আওয়ার ইসলাম : য়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনী নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, উচ্ছেদসহ শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন চালাচ্ছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে, গত ৯ অক্টোবর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিধন কার্যক্রমের পর প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। নিহত হয়েছে ৮৬ জনের মতো। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি অনুযায়ী, প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালিত হয়েছে। কমপক্ষে সাড়ে ১২শ' স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা একটি মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান নির্বাহী ম্যাথু স্মিথ এ দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন।
স্মিথ বলেন, আমরা খুব ধীর গতিতে কাজ করছি। এর মধ্যে আমরা মিয়ানমার সেনা বাহিনী কর্তৃক ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা হত্যা ও নারীদের ধর্ষণসহ অন্যান্য গুরুতর অভিযোগ পেতে শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, নির্যাতনের ভয়াবহতা বর্ণনাতীত। সেখানকার পুরুষদের মাথায় রাইফেল ঠেকিয়ে কিশোরী কন্যাকে ধর্ষণের চিত্র দেখতে বাধ্য করা হচ্ছে। এটা মানবতার লংঘন।
জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান এর মতে, অতি দ্রুত অন্তত ৩০ হাজার লোকের কাছে খাবার, পানি ও ওষুধ পাঠানোর ব্যবস্থা করা উচিত।
সেনা অভিযানের পর অন্তত দুই লাখের মতো রোহিঙ্গা সদস্য তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেও দাবি করেন ট্যান।
মানবাধিকারকর্মী ম্যাথু স্মিথ আরও জানান, সেনা অভিযান পরিচালিত এলাকায় স্বেচ্ছাসেবীদের কাজ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তাদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দানেও বাধা দেয়া হচ্ছে। আর এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অধিবাসীদের সাহায্য প্রেরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা নিউ ইয়র্ক টাইমস মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে একটি ছবি প্রকাশ করে। ছবিতে যে দুটি গ্রামের দৃশ্য দেখানো হয়েছে সেগুলো হল- কিয়েত ইয়ো পিন এবং ওয়া পিক।
কিয়েত ইয়ো পিন গ্রামের প্রথম ছবিটি তোলা হয়েছিল ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ। দ্বিতীয় ছবিটি মিয়ানমারের সেনাদের তাণ্ডবের পর গত ১০ নভেম্বর তোলা।
ওয়া পিক গ্রামের প্রথম ছবিটি তোলা হয়েছিল ২০১৪ সালে। এ গ্রামের দ্বিতীয় ছবিটি তোলা হয় চলতি বছরের ১০ নভেম্বর।
রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযান শুরুর আগে ও পরের ওই স্যাটেলাইট ইমেজে দু'টি গ্রামের দৃশ্য দেখানো হয়। এতে দেখা যায়, সবুজের মাঝের এক টুকরো গ্রাম দুটি পুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর কি পরিমাণ নির্যাাতন চালানো হচ্ছে সে বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
আর এসব ঘটনায় দেশটির ক্ষমতায় থাকা গণতন্ত্রীপন্থী নেত্রী ও শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সুচির রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা ও মানবিক অবস্থার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নির্বিচারে মানুষ হত্যা, ধর্ষণ ও বাস্তুহারা হওয়ার বিষয়ে কার্যক্ররি ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় সুচির রাজনৈতিক দলের সমালোচনা হচ্ছে সর্ব মহলে।
এমনকি 'শান্তির দূত' সুচি রাখাইন রাজ্য পরির্দশনে যাওয়ারও প্রয়োজনীয়তা মনে করেননি।
তবে শত সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখেও রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত অত্যাচার-নির্যাতনের কথা মানতে নারাজ সুচি এবং তার সরকার।
সমালোচনা হচ্ছে বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমদের রক্ষায় সুচি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। কারণ দেশটির সংখ্যাগুরুদের ভোটের প্রতি তার দৃষ্টি। এর জন্য গত নির্বাচনে কোনো মুসলিম সদস্যকে তিনি তার দলের মনোনয়নও দেননি। যুগান্তর
আআ