্ট সময় ডিউটি করেন, আয়-রোজগার করেন, লেনদেন করেন এবং সন্ধে হলেই সবাই চলে আসেন ইজতেমা ময়দানে- এ যেন সেই সাহাবা যুগের প্রতিচ্ছবি! সারাদিন আপন আপন কাজে আত্মনিয়োগ করে রাতের বেলায় দরবারে নবুওয়াতে!
তাবলীগের এই সর্বব্যাপী দাওয়াতি কাজ চলতে থাকুক এশিয়া থেকে আফ্রিকা, আমেরিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া। পথহারা হতভাগা ইনসান খুঁজে পাক সঠিক পথের দিশা, পৃথিবীর মানচিত্র খুঁজে পাক আল্লাহ ওয়ালাগণের পুরোনো সেই নিশানা।
আরআর