শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই’

যে ছবি দেখেনি কখনো দুই চোখ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

hajj_busহামজা মুহাম্মদ সামারাহ

মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশীপপ্রাপ্ত স্টুডেন্টদের বিভিন্ন সুবিধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল পবিত্র হজব্রত পালনের সুযোগ। জিলহজের ৫ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আল-রাযিহি শারিকার অধিনে হজ পারমিট লেটার পেয়ে পবিত্র হজ পালনের সুবর্ণ সুযোগ পাই, যা হৃদয়ে মহানন্দের উদ্ভাস ছড়ায়। প্রত্যাশা ও স্বপ্নের অন্যতম বিশেষ একটি ছিল এই পবিত্র হজ করতে পারাটা। আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ সুযোগ করে দিলেন যুবক বয়সেই ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ পালনের; যা আমার মতন অকৃতজ্ঞের জন্য সব চেয়ে বড় নেয়ামত।

৭ তারিখ রাতে হুট করেই রিসালাত আসে এশার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের হজ কাফেলা রওনা হবে। তারাহুরা করেই প্রস্তুতি নিতে হয়, হাতের কাছে যাদের নাম্বার পেলাম দুয়া চেয়ে নিলাম। এশার নামাজের পর বাইতুল্লাহর মুসাফির হয়ে গেলাম। মিকাতে বাস থামবে না তাই ঘোষণা ছিল রুম থেকেই এহরাম বাঁধার। মদিনার মিকাত যুলহুলাফা অতিক্রম করলাম ইফরাদ হজের নিয়ত করে। লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক... তালবিয়া পাঠ করতে করতে আমাদের বাস চলতে থাকলো বাইতুল্লাহর পানে।

দীর্ঘ প্রায় ৭-৮ ঘন্টার জার্নি শেষে সকাল ৬:৩০ মিঃ বাস পবিত্র মক্কা হারামের কাছে পার্কিং করলো, রাতের খাবার এবং ফজর নামাজ সময় মতন চলতি পথে আদাই হয়েছিল। এবার মক্কার চেকপোস্ট একটু বেশি কড়াকড়ি চলায় সময় একটু বেশি লেগেছিল। সকাল তখন ৭টা, কিং ফাহাদ গেট দিয়ে কাবায় প্রবেশ করছিলাম। প্রথম নজরে কাবা দেখে যে দোয়া করা হয় তা কবুল হয়; খানায়ে কাবার শান এটা। তাই অবনত চোখ রেখে প্রার্থনার ছক আঁকছিলাম। কি ভেবে যেন সামনে চাইতেই কালো গিলাফে আচ্ছাদিত প্রিয়তমার কাবায় চোখ পরে গেল, সত্যি আমি অপ্রস্তুত ছিলাম, কখনো এই গেট দিয়ে না ঢুকায় জানা ছিল না যে এত কাছেই কাবা চলে আসবে। এটি এমন এক প্রেমময় জিনিস যাকে না দেখার ভান করা যায় না, লুকোচুরি খেলা যায় না, তাই অপলক চোখ কে আটকে দিলাম দীর্ঘ প্রথম চাহনিতে। যেমনি আশেক তার মাশুকের চোখে চোখ রাখে পলকহীন জল অবধি। বলে নিলাম যা বলার ছিল; ছন্দ পতন এলো মেলো বাক্যে, যে সব চেয়ে বেশি ভালবাসে তাকে সব গুছিয়ে বলা লাগে না! সে সব বুঝে নেয়..! এরপর কাবায় তাওয়াফে কুদুম আদাই করি এবং সম্মিলিতভাবে সবাই হারাম শরিফ থেকে মিনায় চলে আসি।

