শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই’ শরীরে রক্ত বাড়াতে যেভাবে পালং শাক খাবেন ‘প্রকৃতপক্ষে ভুল হলে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ’

ইসলাম ও শরীয়া সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে ইসলামী ব্যাংকারদের: নুরুল ইসলাম খলিফা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

nurul_khalifaনুরুল ইসলাম খলিফা ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ সাকোকাঠীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম কাসেম খলিফা এবং মাতা রোকেয়া খাতুন এর জৌষ্ঠ সন্তান তিনি। তিনি ১৯৮০ সালে অগ্রণী ব্যাংকে প্রবশনারী অফিসার হিসেবে যোগদান করে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরে তিনি দেশ সেরা ব্যাংকে দীর্ঘদিন কর্মরত থেকে বর্তমানে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপ্যাল পদে দায়িত্বরত আছেন। ইসলামী ব্যাংকিং এর নানা বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলেছেন আমানুল্লাহ নোমান

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশের বর্তমান ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে কিছু বলুন।
নুরুল ইসলাম খলিফা: সিকি শতকের কিছু বেশি আগে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা আজ বাংলাদেশের একটি ক্রম বিকাশমান ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক ধারা হিসেবে স্বীকৃত।শতাব্দী প্রাচীন প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে প্রতিযোগিতায় ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করে চলেছে।বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং ব্যবসার প্রায় ২৫ শতাংশ পরিচালিত হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। দেশে ০৮ টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক ০১ হাজারের বেশি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। প্রায় ২০ হাজারের মত জনশক্তি এই ব্যাংক ব্যবস্থার সাথে জড়িত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে ইসলামী ব্যাংকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করছে। দেশের ব্যবসা-বানিজ্য, কৃষি-শিল্প, আমদানী-রপ্তানী ইত্যাদি সকল খাতেই ইসলামী ব্যাংকগুলোর অবদান উল্লেখযোগ্য। আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে রপ্তানী আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরী পোষাক শিল্প এবং এর ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প হিসেবে টেক্সটাইল, স্পিনিং ইত্যাদি শিল্পের পথিকৃত দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশলিমিটেড। এ ছাড়া বৈদেশিক রেমিট্যান্স এর প্রায় ৩০ শতাংশ আইবিবিএল একাই আহরণ করছে।অনুরূপভাবে ক্ষুদ্র - মাঝারি বিনিয়োগেও ইসলামী ব্যাংকগুলো যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। এক কথায় উন্নত গ্রাহক সেবা, বহুমুখী ব্যাংকিং প্রোডাক্ট এর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং দেশের গণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে।

আওয়ার ইসলাম: বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকিং এর বর্তমান প্রেক্ষাপট কেমন?
নুরুল ইসলাম খলিফা: সারা বিশ্বেই ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা একটি মজবুত ভিত্তি রচনা করে এগিয়ে যাচ্ছে। মুসলিম প্রধান দেশগুলোর বাইরেও ইসলামী ব্যাংকিং এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় ৫০ টি দেশে ৩ শ’রও বেশি ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্রসহ পশ্চিমা বিশ্বে যে মারাত্মক মন্দা বা অর্থনৈতিক ধ্বস নেমে এসেছিল, যেখানে শতাব্দী প্রাচীন বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা প্রদান করতে হয়েছিল, সেখানে ২৫ / ৩০ বছরের ইসলামী ব্যাংকগুলো যেভাবে কোনরূপ রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা ছাড়াই টিকে থাকার যোগ্যতা প্রদর্শন করেছে তা তাবৎ বিশ্বের সুধী, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। এ ছাড়া সুদ নির্ভর অর্থ ব্যবস্থায় আয় ও সম্পদ বন্টনের যে বৈষম্য আজকের পৃথিবী দেখছে এবং যেভাবে সম্পদ গুটিকয়েক মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে, তাতে একটি ভাল বিকল্পের আশায় পৃথিবী তাকিয়ে আছে। ইসলামী অর্থব্যবস্থাই এই বিকল্প হতে পারে। এক কথায় ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা তার অন্তর্নিহিত শক্তি ও যোগ্যতার বলে বিশ্বব্যপী স্বীকৃতি অর্জন করছে। আমরা আশা করছি প্রচলিত ব্যবস্থার তুলনায় উন্নততর ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

