শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা

শীতের রাজা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাহদি হাসান সজিব

patho_shisuবড্ডো শীত শীতে লাগছে আজ। কুয়াশায় নজরে ভাসছে না আশপাশ। দূর্বাঘাসে শিশির ঝরছে বৃষ্টির মতো। ঝিরঝিরে বাতাস তো বইছেই। অনিচ্ছাসত্ত্বেও হাঁটতে বেরোলেন মাহমুদ সাহেব। নইলে যে ডায়বেটিকসটা বেড়ে যায় তার৷

শহরের বড় ব্যবসায়ীদের একজন তিনি। এলাকায় বেশ নামডাক তার। চলতে চলতে এলেন দু'পথের বাঁকে৷ অচেনা পথে মোড় নিলেন খানিকটা৷ ভাবলেন এতো হেঁটেছি, এ পথে তো বাড়ানো হয়নি কখনও কদম। আজ এদিকটায়ই একটু এগোই৷

কিছুটা পথ হেঁটেই আরম্ভ হলো বস্তি৷ চোখে পড়লো খুপড়ির মতো ছোট্ট ছোট্ট ঘরবাড়ি। অদূরে একটি আলোর মতোন কিছু একটা জ্বলছে। কুয়াশায় নজরে আসছে না স্পষ্টভাবে৷ এগোলেন আরও অনেকটা৷ হু, তাইতো। ছোট্ট একটা ছেলে হাত-পা ছড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছে। বয়সটা বড়জোর সাত হবে। ফুলহাতার ছেঁড়াফাটা গেঞ্জি শরীরে। বেশ মায়া হলো মাহমুদ সাহেবের। এগিয়ে এলেন ছেলেটার কাছে।

বাবু, নাম কি তোমার?

ছোডন।

ছোটন?

জী! বাহ্, ভারী সুন্দর নাম তো! শীত লাগে বুঝি খুব?

শীতের দিনে কি মাইনষের গরম লাগে!?

তোমার আব্বু কী করেন?

নাই৷ আমি কোনোদিন দেহি নাই তারে৷ মাইনষের ধারে শুনছি খালি যে, একটা বিয়া কইরগা আমার মা'রে খ্যাদাই দিছে৷

তোমার আম্মু কোথায় এখন৷

আছে, এইহানেই৷ অসুখ অইছে। ঘুমাইতেছে ঐ কুইড়া ঘরে।

তোমাদের দিন চলে কীভাবে?

আমি প্লাস্টিক টোহাইয়া চাইল কিনগা আনি আর মা'র জন্য ওষুধ৷ খাওন-দাওনডাও সাইরগা যায় এতে।

ততোক্ষণে চারপাশে আরও কয়েকজনকে আগুন পোহাতে দেখা গেলো। দরদে বুকটা চিনচিন করে ওঠলো মাহমুদ সাহেবের। কতো প্রকার না মানুষ রয়েছে এই পৃথিবীতে! কেউ থাকে অট্টালিকায়, কেউ বা শান্তি খোঁজে গাছতলায়। আরও ক'জনের হালত শুনবেন বলে ভাবলেন। কিন্তু হিম্মতটা হলো না অার৷ শুনেই বা লাভ কি! দুঃখ বাড়বে বৈ কমবে না তো।

অগত্যা বাসার পথটাই বেছে নিলেন তিনি।

পেছন থেকে ছোটনের গেঁয়ো স্বরটি ভেসে এলো হঠাৎ৷

‘আঙ্কেল! আমারে একখান কম্বল দেবেন? রাইতে ঘুমাইতে পারি না শীতে৷'

পেছন ফিরে তাকালেন৷ ওর চোখে চোখ রাখতেই লা-জবাব হয়ে রইলেন৷ ভারী হয়ে ওঠলো তার কণ্ঠস্বর৷ কোনো কথা বেরোলো না আর তার মুখ ফুটে।

পর দিন পড়ন্তবেলা। খেলাধুলোয় মত্ত বাচ্চারা আর বুড়োরা গল্পে। একটা পিকআপ থামলো বস্তির সামনে। ভেতর-আসন থেকে বেরোলেন মাহমুদ সাহেব। গাড়িভর্তি নানান সাইজের গরম কাপড়। সাড়া পড়লো বস্তিতে। জমা হলো সবাই। বিতরণ করলেন একেক করে। ছোটনকে দিলেন একটু আলাদাভাবেই। আহ, উল্লাসে সে কী হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি ছোটনের! কী আনন্দ আজ ওর খুশির আকাশ-বাতাসে! যেনো বনে গেছে সময়ের শীতরাজা। জয় করে ফেলেছে শীতের রাজ্য৷

দৃশ্যটি নজর কাড়লো মাহমুদ সাহেবের। মনটা ভরে ওঠলো তার৷ খুশিতে চোখদুটো জলে সিক্ত হতে লাগলো ধীরে ধীরে৷

এমজে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