মিনায় খুব সুন্দর করে করে তাবু টানানো , মিনা এলাকাটিকে অনেকেই আদর করে তাবু নগরী বলে থাকে, বিশাল মরুভুমি এলাকা বিশ্রিত ছোট ছোট গম্বুজ সাদৃশ্য তাবু আর তাবু, পাহাড়ে দ্বারিয়ে দেখলে অপরূপ লাগবে। আমরা আমাদের খিত্তায় চলে আসি, আহলান সাহলান সম্ভাষণ দিয়ে দায়িত্তরতরা আমাদের বরণ করে নেন প্রখর তাপের ভর দুপুরে। লাল গালিচার উপর মেট্রিসের বিছানা, ফোমের বালিশ ও পাতলা কম্বল সুন্দর করে সাজানো, এয়ার কন্ডিশনারের পাশাপাশি দেয়াল ফ্যান দেয়া রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে, যাতে প্রচণ্ড তাপদাহেও শীতল থাকে প্লাস্টিক ক্লথের স্থায়ী মজবুত তাবু ঘর। এখানে ৩ বেলা নিয়মিত আরবীয় ভাল খানার পাশাপাশি চা পানীয়র সুব্যবস্থাও রয়েছিল পর্যাপ্ত। আরবরা শিক্ষার্থীদের কদর বুঝে, তাই আমাদের জন্য তাদের আদর আপ্যায়ন যথেষ্ট প্রশংসনীয় ও সম্মানজনক ছিল। তসবি তাহলিল তালিম যিকির নামাজ ও কোর-আন পড়া সহ বিভিন্ন আমলের পাশাপাশি ছিল টিচারদের সাথে কিছু সময় আনন্দ উপভোগ করার, নানান রকমের বারনামেজ ও প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণ ইত্যাদির আয়োজনও ছিল, যা ছাত্রদের সময়কে অপচয় না করিয়ে উপকারী আনন্দময় সময় প্রদান করে । মিনায় ৮ জিলহজ তারিখে অবস্থান করে জোহর আছর মাগরিব এশা এবং পরদিন ৯ জিলহজ ফজর নামাজসমূহ আদায় করা সুন্নত। আমরা ৭ তারিখেই মিনায় চলে আসি, কেননা মিনাই আমাদের থাকার জাগা করা হয়, অনেকটা হোটেলের অল্টারনেটিভ ব্যবহার বলা যেতে পারে, তাই ৭ তারিখ জোহর নামাজ থেকেই মিনায় অবস্থান করতে হয়েছিল। মিনাতে একটি মসজিদ আছে যেখানে নবিজি সা. নামাজ পরেছিলেন, মসজিদে খয়িফ, ইচ্ছে থাকা সত্বেও দূরত্ব অনেক হওয়াতে সেখানে আর যাওয়া হয়ে উঠেনি।

৯ তারিখে দুপুর ১২টায় আরাফায় নিয়ে যেতে বাস হাজির। আরাফার জন্য মনটা উদ্বেলিত ছিল যে কখন যাবো আরাফা। কেননা আরাফায় অবস্থান করাই হজ, আরাফায় অবস্থান করা ফরজ। আরাফা অর্থ পরিচিতি হওয়া, পিতা হজরত আদম আঃ এবং মাতা হজরত হাওয়া আঃ দীর্ঘ দিন ঘুরাঘুরির পর এই আরাফায় সর্ব প্রথম তাদের সাক্ষাৎ করিয়েছিলেন মহান দয়াময় আল্লাহ্। আমাদের বাস চলতে থাকে আরাফার পানে যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু নিকটতম আসমানে অবতীর্ণ হয়ে হাজীগণকে নিয়ে ফেরেস্তাদের সাথে গর্ব করে বলবেন, দেখ আমার বান্দাদের দিকে, তারা আমার কাছে এলোমেলো ধুলায় ধূসরিত অবস্থায় ফরিয়াদ করতে করতে বহু দূর দূরান্তর হতে এসেছে, আমি তোমাদের সাক্ষি রেখে বলছি, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। ফেরেস্তাগণ বলবে অমুক তো অনেক বড় গুনাহগার, আল্লাহ়্ বলবেন আমি তাকেও মাফ করে দিলাম। সুবহানাল্লাহ!

