আওয়ার ইসলাম: প্রযুক্তি দুনিয়ায় গুগল ছাড়া যেনো এক মুহূর্ত চলে না। কমবেশি সবার কাছে তাই এর জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া। জিমেইল, ইউটিওব, গুগল ড্রাইভ, গুগল ম্যাপ ও ক্রোম ব্রাইজারের মতো জনপ্রিয় সফটওয়্যারগুলোর বিনামূল্যে সেবাদান করে অল্প সময়ে সবার মন জয় করে নিতে পেরেছে। সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে এখনো তাদের বিকল্প নেই। সারা বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারীরা অনেকাংশেই এই প্রতিষ্ঠানটির ওপর নির্ভরশীল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা; এক মুহূর্তের জন্যও থেমে থাকেনি।
ধরুন, হঠাৎ একদিন জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনটি বন্ধ হয়ে গেল। কী ঘটতে পারে ভেবে দেখেছেন কখনো? আসুন আলোচনা করা যাক:
অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ঝুকবে ব্যবহাকারীরা!
গুগলের সেবা বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বের অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সরাসরি ‘ডাকডাকগো’ (duckduckgo.com) সার্চ ইঞ্জিনে তথ্য অনুসন্ধানে যাবে। এটি অবশ্য ব্যবহারকারীর অবস্থান শনাক্ত করে না। তবু সার্চ ইঞ্জিন ব্যবসার নেতৃত্বেও থাকবে এটি। এছাড়া মাইক্রোসফটের সার্চ ইঞ্জিন ‘বিং’ আপনাকে চমৎকার সব ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি দিয়ে আপনাকে স্বাগত জানাবে, আপনার জন্য হতে পারে একটি ভালো বিকল্প।এছাড়া আরো আছে ইয়াহু, বাইদু, এওল, আস্ক ডটকম, এক্সাইট, উলফর্যাম আলফা ও ইয়ানডেক্স ইত্যাদি।
তথ্য অনুসন্ধানে বাড়বে বিড়ম্বনা
তথ্যানুসন্ধানে বিড়ম্বনা বাড়তে পারে, কারণ এখন শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই গুগলে যা অনুসন্ধান করেন তাই অনায়াসে পেয়ে যান। সার্চ ইঞ্জিনটি বন্ধ হলে তা খুব একটা আর সহজ হবে না। যদিও আরো অনেক বিকল্প সার্চ ইঞ্জিন আছে।
বঞ্চিত হবেন নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করা থেকে
গুগলের ‘আই এম ফিলিং লাকি’ বাটন চমত্কার সব ডুডলস দেয়। মুখে উচ্চারিত প্রশ্নের উত্তরের জন্য এটি এক নিমিষেই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট অনুসন্ধান ফলাফলটি তুলে ধরে। তাই হাতের নাগালে গুগল নেই মানে ‘আই এম ফিলিং লাকি’ বাটনও নেই।
হ্রাস পাবে চুরি করা তথ্যের সমাহার
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অনুসন্ধান মাধ্যম হওয়া সত্ত্বেও এটি ব্যবহারকারীদের চুরি করা শত শত কনটেন্ট লিংক প্রদর্শন করে। তাই গুগল বন্ধ হলে হ্রাস পাবে চুরি করা তথ্যের সমাহারও। তবে তার স্থান দখল করে নেবে ‘কিক অ্যাস টরেন্ট’ ও ‘দি পাইরেট বে’ নামক বিকল্প ডাইরেক্টরিগুলো। চুরি করা তথ্যের অনুসন্ধান ফলাফলে তাদের নাম সবার আগে আসে।
নগদ অর্থ হারাবে বাণিজ্য খাত
অসংখ্য বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনায় গুগল ওয়ার্ক অ্যাপস ব্যবহার করে থাকে। তাই একদিনের জন্য গুগল বন্ধ হলে তাদের বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
ভুল ধরে পুরস্কৃত হওয়ার দিন শেষ হবে
গুগলের কাছে যারা তাদের কোনো সেবার ত্রুটি সংশোধনী প্রতিবেদন দেয়, গুগল তাদের মোটা অংকের অর্থ পুরস্কৃত করে। গুগল বন্ধ হলে এই সব সফটওয়্যার জিনিয়াস যারা এসব ত্রুটি ধরেই বলতে গেলে জীবিকা নির্বাহ করে বা মনের খোরাক জোগায় তাদের একদম নিরামিষ দিন পার করতে হবে। হিসেব খুব সোজা, নো গুগল, নো বাগস, নো বাউন্টি।
ক্ষতিগ্রস্ত হবে গুগলও
গুগলের রাজস্বের বড় একটি অংশ আসে বিজ্ঞাপন থেকে। তাই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকা মানে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট গোল্লায় যাওয়া।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শঙ্কা, ক্রোধ ও সমালোচনার জোয়ার
ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে গুগল নিয়ে আলোচনা, সমালোচনার জোয়ার বইতে পারে। আর নিথর নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকবে গুগল প্লাস।
নতুন সার্চ ইঞ্জিন উন্মোচন করতে পারে ফেসবুক
গুগল বন্ধ হয়ে গেলে তাতে ফেসবুকের কোনো মাথাব্যথা থাকবে না। উল্টো তারা একটি নতুন সার্চ ইঞ্জিন উন্মোচন করে বসতে পারে। কারণ এরই মধ্যে তাদের তৈরি সার্চ ইঞ্জিনটি ফেসবুক সংক্রান্ত কোটি কোটি অনুসন্ধান অনুরোধ সফলভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম।
গণমাধ্যমগুলোর শীর্ষ সংবাদ
অবিশ্বাস্য সেই দিনটি যদি সত্যি উপস্থিত হয়, তাহলে বিশ্ব মিডিয়া দিনটিকে ‘গুগল শাট ডাউন ডে’ ঘোষণা করলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওই দিনটির প্রতি মুহূর্তেই গুগলের বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরটি প্রচার করবে তারা। ব্রেকিং নিউজ হবে ‘বন্ধ হয়ে গেলো জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল’।
নো লাইভ ট্রাফিক আপডেট
অধিকাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী এখন শহরের বিভিন্ন স্থানে গমনে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করেন। এছাড়া ওই দিন যদি কেউ অপরিচিত নতুন শহরে যান তাহলে তাকে তো বেশ ঝামেলা পোহাতে হবে। কারণ গুগল বন্ধ থাকলে তিনি তো আর গুগল ম্যাপের নির্দেশনা পাবেন না।
গুগলের ক্ষমা প্রার্থনা!
গুগল বন্ধ হলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানটি ক্ষমা চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ‘অ্যাপোলজি লেটার’ দেবে। হয়তো সেখানে বন্ধ হওয়ার কারণও উল্লেখ থাকতে পারে। খুব দ্রুত সমস্যা সমাধান করে আবারো চালু হওয়ার আশ্বাসও দিবে নিশ্চয়ই।
তবে সে দিনটি আসুক, তা আমরা চাই না। সকালের সূর্যোদয়ের মতো গুগলের সেবার নিত্য উপস্থিতি থাকুক সর্বক্ষণ। কফিতে চুমুক দিতে দিতে গুগলে তথ্য অনুসন্ধানও অব্যাহত থাকুক!
এবিআর