[caption id="attachment_14906" align="alignleft" width="478"] ফাইল ফটো[/caption]
আব্দুল্লাহ আল ফারুক: গতকাল ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব মধ্যবাড্ডার কিতাবমেলা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হলো মোড়ক উন্মোচনের দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান। বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় প্রবীণ-নবীন লেখকদের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে প্রাণের কিতাবমেলা। নতুন নতুন বইয়ের সুঘ্রাণ আর প্রিয় লেখকদের এক মঞ্চে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে তরুণ পাঠকসমাজ। লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের এই মেলবন্ধনে অনুষ্ঠানের মঞ্চটি পরিণত হয়ে একঝাক তারকায় শোভিত আকাশ।
গতকাল ছিল মেলার সমাপনী দিন। মাকতাবাতুল আযহারের উদ্যোগে গত ১৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে মধ্যবাড্ডার আদর্শনগর, মোল্লাপাড়া প্রাঙ্গনে শুরু হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামি বইয়ের মেলা। বিদেশী পাঁচ হাজার আইটেমের কিতাবের সঙ্গে বাংলা ভাষায় রচিত এক হাজার কিতাবের সমারোহে এতো দিন কিতাবমেলা ছিল আগত দর্শনার্থী ও বইপ্রেমী পাঠকদের আগমনে মুখর। বিশেষত ছুটির দিনগুলোতে দেখা গেছে ক্রেতা ও বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়।
মোড়ক উন্মোচনের দ্বিতীয় অনুষ্ঠানে মোট ২৮ টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়। মাকতাবাতুল আযহার এদিন ৫ টি নতুন বই বাজারে এনেছে। বইগুলো হলো, শিশুতোষ গল্পকার ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভীর ‘ফিলিস্তিনের পাথরশিশু’, আল কাউসার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শরীফ মুহাম্মদের ‘আল্লাহর পথের ঠিকানা’ ও ‘পত্রিকায় লেখালেখি : প্রস্তুতি ও কলাকৌশল’, আবদুল্লাহ আল ফারুকের অনুবাদকর্ম ‘দাম্পত্য জীবন কখন সুখময় হয়’ ও যশোরের মাইকেল মধুসুদন দত্ত কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর হামিদুল ইসলামের ‘দু‘আর ভা-ার’।
মাকতাবাতুল ইসলাম এ দিন তিনটি নতুন বই মেলায় এনেছে। আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-এর ‘ছোটদের সীরাতুন্নবী’, রাইহান খাইরুল্লাহর অনুবাদকর্ম ‘কেয়ামত’ ও মাসুম আবদুল্লাহর ‘গুনাহ ও তাওবা’।
মাকতাবাতুল হেরার প্রকাশনায় সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. রচিত ও আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী রহ. অনূদিত ১০ টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়। এর বাইরে মেলা উপলক্ষ্যে তারা আরও ১০টি বই এনেছে। বইগুলো হলো, তাকী উসমানীর ‘অমুসলিমদের প্রতি ইসলামের উদারতা, আরবলেখক আরেফীর ‘পরকাল, ড. ইকবাল কিলানীর ‘এই সেই লেলিহান আগুন, আবদুল্লাহ আল মাসঊদের ‘নাস্তিকতার স্বরূপ সন্ধানে’ ও শাকিল আদনানের ‘ফিলিস্তিনের জন্যে ভালোবাসা’সহ সদ্য প্রকাশিত আরও কিছু বই।
মোড়ক উন্মোচনে বাংলা ভাষার ইতিহাস ও গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করেন দৈনিক ইনকিলাবের সহসম্পাদক উবায়দুর রহমান খান নদভী, বরিত গদ্যশিল্পী যাইনুল আবিদীন, বরেণ্য সম্পাদক শরীফ মুহাম্মদ, পুষ্পিত গদ্যের যাদুকর ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী ও তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় গল্পকার আতীক উল্লাহ আতীক।
এছাড়াও মুফাক্কিরে ইসলাম নদভী রহ.-এর একান্ত শিষ্য মাওলানা আবদুর রাজ্জাক কাসেমী নদভী, প্রবীণ অনুবাদক জুলফিকার আলী নদভী, আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদক আলী হাসান তৈয়ব, নূরবিডি.কমের সৈয়দ শামসুল হুদা, তরুণ চিন্তক আশরাফ মাহদী ও পরিশ্রমী দাঈ এনামুল হাসান।
জনপ্রিয় টিভি-উপস্থাপক গাজী সানাউল্লাহর সঞ্চালনায় এ দিনের মোড়ক অনুষ্ঠানে বরিত গদ্যশিল্পী যাইনুল আবিদীন তার বক্তব্যে বলেন, দালীলিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আদর্শিক ঐক্যই এ সময়কার ইসলামপন্থীদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।
মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ তাঁর বক্তব্যে তরুণ আলেমসমাজকে সবধরনের মিডিয়ায় মার্জিত উপস্থাপনা ও সতর্ক বাকচয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
‘ফিলিস্তিনের পাথরশিশু’ বইটির লেখক ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী তাঁর আলোচনায় নিপীড়িত ফিলিস্তিনীদের জীবনসংগ্রামের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, আজকের পৃথিবীর বাস্তবতায় আমাদের দায়িত্ব হলো, সেসকল উৎপীড়িত নাগরিক সমাজের পাশে দাঁড়ানো।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক, শেকড়সন্ধানী গবেষক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী তাঁর সোয়া ঘণ্টার আলোচনায় বঙ্গদেশের ইতিহাস, বাংলা ভাষার গতি ও বর্তমান সময়ের ইসলামপন্থীদের দায়িত্ব সম্পর্কে তাত্ত্বিক আলোচনা করেন। পাশাপাশি তিনি তরুণ লেখকদেরকে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে সতর্ক নিরীক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সমাপনী বক্তব্যে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ও মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিসবাহ সকলের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, পাঠকবর্গের ক্রমবর্ধমান অনুরোধের প্রেক্ষিতে মেলায় ঘোষিত ছাড়মূল্য নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি তারা এবারের আয়োজনের নানা সীমাবদ্ধতার ওপর দুঃখ প্রকাশ করেন।
আগামীতে মেলা আরও বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে, ঢাকা ও অন্যান্য জেলার স্বনামধম্য প্রকাশনীগুলো মেলায় স্টল দেবে, এমন আশাবাদ ছিল পাঠক ও বইপ্রেমীদের মনে।
এফএফ