রোকন রাইয়ান: পাকিস্তানের খ্যাতনামা ইসলামি সঙ্গীত শিল্পী জুনায়েদ জামশেদ বিমান বিধ্বস্তে নিহত হয়েছেন। বিমানটিতে তার স্ত্রী নেহা জুনায়েদও ছিলেন। ডন নিউজ জানিয়েছে বিমানের ৪৭ আরহীর কেউ বেঁচে নেই।
পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) মিমানটি ৪৭ যাত্রী চিত্রাল থেকে ইসলামাবাদে যাচ্ছিল। পিআই`র ফ্লাইট পিকে-৬৬১ এর যাত্রীবাহী বিমানটি বুধবার স্থানীয় সময় সাড়ে তিনটায় চিত্রাল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর রাডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
আগের সংবাদ: পাকিস্তানে বিমান বিধ্বস্ত; যাত্রীদের মধ্যে আছেন জুনায়েদ জামশেদও
পাকিস্তানের বেসরকারি টিভি জিও নিউজকে মাহমুদ আলী বলেন, সাবেক ক্রিকেটার সাইদ আনোয়ারের তাবলিগ জামাতের চিত্রলে তাশকিল হচ্ছিল। জুনাইদ জামশেদ তাদের নুসরত করার জন্য ১০ দিন সস্ত্রীক চিত্রল গিয়েছিলেন। সেখানে ১০ দিন অবস্থান করার পর আরও অতিরিক্ত দুদিন সেখানে অবস্থান করেন।
ইসলামি সঙ্গীতের জন্য বিশ্বখ্যাত জুনায়েদ জামশেদের মৃত্যুর খবরে পাকিস্তানসহ পুরো বিশ্বেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাংলাদেশের সঙ্গীতপ্রেমিরাও শোকে মুহ্যমান। যার সঙ্গীত হৃদয় শীতল করে দিত, যার সুরে মন উতলা হতো আল্লাহর প্রেমে। সেই প্রিয় মানুষের হুট করে দ্রুত চলে যাওয়া যেন মানতে পারছেন না কেউ।
২০০৯ সালের মে মাসে সংগীতের এক কনসার্টে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন জুনায়েদ জামশেদ। আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ ও আইনুদ্দীন আল আজাদের আয়োজনে কনসার্টটিতে গেয়েছেন বেশ কিছু গান। বাংলাদেশে সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে এখনো বাজে সেই সুর।
জুনায়েদ জামশেদ ছিলেন একজন পপ শিল্পী। সেখান থেকে তিনি ইসলামকে বেছে নিয়েছিলেন। একদিন হয়ে পথ পাল্টে দিলেন। হয়ে গেলেন ইসলামি সঙ্গীত শিল্পী। ‘ইলাহি তেরি চৌকাঠ পর ভিখারি বনকে আয়া হো’, মোহাম্মাদ কা রওজা, আই আল্লাহ, মিঠা মিঠা পেয়ারা পেয়ারা’ ইতিহাস হয়ে গেল।
বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জামশেদের ছেলে জুনায়েদ। লাহোরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ গ্রাজুয়েশন করার পর শখের বশেই রাহেল হায়াত ও শাহজাদ হাসানের সাথে ১৯৮৭ সালের ১৪ আগষ্ট পাকিস্থানের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশাত্মবোধক গান ‘দিল দিল পাকিস্থান’ গাওয়ার মাধ্যমে দেশের প্রথম পপ ব্যান্ড ভাইটাল সাইন প্রতিষ্ঠা করেন।
তাদের প্রথম হিট এ্যালবাম ‘দিল দিল পাকিস্থান’ আকাশচুম্বী খ্যাতি এনে দেয়। এই গানটিই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাকে একজন শৌখিন সংগীতসেবী থেকে পেশাদার শিল্পীতে পরিণত করে।
বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে ব্যর্থ হয়ে জুনায়েদ একজন পেশাদার প্রকৌশলী হতে চেয়েছিলেন, সংগীতকে কেবলমাত্র শখের বশেই শুরু করেছিলেন। কিন্তু এই প্রাথমিক সফলতার কারনে রাহেল ও সাজ্জাদ তাকে বুঝিয়ে রাজি করান। অনেকগুলো জনপ্রিয় ও হিট এ্যালবাম বের করার পর ১৯৯৫ সালে যখন ব্যান্ড ভেঙে যায় তখন জুনায়েদ জামশেদ তার একক ক্যারিয়ার শুরু করেন। এতেও তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, পাকিস্থানে প্রথম পপষ্টার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
পাকিস্থান সেনাবাহিনী তাদের সংগীত ‘কসম উস ওয়াক্ত কি’, পাকিস্থান বিমানবাহিনীর সংগীত ‘পালাটনা ঝাপাটনা’ -তে শিল্পী হিসেবে তাকেই বাছাই করে।
যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, একের পর এক হিট এ্যালবাম বেরুচ্ছে, তখন হঠাৎ করেই সঙ্গীত ছেড়ে দেয়ার ঘোষনা দেন। ২০০২ সালে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি যখন ঘোষনা করলেন যে তিনি গানবাজনা ছেড়ে দিবেন তখন সংগীতাঙ্গনে যেন ঝড় উঠলো। তার অসখ্য ভক্ত তাদের প্রিয়তম শিল্পীকে হারিয়ে শোকাহত হয়ে পড়লো। ২০০৩ সালের ১৪ আগষ্ট তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সংগীতজগতকে বিদায় জানান।
যে জায়গায় ‘দিল দিল পাকিস্থান’-গাওয়ার মাধ্যমে শিল্পীজীবন শুরু করেছিলেন ঠিক একই জায়গায় একই গানের মাধ্যমে সংগীত জীবনে পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন। এই মেধাবী শিল্পী তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করে খ্যাতি ও ভবিষ্যতের পরিবর্তে ঈমানকে বেছে নিলেন।
এই নাটকীয় পরিবর্তনের পর এই সিদ্ধান্ত গ্রহনে তার কোন আফসোস নেই। তিনি বলেন আমার পুর্বের জীবনযাপন কোন দৃষ্টিভঙ্গি এখন আর অবশিষ্ট নেই । আমার নতুন জীবন খুব সরল, পবিত্র এবং সুন্দর। আমি অনুভব করি আপনি আপনার জীবনে আল্লাহর হুকুম ও রাসুলের তরীকার উপর আমল করেন তাহলে দুনিয়াতেই আপনার জীবন জান্নাতে পরিণত হবে।
আরআর
জুনায়েদ জামশেদ সম্পর্কে আরো খবর ও লেখা পড়তে আওয়ার ইসলামের সঙ্গেই থাকুন..