ড. মোঃ মিজানুর রহমান একজন অর্থনীতিবীদ। তিনি বিশ্ব ব্যাংকের স্কলারশিপে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন থেকে পিএইচডি এবং ইসলামী ব্যাকিং ও ইন্সুরেন্সে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা করেছেন আই.বি.আই লন্ডন থেকে। এ পর্যন্ত তার ৪০টি গবেষণা প্রবন্ধ স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং ৫০টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে। তার পাঁচটি গবেষণাধর্মী বই জার্মানি এবং আমেরিকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে এছাড়াও ইসলামী ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স উপর বাংলাদেশ থেকে দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে তিনি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি নাইজোরিয়ার একমাত্র শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক জায়েজ ব্যাংকে পরিচালক প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা পদে কর্মরত। ইসলামি অর্থনীতি ও ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমানুল্লাহ নোমান।
আওয়ার ইসলাম: বিশ্ব অর্থনীতিতে ইসলামী ব্যাংকের অগ্রগতি কেমন দেখতে পাচ্ছেন।
ড. মোঃ মিজানুর রহমান: বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকের বিস্তার ব্যাপকভাবে প্রসার পাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের যাত্রা শুরু ১৯৬৮ সালে মিশর থেকে। বর্তমানে বিশ্বের ৭৫টি দেশে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। নন মুসলিম দেশ হিসেবে ভারতেও ইসলামী ব্যাকিং এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমান বিশে ইসলামী ব্যাংকিং এর প্রবৃদ্ধি হলো ১৫-২০%। আর প্রচলিত ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি হলো ১০-১২%। বর্তমান বিশ্বে ইসলামী ব্যাাংক এর মূলধন হলো প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার যা আগামী ২০২০ সালে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে অর্থনীতিবীদরা মত ব্যক্ত করেছেন।
আওয়ার ইসলাম: নাইজোরিয়ার ইসলামী ব্যাংকিং কার্জক্রম সম্পর্কে কিছু বলুন।
ড. মোঃ মিজানুর রহমান: মূলত ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০০৩ সালে যায়েদ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে। সে কার্যক্রমই ২০১১ সালে ইসলামী ব্যাংকিং এর লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। । বর্তমানে এ ব্যাংকের নাম জায়েজ ব্যাংক। এটি নাইজোরিয়ার একমাত্র ইসলামী ব্যাংক। বর্তমানে এ ব্যাংকের ডিপোজিট হলো নাইজোরিয়ান মুদ্রা ৪৬ বিলিয়ন নায়রা (১ ইউএস ডলার=৩০৫ নায়রা)। ব্যাংকটির বিনিয়োগ আছে ৩২ বিলিয়ন নায়রা। এ ব্যাংকটি ছাড়াও স্টানবিক আইবিটিসি ব্যাংক নামে একটি প্রচলিত ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংকের শাখা কার্যক্রম আছে।
আওয়ার ইসলাম: জায়েজ ব্যাংক সম্পর্কে কিছু বলুন।
ড. মোঃ মিজানুর রহমান: জায়েজ ব্যাংক নাইজোরিয়ার শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আইডিবি এ ব্যাংকের ১০% শেয়ার। প্রথমে এ ব্যাংকটি রিজোয়ানাল লাইসেন্স দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স পায়। এ ব্যাংকটির ২৫টি শাখা রয়েছে। এ ব্যাংকে কর্মজীবির সংখ্যা ৫০০জন। মুসলিমরা সুদভিত্তিক লেনদেন থেকে দূরে থাকতে চায় তাই এদেশের মুসলিমরা জায়েজ ব্যাংককে নিজেদের ব্যাংক বলে মনে করে। তাই জায়েজ ব্যাংকের কার্যক্রম খুব গতিশীল হচ্ছে।
আওয়ার ইসলাম: কেমন লাগছে নাইজোরিয়ার কর্মজীবন।
ড. মোঃ মিজানুর রহমান: নাইজোরিয়ায় এলাম তিন বছর হলো। আইডিবির মধ্যস্থতায় ইসলামী ব্যাংক ও জায়েজ ব্যাংকের মধ্যে টেকনিক্যাল পার্টনারশীপের চুক্তি হয়। সেই চুক্তির আওতায় আমরা টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়ার জন্য এখানে এসেছি। আমি মনে করি নাইজোরিয়ায় আমার শ্রেষ্ঠ সময় কেটেছে। এদেশে আবহাওয়া আমাদের বাংলাদেশের মত। মানুষজনও খুব আন্তরিক। সবার ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এক কথায় খুব ভালো সময় কাটছে।
আওয়ার ইসলাম: ইসলামী ব্যাকিং এর বিকাশে আপনি কোন দিকটাকে বাধা বলে মনে করেন।
ড. মোঃ মিজানুর রহমান: ইসলামী ব্যাকিং বিকাশের জন্য দুপক্ষের আন্তরিকতা দরকার। ব্যাংকার এবং গ্রাহক দু পক্ষেরই ইসলামী অর্থনীতির আলোকে ব্যাকিং করার ইচ্ছা ও ধারণা থাকতে হবে। আমাদের দেশে অনেকেরই ইসলামী ব্যাকিং করার ইচ্ছা আছে কিন্তু সেই তুলনায় শরীয়াহ সম্পর্কে সবার সচ্ছ ধারনা না থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। কিছু কিছু ব্যাংকারের শরিয়াহ সম্পর্কে ধারণা কিছুটা কম থাকায় তারা প্রচলিত ব্যাংকের মতই কাজ করছে। ধীরে ধীরে এমন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আমাদের দেশে ইসলামী ব্যাংকিং ও ফাইনান্স এর উপর আলাদা কোন ডিগ্রীর প্রচলন এখনো শুরু হয়নি। ইদানিং কিছু শর্ট কোর্স চালু হয়েছে যা দক্ষ জনবল গড়তে পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও প্রতিষ্ঠিত প্রচলিত ব্যাংকের সাথে প্রতিযোগিতার বাজারে নতুন ইসলামী ব্যাংক গুলোর প্রতিযোগিতা করতে হয়। বিশ্বের অনেক দেশে ইসলামী ব্যাংকিং এ্যাক্ট হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ইসলামী ব্যাংক এ্যাক্ট করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর যে টাকা সি আর আর ও এস এল আর এর আওতায় রাখতে হয় তা থেকে ইসলামী ব্যাংকগুলো কোন লাভবান হয় না। অথচ প্রচলিত ব্যাংকগুলো এ থেকে লাভবান হয়। ইসলামী ব্যাংক এ্যাক্ট করার মাধ্যমে এদেশের ইসলামী ব্যাংকিং আরও গতিশীল করা সম্ভব। এছাড়াও ইসলামী পুজি বাজার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম আরও গতিশীল করা যায়।
আওয়ার ইসলাম: আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ড. মোঃ মিজানুর রহমান: আলোকিত বাংলাদেশের সকল সাংবাদিক ও পাঠকদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইলো।
আরআর