চলতে চলতে বাস ‘বতনে উরানা’ নামক উপত্যকা ঘেঁষে যাচ্ছিল, আমাদের মুশরিফ (প্রধান দায়িত্বরত) বতনে উরানা দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দিল, রাসূল সা. আরাফার দিন এই বতনে উরানা নামক নিচু উপত্যকায় অবস্থান করতে নিষেধ করেছেন। আমাদের গাড়ি আরাফার ময়দানে পৌছে গেল, আমরা দলবদ্ধ ভাবে হেটে চললাম আমাদের নির্দিষ্ট তাবুতে, সব কিছুর খুব সুন্দর ব্যবস্থা থাকা সত্যেও মনটায় ভাললাগার কমতি একটু ছিল, কারণ জাবালে রহমত পাহাড়টি আমাদের অবস্থান থেকে অনেক দূর, এখানে রাসূল সা. বিদায় হজ্জের ভাষণ দিয়েছিলেন,হযরত আদম ও হাওয়া আঃ এর দেখা হয়েছিল এখানে, কিছু সাথির সাথে তবুও একবার বের হয়েছিলাম নিজে নিজে গিয়ে দেখে আসার জন্য কিন্তু কিছু পথ যেয়ে দূরত্ব ও মানুষের ঘনত্বের কারণে না যাওয়াটাই উচিত মনে করলাম। আরাফার ময়দানে মসজিদে নামিরায় জামাতের সাথে জোহর এবং আছর নির্দিষ্ট নিয়মে একত্রে আদায় করা উত্তম, কিন্তু মসজিদটাও দূরে হওয়াতে নিজ তাবুতেই নামাজে জামাত করতে হয়েছে। দুপুর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফা ময়দানে অবস্থান করা ওয়াজিব। আমরা দূপুরের খাবার খেয়ে যে যার মতন ব্যক্তিগত আমলে মশগুল হয়ে গেলাম। কখনো দাড়িয়ে কখনো বসে আল্লাহর দরবারে মনের আকুতি মিনতি করতে থাকলাম সবাই, রাসূল সা. দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করেছিলেন তাই দাড়িয়ে করা উত্তম।

আরাফার দিন দোয়া কবুলিয়াতের দিন, সব চেয়ে বেশি জাহান্নামী কে আল্লাহ়্ মুক্তি দেন এই দিনে, আল্লাহ জাল্লেশানুহুর রহমতের বারি ধারাও হয় সব চেয়ে বেশি এই দিনে, আর এসব দেখে শয়তান এই দিনে সবচেয়ে বেশি ক্রুধান্নিত হয়। আরাফার দিন হাজিদের জন্য ঈদের দিন বলেছেন নবীজি। ইহুদিরা হযরত উমর রাঃ কে বলেছিল– আপনারা এমন একটি আয়াত তেলাওয়াত করে থাকেন যদি সেই আয়াত আমাদের উপর নাজিল হতো তাহলে আমরা সে নাযিলের দিন কে ঈদের দিন হিসেবে পালন করতাম, সেই আয়াত হলো ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।’ এই আয়াত খানা রাসূলে আকরাম সঃ এর জীবনের প্রথম ও শেষ হজে আরাফার দিনেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু নাজিল করেন।

আরাফার দিনের মর্তবা বলে শেষ করা যাবে না, সব চেয়ে বড় নেয়ামত ও প্রাপ্তি হলো এখান থেকে আল্লাহর বান্দাগণ ভুমিষ্ট হওয়া শিশুর মতন নিষ্পাপ হতে পারাটা। ভিরের কারণে সূর্যাস্তের ২০মি আগেই বাসে উঠে পরতে হয়, তবে বাস বের হতে হতে সন্ধ্যা পার হয়ে প্রথম রাত্র চলে আসে। সবাই বেশি বেশি ইস্তেগফার পরতে পরতে আরাফার প্রান্তর ত্যাগ করি। বার বার পিছু ফিরে চেয়ে দেখার চেষ্টা করি প্রাণ প্রিয় আরাফাকে, এ প্রান্তর পরিপূর্ণ ইসলাম হবার প্রান্তর, এ প্রান্তর নিষ্পাপ মুসলিম হবার প্রান্তর, এ প্রান্তর পরিশুদ্ধ করে অন্তর... এখানে তার কাছে বলেছি জীবনের সব টুকু, এখানে তার কাছে চেয়েছি জীবনের বাকিটুকু।

