আব্দুল্লাহ বিন রফিক; আওয়ার ইসলাম
সভ্যতা অনেকটা পথ হেঁটে হেঁটে বর্তমানের এই চক্রবলয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তবু থেমে নেই সে। অজানা ভবিষ্যতের গন্তব্যে নিরন্তর ছুটে চলেছে। এরই মধ্যে কত জাতি ও সভ্যতার যে বিলুপ্তি ঘটেছে তারও নেই কোনো সঠিক পরিসংখ্যান।
কালের গতিচক্রের সামনে সবই হারিয়ে যায়। বেঁচে-বর্তে অবশিষ্ট কিছু থাকলে কেবল মানবতার প্রতি তাদের অর্পিত প্রেম ও ভালোবাসার নিদর্শনটুকু। বিশ্ব মানবতার প্রতি ইসলামের সেই দান ও প্রেম নিবেদনই আজকের আলোচ্যবিষয়।
পাবলিক লাইব্রেরী
ইসলামের প্রথম দশকগুলোতে গোটা মুসলিম ভূ-খন্ড জুড়েই মসজিদসমূহকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বুদ্ধি চর্চার মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিচার করা হতো। মসজিদ কেবল ইবাদাত-আরাধনার স্থান হিসেবেই দেখা হতো না বরং তা ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান সমৃদ্ধ এক পূর্ণ পাঠশালা ও লাইব্রেরী হিসেবেও দেখা হতো।
এই লাইব্রেরীগুলো না কেবল ক্ষমতাসীদের জন্য আর না বুদ্ধিবৃত্তিক অভিজাত শ্রেণিদের জন্য উন্মুক্ত ছিলো বরং তা জনসাধারণ ও সকল শ্রেণি পেশা মানুষের জন্যই উন্মুক্ত ছিলো।
অপারেশনের যন্ত্রাদি
দশম শতাব্দীর একজন বিখ্যাত মুসলিম সার্জন কাসেম আল-জাওহারী। যাকে সার্জারির জনক বলা হয়। তিনি অপারেশনের অনেক যন্ত্রাদি আবিষ্কার করেছিলেন যা আজো আধুনিক মেডিকেল অপারেশনে হুবহু ব্যবহার হয়ে আসছে।
এগুলোর মধ্যে আছে ছুড়ি, অস্ত্রপচারের সুঁই ও কাঁচি ইত্যাদি। এছাড়া তিনি শরীরের আভ্যন্তরীন সেলাই তদারকি করার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ক্যাথট বা আঁতও আবিষ্কার করেছিলেন যাতে করে তা শরীর কর্তৃক খুব সহজেই শোষিত হতে পারে। আর এই আবিষ্কার দু’বার অপারেশনের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলো।
বীজগণিত
বীজ গণিত নিয়ে গবেষণা শুরু ইসলামের সোনালি যুগ থেকেই। জগদ্বিখ্যাত গণিতবিদ আলখারিজমের বলিষ্ঠ তত্ত্বাবধানে। এ শাস্ত্রের জনকও তিনি। অ্যালজেবরা শব্দটি এসেছে আল-জাবের শব্দ থেকে। দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানের একটি ব্যবহৃত প্রক্রিয়া এটি।
গণিতের ধারণা ও তার জ্ঞান সম্প্রসারিত করতে বীজগণিতকে একটি বাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত শাস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আলোকবিদ্যা
১১ শতকের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ইবনে হাইছাম । আমাদের চোখ কিভাবে দেখে এর প্রাচীন যে ভুল ধারণা মানুষের মাঝে ছিলো তিনি তার আবিষ্কারে সে ভুল ধারণা ভেঙে দেন। সবকিছু উল্টে দিয়ে তিনি তার তত্ত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।
যখন কিছু লোক বলতো আলোকরশ্মিগুলো আসে চোখের বাইরে আর কারো ধারণা ছিলো, কোনো বস্তুর প্রতিফলন তৈরি করতে কিছু একটা চোখে এসে পড়ে। সকলের সব ভুল ভেঙে ইবনে হাইছাম তার গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ কথা প্রমাণ করেন, আলো স্বয়ং চোখ থেকে নির্গত হয় না বরং আলো সরাসরি কিংবা প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসে।
কফি
কফির জন্ম আফ্রিকার ইথিওপিয়ায়। আরব মুসলিমরাই একে পানীয় জাতে উন্নীত করেছে। আমরা কফি সম্পর্কে জেনেছি ১৫ শতকে যখন ইয়ামেনিরা ইথিওপিয়ানদের সাথে বাণিজ্য করতো।
তারা মটরশুটি রোপন করতো, এগুলো তারা ফ্রাই করতো এরপর তা পানিতে সিদ্ধ করতো। সুফি-সাধক ও ধার্মিকরা তখন ঘুম থেকে রক্ষা পেতে তারা কফি পান করতে শুরু করেন। যাতে রাতের বেলায় তারা নির্বিঘ্নে ইবাদাতে কাটাতে পারেন।
সূত্র: দ্যা মুসলিম টাইমস