আওয়ার ইসলাম: ইসলামী ব্যাংকিং এর প্রসারে অন্তরায়গুলো কি কি?
নুরুল ইসলাম খলিফা:  ভাল বলেছেন।একটি নতুন কিন্তু উদীয়মান ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রসারে কিছু অন্তরায় আছে। যেমন - ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য দক্ষ জনশক্তির অভাব। ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা পরিচালনার আইনী কাঠামোর অভাব রয়েছে আমাদের দেশে। বিদ্যমান জনশক্তির মানোন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের অপ্রতুলতা রয়েছে। এ ছাড়া ইসলামিক মানি মার্কেট, ইসলামী আর্থিক ইনস্ট্রুমেন্ট এর অভাব উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়াশুনার কোন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। গ্রাহকদের মাঝে শরীয়া ব্যাংকিং সংক্রান্ত স্বচ্ছ ধারণার অভাবও একটি অন্তরায় বলা যায়।

আওয়ার ইসলাম: ইসলামী ব্যাংকিং এর প্রসারে কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ?
নুরুল ইসলাম খলিফা: প্রথমেই দক্ষ জনশক্তির যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তুলতে হবে। সাথে সাথে ইসলামী ব্যাংকগুলো ঐক্যবদ্ধ ভাবে একটি অ্যাপেক্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে তাদের জনশক্তিকে বিশ্বমানে উন্নীত করার চেষ্টা করতে পারে।উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়ে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। ইসলামী মানি মার্কেট প্রতিষ্ঠা, ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় আইন পাশ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্বাবধানে একটি শক্তিশালী শরীয়াহ কাউন্সিল থাকা দরকার। এই কাউন্সিল প্রতিটি ব্যাংকের নিজস¦ শরীয়া বোর্ডগুলোর মধ্যে কোন বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ারসম্পন্ন হবে। বিনিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে শরীয়াহ অনুমোদিত সবগুলো পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে চালু করতে হবে। সর্বোপরি গ্রাহক সচেতনতা সৃষ্টি একটি বড় কাজ - যা ব্যাংকগুলোকে করতে হবে। অন্যথায় ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা এর কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না। কেননা ইসলামী পদ্ধতিতে গ্রাহকগণ ব্যাংকের অংশীদারও বটে।

আওয়ার ইসলাম: একজন ইসলামী ব্যাংকারের কি কি গুণাবলী থাকা দরকার?
নুরুল ইসলাম খলিফা: একজন ব্যাংকারের মৌলিক যে গুণাবলী দরকার তা একজন ইসলামী ব্যাংকারেরও দরকার। যেমন - সততা, নিষ্ঠা, আমানতদারী, ব্যাংকিং আইন-কানুন সম্পর্কিত জ্ঞান ইত্যাদি।এর অতিরিক্ত একজন ইসলামী ব্যাংকারের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান দরকার। সুদ বা রিবা সম্পর্কেও তাকে পরিষ্কার ধারণা ও জ্ঞান অর্জন করতে হয়। ইসলামী শরীয়াহ সম্পর্কেও তার পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। বিশেষ করে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে শরীয়াহর নীতিমালা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। আমরা সাধারণতঃ ইসলামী ব্যাংকারদেরব্যাংকার প্লাস বলি।

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু বলুন।
নুরুল ইসলাম খলিফা ঃবাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং এর ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জল বলে আমি মনে করি। এ দেশের মানুষ ইসলামের বিধি-বিধান মানার ব্যাপারে খুবই সতর্ক। সুদ পরিহার করে আর্থিক লেনদেন করার বিষয়ে এ দেশের মানুষ বহু বছর থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান। সুদ বা রিবা হারাম এ কথা তারা বহুবার শুনেছে কিন্তু বিকল্প কোন ব্যবস্থা পায়নি। তাই যখনই ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে তখনই মানুষ তা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে। এখন ইসলামী ব্যাংক গুলোর দায়িত্ব হচ্ছে গ্রাহকদের সাথে নিয়ে এ ব্যবস্থা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার পরিচালনাগত দক্ষতা অর্জন করা, ভুল-ভ্রান্তিগুলোর অপনোদন করা এবং শরীয়াহ পরিপালন নিশ্চিত করা। তা হলে আগামীতে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাই হবে বাংলাদেশে ব্যাংকিং এর মূল ধারা।

আওয়ার ইসলাম: আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট সম্পর্কে কিছু বলুন।
নুরুল ইসলাম খলিফা: নিজস্ব জনশক্তির মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই এই ব্যাংকের নীতি-নির্ধারকগণ এ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমার জানামতে, এটি ইসলামী ব্যাংক সমূহের প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকের নীতি-নির্ধারকগণ এবং উর্দ্ধতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের চমৎকার সহযোগিতা ও নির্দেশনার আলোকে প্রতিষ্ঠানটি তার লক্ষ্য অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সারা বছরই এখানে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চলে। কিছু সীমাবদ্ধতা সত্বেও এটি এখন আমাদের জনশক্তির কাছে একটি আগ্রহ ও আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