মুজদালিফায় ৯ তারিখ দিন শেষে ১০ তারিখ রাত্রে রাত্রিযাপন করা সুন্নত এবং না পারলেও সুবহে সাদিক থেকে সকাল পর্যন্ত থাকা ওয়াজিব, তাই মিনার তাবু কাছে থাকায় বাস মিনায় থামলো,মিনা ও আরাফার মধ্যবর্তি স্থান মুজদালিফা। রাতের খাবার খেয়ে নিচে বিছানোর বেডিং নিয়ে সবাই রওনা হলাম মুজদালিফায় রাত্রিযাপনের জন্য। মুজদালিফা কে মাশআরে হারামও বলা হয়,এই নামে একটি মসজিদও রয়েছে সেখানে, সেখানে এশার নামাজের সময় এক আজানে দুই ইকামাতে মাগরিব ও এশার নামাজ পর পর এক সাথে আদায় করতে হয়।মহানবী সঃ সোয়া লক্ষ সাহাবায়ে কেরাম কে নিয়ে এই মুজদালিফায় অবস্থান করেছেন। মুজদালিফা মানে মিলিত হওয়া,আমাদের আদি পিতা ও মাতা হযরত আদম আঃ ও হযরত হাওয়া আঃ এই মুজদালিফায় প্রথম রাত্রি যাপন করেছেন, এই মধুর রাত্রি আল্লাহ সুবহানাহুর নিকট অনেক প্রিয় একটি রাত্রি। এশার নামাজের পর নবী সঃ এর সুন্নত হিসেবে সবাই সুয়ে পরেছিলাম এবং কিছু রাত্র নামাজ জিকির কোরআন পাঠ ও দোয়া ইত্যাদি আমলে মনোনিবেশ করেছিলাম সবাই। ফজরের নামাজ পরে আমরা পাথর কুড়াতে লাগলাম মুজদালিফায়, ৭০ টি করে পাথর নিলাম সবাই,যখন সকাল হলো তখন সরাসরি জামারতে শয়তানকে পাথর না মারতে গিয়ে নাস্তার জন্য এবং বেডিং রাখার জন্য আমাদের তাবু মিনাতে চলে এলাম।

১০ জ্বিলহজ্জ ঈদের দিন হলেও আমদের হাজিদের কোনো ঈদের নামাজ নেই,আমাদের জন্য শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপনের দিন এটি। বড় জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা হাজিদের জন্য ওয়াজিব কাজ। ১১টার দিকে রওনা হলাম দলবদ্ধভাবে জামারাতের দিকে ৭টি পাথর হাতে নিয়ে। পাহাড় কাটা পাহাড়ের বুক চেরা রাস্তায় হাজিদের পদচারণে ভরে গেছে, গতবারের ট্রাজেডি মনে পরতেই চমকে উঠলাম ভয়ে, কিন্তু দীর্ঘ ৫০ মিনিট হাটার পর যখন চলে এলাম রড় জামারায় শয়তানকে পাথর মারার কাছা কাছি তখন বুঝতে পারলাম বিশাল গুষ্টির চক্রান্ত ছাড়া ২০১৫এর অমন মর্মান্তিক ট্রাজেডি অসম্ভব। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে পর পর ৭টি পাথর মারলাম, এটি একটি শয়তানকে পাথর মারার প্রতিকি মাত্র, এটি ছিল মুসলিম জাতির পিতা হযরতে ইব্রাহীম আঃ এর সুন্নত, পুত্র হযরত ঈসমায়িল আঃ কে মহান রবের আদেশে তার সন্তুষ্টির জন্য যখন কুরবানী করতে যাচ্ছিলেন,কঠিন পরিক্ষার সম্মুখিন যখন পিতা পুত্রের ভালবাসা, ঠিক তখন শয়তান এই জাগাটিকেই তাকে উক্ত কাজ অমানুবিক বলে বাধা প্রদান করত ওয়াছ ওয়াছা বা ভ্রান্ত করতে চেষ্টা করেছিল, আর তখন ইব্রাহিম আঃ দোয়া পরে পাথর নিক্ষেপ করে শয়তানকে তারিয়ে দিয়েছিল। এজন্য রাসূল সঃ আমাদেরকে এ কাজ করতে নির্দেশ করেছেন, এতে শয়তান অপমানিত ও ধিকৃত বুধ করে। পাথর মারা শেষে আমরা মিনায় চলে আসি এবং মাথা মুণ্ডন করে হালাল হই, যারা মুতামাত্তি ও ক্বিরান হজ্জ আদায় করেছে তারা ওয়াজিব কোরবানি আদায় করে। এর পর আমরা সবাই গুসল করে ইহরামের সাদা কাপড় ছেড়ে জুব্বা পাঞ্জাবী রুমাল পাগড়ী ইত্যাদি নিজ নিজ ড্রেস পরিধান করি। ১১ তারিখে ২১ টি পাথর নিয়ে জামরায় চলে যাই, ছোট শয়তান- মধ্যম শয়তান- ও বড় শয়তান বা জামারায় ৭টি করে মোট ২১টি পাথর মারি। প্রথম ও দ্বিতীয় বার পাথর মারার পর উভয় জামারার মাঝে দোয়া কবুলের জাগা। সবাই হাত তুলে কেবলা মুখি হয়ে দোয়া করেছি এলাহির দরবারে।

