বাংলাদেশের বিস্ফোরক অধিদপ্তর বলছে, দেশে চলমান গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষার সময় চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ বহু গ্যাস সিলিন্ডার চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল হক জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ১১ হাজার গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করে সেগুলোর মধ্য থেকে আট হাজার গ্যাস সিলিন্ডার বাতিল করা হয়েছে।
বিভিন্ন সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সিলিন্ডারগুলো পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে এ পরীক্ষার কাজ চলছে। সেখানে কাজ শেষ করার পর দেশের অন্য জায়গায় এ পরীক্ষা চালানো হবে।
রান্নার কাজে যারা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করেন, তাদের অনেকেই সিলিন্ডারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। কর্তৃপক্ষ বলছে এ উদ্বেগ দূর করতেই সিলিন্ডারগুলো পরীক্ষার কাজ চলছে।
ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার বাসিন্দা রওশন আম্বিয়া গত প্রায় আট বছর ধরে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করেন। কিন্তু বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের খবর দেখেছেন তিনি। এর ফলে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার নিয়ে তার মাঝে এক ধরনের উদ্বেগ আছে।
রওশন আম্বিয়া বলেন, " চিন্তা তো হয়। বাসায় বাচ্চা আছে, টেনশন কাজ করে। আমাদের আশে-পাশে এরকম ঘটনা শুনেছি যে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েছে।"
বাংলাদেশে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী রান্নার কাজে ব্যবহার করা গ্যাস সিলিন্ডারের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। যেসব প্রাহক সিলিন্ডার ব্যবহার করেন কিংবা মাঠ পর্যায়ে যারা ডিলার তাদের, তাদের অনেকেই সিলিন্ডারের ভালো-মন্দ বুঝতে পারেন না।
রান্নার জন্য জরুরী চাহিদা মেটানো যেখানে অগ্রাধিকার সেখানে সিলিন্ডারের গুণগত মান বিবেচনা করার সুযোগ থাকেনা গ্রাহকদের।
সিলিন্ডারের নিরাপত্তা এবং গুনগত মান নিয়ে সবসময়ে উদ্বিগ্ন থাকেন ব্যবহারকারী বাকি বিল্লাহ।
তিনি বলেন, "সিলিন্ডারটা কেনার সময় আমি খুব ভয় পাই। কারণ সিলিন্ডারে বিস্ফোরণে অনেক ঘটনা হয়েছে। যতবারই আমি সিলিন্ডার কিনি ততবারই আমার এ টেনশনটা থাকে।"
বাংলাদেশের বাজারে এখন যেসব সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে তার ৮০ শতাংশ বেসরকারি কোম্পানিগুলোর। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সিলিন্ডার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৫-২০ শতাংশ।
প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক শামসুল আলম জানালেন দশ বছরের বেশি পুরনো সিলিন্ডার পরীক্ষা করা হচ্ছে। মি: আলম আরো জানালেন চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি কোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার সিলিন্ডার পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে মাত্র আটটি সিলিন্ডার বাতিল করা হয়েছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সিলিন্ডার নতুন হওয়ায় সেগুলোর অবস্থা ভালো বলে উল্লেখ করছে বিস্ফোরক অধিদপ্তর।
মি: আলম বলেন, যেসব সিলিন্ডার বাতিল করা হয়েছে সেগুলো যথাযথ যত্ন নেয়া হয়নি। গ্যাস সিলিন্ডারকে যে যত্নসহকারে ব্যবহার করতে হয়, সে ধারনা অনেকের মাঝেই গড়ে উঠেনি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাইরে থেকে দেখতে কোন সিলিন্ডার চকচকে মনে না হলেই যে সেটি ঝুঁকিপূর্ণ তা নয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, সিলিন্ডারের নিরাপত্তা নিয়ে গ্রাহকদের যাতে উদ্বেগ না থাকে সেজন্য এগুলো পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী দু'মাসের মধ্যে প্রায় সাত লাখ সিলিন্ডার পরীক্ষা করার টার্গেট নিয়েছে বিস্ফোরক অধিদপ্তর।
সূত্র: বিবিসি