ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ: অপ্রত্যাশিতভাবেই চলে গেলেন ইসলামি সঙ্গীত জগতের অন্যতম পথিকৃৎ জুনায়েদ জামশেদ। ইসলামী সঙ্গীত শোনেন অথচ তার গান শুনেননি এমনটা পাওয়া মুশকিল। তিনি যে মায়া নিয়ে গান গেয়েছেন হৃদয় ছুঁয়েছে সবার। আজ আকস্মিক বিমান দুর্ঘটনায় তার ইন্তেকাল শোক ছুঁয়ে গেছে পুরো বিশ্বে। শোকাহত হয়েছে সঙ্গীত অঙ্গন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় তিন শিল্পীর কণ্ঠে তারই সুরই শোনা গেল।
মুহিব খান, জাগ্রত কবি ও সঙ্গীত শিল্পী
জুনায়েদ জামশেদ, তিনি যতটা না পাকিস্তানের ছিলেন তার চেয়ে বেশি ছিলেন বাংলাদেশের। তিনি পাকিস্তানি হয়েও বাংলাদেশের মানুষের মনকে জয় করে নিয়েছিলেন। আমারা তাকে কখনো বিদেমি বা পাকিস্তানি বলে ভাবতে পারতাম না।
এই ক্ষতি কখনো পূরণ হওয়ার নয়। আসলে কোন শূন্যতাই কখনো পূরণ হয় না। তার যত দ্বীনি কাজ আছে, ভালো কাজ আছে তার বিনিময়ে আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমরা তার জন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করছি।
আবুল কালাম আজাদ, পরিচালক, জিন্নুরাইন শিল্পীগোষ্ঠী
পাকিস্থানের জনপ্রিয় ইসলামি সঙ্গীত শিল্পী ও দাঈ জুনায়েদ জামশেদ বিমান দুর্ঘটনায় শহিদ হয়েছেন। বাংলাদেশের ইসলামী সংঙ্গীত শিল্পী ও ইসলামী সংস্কৃতি জোটের পক্ষ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত এই দুর্ঘটনার জন্য শোক প্রকাশ করছি। এই দুর্ঘটনার মাধ্যমে বিশ্ব একজন সঙ্গীত শিপ্লী, উজ্জ্বল তারকা তথা একজন দাঈ হালো। তার এভাবে চলে যাওয়া ইসলামি বিশ্বের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতির কারণ।
আমরা মহান আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করছি। সাথে সাথে তার এই শূন্যস্থানের জন্য আল্লাহর কাছে নতুন একজন দাঈ প্রার্থনা করছি।
তিনি একজন সঙ্গীত শিল্পী হয়েও দীনের পূর্ণাঙ্গ দায়ী হয়ে দুনিয়ায় বিচরণ করেছেন। এই গুণ খুব কমা মানুষের ভেতর থাকে। তার মাধ্যমে সঙ্গীত এবং দীগের দীক্ষা পেয়েছে অসংখ্য তরুণ, পথভোলা মানুষ। আল্লাত তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন।
মুহাম্মদ বদরুজ্জামান, যুগ্ম পরিচালক কলরব
বিশ্বজুড়ে ইসলামি সংগীত জাগরণের অগ্রপথিক ছিলেন জুনায়েদ জামশেদ। একজন আপদমস্তক জনপ্রিয় মিউজিশিয়ান। যাকে অনুসরণ করেন অসংখ্য তরুণ। তার বদলে যাওয়া মানে বিপ্লব। ইসলামের আলোয় যিনি বদলে গেলেন এবং বদলে দিলেন লাখো তরুণ যুবককে।
হামদ, নাত এবং দাওয়াতে তাবলীগের মাধ্যমে ইসলামকে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। ২০০৮ সালে মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদ ভাইয়ের প্রচেষ্টায় কলরব ও ইকরা বাংলাদশের সহযোগিতায় আয়োজন করা হয় ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক কনসার্ট। এর প্রধানশিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জুনাঈদ জামশেদ। তিনি এসেছিলেন এবং আমাদের মন জয় করেছিলেন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে তিনি শ্রোতাদের অনুরোধে বাংলা জনপ্রিয় ইসলামি সংগীত ‘নবি মোর পরশমণি’ পরিবেশন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এভাবে তিনি বিশ্বজুড়েই ইসলামি সংগীতের মাধ্যমে সবাইকে বিমোহিত করেন। ফলশ্রুতিতে ইসলামি সংগীতের বিশাল ক্ষেত্র তৈরি হয়। তিনি শুধু ইসলামি সংগীতশিল্পীই ছিলেন না একইসাথে বড় একজন দা'য়ি ছিলেন। সমাজকর্মী হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল ব্যাপক। একজন ইসলামি সংগীতশিল্পীর অনুসরণযোগ্য মডেল তিনি।
২০১০ সালে কলরব প্রতিষ্ঠাতা আইনুদ্দীন ভাইয়ের ইন্তিকালে যেমনিভাবে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে তার ইন্তিকালে আজ আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। মহান আল্লাহ ইসলামের জন্য তার করে যাওয়া সবকিছুকে কবুল করুন। আমিন।
আরআর
এই লেখাগুলিও পড়ুন