ফারুক ফেরদৌস : হজ নিয়ে সৌদি-ইরান উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এর সূচনা বেশ আগে হলেও সম্প্রতি দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ চলছে। এক দিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সৌদি আরবকে শাস্তির মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছেন। গত বছর মিনায় ক্রেন দুর্ঘটনায় সাড়ে সাতশ মানুষের প্রাণহানির পরও সৌদি আরব কীভাবে হজের ব্যবস্থাপনার আয়োজন করতে পারে এই প্রশ্ন তার। ইরানের দিক থেকে এ ধরনের বক্তব্য আসার পর সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি শেইখ আব্দুল আজিজ বলেছেন, খামেনির বক্তব্যে তিনি বিস্মিত হননি। মক্কা ডেইলিকে তিনি বলেছেন ‘আমাদেরকে বুঝতে হবে তারা মুসলিম নন। আরও আগে বেড়ে সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি মন্তব্য করেছেন, ‘তারা পারসিক পুরোহিতের সন্তান এবং মুসলিমদের সঙ্গে তাদের শত্রুতা পুরনো।’
এই বাকযুদ্ধের বিষয়ে মতামত জানতে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় চট্টগ্রাম ওমর গণি এম ই এস ডিগ্রী কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সাথে।
তিনি বর্তমান উত্তেজনার সৃষ্টির জন্য প্রধানত ইরানকে দায়ী করে করে বলেন, ইরান ও সৌদি আরব উভয় পক্ষেরই কিছুটা বাড়াবাড়ি থাকলেও ইরানিদের বাড়াবাড়িটাই এক্ষেত্রে বেশি। তিনি বলেন, ইরানিরা হজের সময় সৌদি আরবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে বহুদিন যাবত। তারা মাইক ব্যবহার করে, রাজনৈতিক শ্লোগান দেয়, জমায়েত করে। যদিও হজের মৌসুমে হজের আরকান আহকাম ছাড়া সব ধরণের সভা সমাবেশ ওখানে নিষিদ্ধ। ইরানিরা প্রতিবারই এরকম করে এবং এ কারণে সৌদি পুলিশের সাথে তাদের ইরানিদের ছোটখাটো সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এরকম বহু দিন যাবত হয়ে আসছে। এই ব্যাপারটাকে কেন্দ্র করেই এবার ইরানের সাথে সৌদি কর্তৃপক্ষের সমস্যা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছরের ক্রেন দুর্ঘটনা আসলে মূল ইস্যু নয়।’
কিন্তু সৌদি গ্র্যান্ড মুফতির বক্তব্যও ন্যায়বিচ্যুত উত্তেজিত বক্তব্য মন্তব্য করে আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ইরানিরা মুসলমান না হলে সৌদি কর্তৃপক্ষ এতদিন তাদেরকে হারামাইনে ঢোকার অনুমতি কী করে দিলো? হারামাইনে তো অমুসলিম ঢুকতে পারে না। যদি তারা অমুসলিমই হয়ে থাকে তাহলে এতদিন যাবত তাদেরকে এই অনুমতি কীভাবে দেয়া হলো? তিনি বলেন, এখনকার উত্তেজনা সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। ইরানিদের মুসলমান হওয়া না হওয়া এখনকার সমস্যার কারণ নয়।
তবে তিনি মনে করেন সৌদি কর্তৃপক্ষ ইরানের জবাব দিতে গিয়ে কিছুটা বাড়াবাড়ি করে ফেললেও কার্যক্ষেত্রে এতদিন ইরানি হাজিদেরকে অন্য হাজিদের মতই সুযোগ দিয়ে আসছিলো। অতীতে হজ পালনের ক্ষেত্রে ইরানিদের প্রতি উল্লেখযোগ্য কোনো বৈষম্য দেখা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সৌদি আরব এবারও চেষ্টা করেছিলো সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে। কিন্তু ইরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা হওয়ার পর সৌদি আরবের জন্য ইরানের সাথে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হয়ে ওঠে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, সৌদি আরব ও ইরান খুব শীঘ্রই আলোচনার মাধ্যমে এই অচলাবস্থা দূর করবে।
এফএফ