তাওয়াফে ইফরাদ ও সায়ী করার জন্য ১৩ তারিখ রাত ২টায় মসজিদে হারামে চলে যাই,তাওয়াফে ইফরাদ শেষে মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে দারিয়ে ২রাকাত নামাজ আদায় করে চলে যাই ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজরিত সেই সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সায়ী করতে,যেখানে বিবি হাজেরা আঃ সন্তান ইসমাইল আঃ এর পানির জন্য কত কষ্ট করে দৌড়িয়েছেন, আমরা ছেলে মানুষ এসির ভেতরে টাইল্স বিছানো পথে দৌড়িয়ে অস্থির হয়ে যাই,একটু পর পর জমজম খাই , আর তিনি নির্জন মরুতে উত্তপ্ত বালুকাময় ও পাথর মিশ্রিত উচু নিচু পথে একজন মহিলা মানুষ হয়ে কতটা কঠিন ধ্বর্য্যের পরীক্ষা দিয়েছিলেন? আর তা আল্লাহর কাছে কতইনা প্রিয় হয়ে গেছে যে এ পাহাড় দ্বয় সায়ী করা বান্দার উপর ওয়াজিব করে দিয়েছেন। সুবহানআল্লাহ!

১৩ তারিখেও ১২ তারিখের ন্যায় জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করতে যাই। একটি কথা না বললেই নয় যে হজ্জ এমন একটি ইবাদাত যাতে অর্থ এবং দৈহিক শক্তি উভয়টিই প্রয়োজন, অনেকেই শেষ বয়োসে হজ্জ করার নিয়ত করেন,এটা ভুল সিদ্ধান্ত। আমরা যুবক মানুষ; ছাত্র মানুষ; রক্ত গরম মানুষ এবং আরবদের সাথে আরামে হ্জ্জ করার সুযোগ পেযেছি তবু আমরা এতো কষ্ট অনুভব করেছি,অসুস্থ প্রায় হয়ে পরেছি, বিশেষ করে জামারাতে যাওয়াটা খুবিই কষ্ট কর যা শারীরিক শক্তি ছাড়া অসম্ভব, আমি নিজ চোখে দেখেছি গড়মে অসুস্থ হয়ে একজন কে মরে যেতে! তাহলে আপনারা যারা দেশ থেকে বৃদ্ধ বয়স্ক মানুষ আসেন তাদের কি হাল হয়? কাজেই সার্মথ হবার সাথে সাথে বয়স থাকতেই হ্জ্জ করার চেষ্টা করুন।

