২০০৪ সালের সুনামি দেখেছে তামিলনাড়ু। সেই ভয়ঙ্কর সুনামি কেড়ে নিয়েছিল বহু জীবন৷ সেসব দেখে শিউরে উঠেছিলেন ভারতের চেন্নাইয়ের বাসিন্দা শেখর৷ সে সময়কার দুঃখের দিনে তার কাছে এসেছিল দুটি বুনো টিয়া৷ যেন মৃত্যুপুরীতে অরণ্যের সবুজ ঝিলিক৷ কোনওরকমে তাদের একটু খেতে দিয়েছিলেন তিনি৷ তখন চারিদিকে ধংস ও মৃত্যুর ছবি৷ তারই মাঝে সেই জোড়া টিয়া বাসা বেঁধেছিল শেখরের কাছে৷ সেখান থেকে শুরু হল অন্যরকম এক গল্প।
এরপর ১০ বছর পার হয়েছে৷ সুনামির ভয়ঙ্কর মুহূর্ত ভুলতে বসেছেন সবাই৷ আর চেন্নাইয়ের ক্যামেরা মেকানিক শেখরকে ঘিরে নিয়েছে সবুজ টিয়ার দল৷ তাদের এখনও খেতে দেন শেখর৷ রোজ অন্তত ৪ হাজার টিয়া তার কাছে খেতে আসে৷ এখন ‘বার্ডমান’ হিসেবে পরিচিত হয়েছেন ৬২ বছরের শেখর৷
চেন্নাইয়ের রোয়াপেট্টা এলাকায় থাকেন শেখর৷ দিনের নির্দিষ্ট সময়ে তার বাড়ির চারিদিকে ভিড় করে হাজারে হাজারে টিয়াপাখি৷ বাড়ির কার্নিশে, ছাদে, বিদ্যুতের তার ও খুঁটিতে শুধুই টিয়া আর টিয়া৷ শেখর জানালেন, সুনামির পর দুটো আশ্রয়হীন টিয়াপাখি এসে হাজির হয়েছিল৷ তাদের কিছুটা ভাত খাইয়েছিলাম৷ পরে সেই দুটো টিয়া আরও কিছু টিয়াকে টেনে এনেছিল৷ সেই থেকে শুরু৷ রোজই টিয়া আসতে শুরু করে৷ এখন এখানে তাদেরই রাজত্ব৷
পঁচিশ বছর আগে চেন্নাইতে এসেছিলেন ক্যামেরা মেকানিক শেখর৷ চড়ুই, কাক আর কাঠবিড়ালিদের খাওয়ানোর শখ ছিল৷ এখন টিয়াদের খাওয়ানোতেই মগ্ন শেখর৷ বাড়ির ছাদে বিশেষ আয়োজন করেছেন তিনি৷ সেখানেই ভাত দেওয়া হয়৷ তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে টিয়ার দল৷
প্রতিদিন ভোর চারটের সময় উঠে পড়েন শেখর৷ প্রচুর পরিমাণ ভাত রান্না করেন৷ সেই ভাত ছাদে রাখা কাঠের পাটাতনে ছড়িয়ে দেন৷ এজন্য রোজগারের প্রায় ৪০ শতাংশ খরচ হয়ে যায়৷ তাতে কোনও কষ্ট নেই প্রবীণ শেখরের৷ তিনিই টিয়া রাজ্যের মধ্যমণি৷
ভয়ঙ্কর মুহূর্ত পার করে ক্রমে স্বাভাবিক হয়েছে চেন্নাইবাসীর জনজীবন৷ কিন্তু এখন চেন্নাইবাসী রোজই দেখেন বুনো টিয়াদের সুনামি৷ আকাশে সবুজ ঢেউ তুলে তারা রোজ ভোরে দখল নেয় মহানগরের নির্দিষ্ট মহল্লা৷
এআর