১৩ তারিখের পাথর মারার পর মিনায় এসেই দেখি নিয়ে যাবার জন্য বাস হাজির, সূর্য ডুবার আগেই চলে যেতে হবে,নয়তো ১৪ তারিখেও পাথর মারা ওয়াজিব হয়ে যাবে, ব্যাগ গুছানো ছিল আগে থেকেই। বাসে উঠে বসলাম আর বার বার মিনার দিকে আমাদের তাবুর দিকে ফিরে ফিরে চাইলাম, ৭টি দিন এখানে যাপন করে কেমন যেন আপন করে নিয়েছি মিনা কে! অনেক কষ্ট হচ্ছিল, দোয়া করেছি আবার যেন প্রিয়তমর ডাকে এই তাবুর নগরীতে তার মেহমান হয়ে আসতে পারি, আবার যেন ক্লান্ত স্লান্ত দেহ খানা মোর হেলায়ে দিতে পারি মিনার বুকের পরে, যেখান থেকে তাওহীদ ও ইসলামের দাওয়াতের কাজ বুলন্দ হয়েছে।

তাওয়াফে বিদা, ওয়াজিব তাওয়াফ, তাই বাস বাইতুল্লাহর দিকে ছুটলো। জনসমাগম বেশি থাকায় অনেক দূর থেকেই পায়ে হেটে মসজিদ পানে সবাইকেই ছুটতে হয়েছে, ৩০মি: হাটার পর চোখের সামনে খানায়ে কাবা দেখতে পেলাম। ভিরের কারণে ছাদে চলে যেতে হলো তাওয়াফ করতে। ছাদে তাওয়াফ করতে অনেক সময় লাগে কারণ দূর দিয়ে রওফ হওয়াতে বেশি হাটা হাটতে হয়, মাগরিবের নামাজের আগে ৩তাওয়াফ এবং মাগরিবের নামাজের পর থেকে এশার আগে ৪ তাওয়াফ মোট ৭ তাওয়াফ শেষ করে আবার সেই ৩০ মি: পথ হেটে বাসে চরে বসলাম। এতক্ষনে শরীরটা খুবই ক্লান্ত, শিরায় উপশিরায় ব্যথা বহমান।

১০টায় আমাদের গাড়ি ছাড়লো সোনার মদিনার পথে, দীর্ঘ ৭দিনের ক্লান্ত ঘন সফর শেষে মদিনার পথ এনে দিচ্ছিল প্রশান্তির বার্তা। মনে হচ্ছিল নিজের বাড়ি মায়ের কুলে ফিরছি। সত্যিই, যেখানেই সফরে যাই, যত ক্লান্তই হই মদিনায় ফিরার সময় সব মলিন হয়ে যায়, রাসূল সঃ বলেছিলেন হে আল্লাহ তোমার কাছে যে জাগাটি প্রিয় সে খানেই আমাকে নিও! এটাতো সেই মদিনা যেথানে সুয়ে আছেন নূর নবী হযরত, শান্তির বানী বহন কারির নগরীতে শান্তি থাকবেনা তো কোথায় শান্তি থাকবে। দীর্ঘ ৭ ঘন্টা সফর শেষে ঘুম ভেঙ্গে নিজেকে দেখতে পেলাম মদিনার দ্বার প্রান্তে বাস। মদিনার শেষ রাতের হিমেল হওয়ায় মনটা শিতল হয়ে গেল, অল্পক্ষণেই পৌছে গেলাম প্রাণপ্রিয় মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মনে মনে ভাবলাম আল্লাহ তাআলার কত বড় নেয়ামত যে এতো বড় একটি আমল কোনো সমস্যা ছাড়াই কত সহজেই আল্লাহ সুবহানাহু পালন করার তৌফিক দিলেন। আমাদের হজ টা যেন নবীজির হজের মতন হলো, তিনিও সাহাবাদের নিয়ে মদিনা থেকে হজ্জ করতে মক্কা গিয়েছিলেন এবং পুনঃরায় মদিনাতেই ফিরে এসেছিলেন।আলহামদুলিল্লাহ..!

আল্লাহ আমাদের হজ্জ কে কবুল করো। তৌফিক দাও আবারও লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বইক বলে বাইতুল্লাহর মুছাফির হবার।

লেখক: শিক্ষার্থী, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