আওয়ার ইসলাম: ধর্ষণকাণ্ডে ভারত গত বছর পুরোটাই ছিল উত্তপ্ত। সেখানে দিন দিন ধর্ষণ বেড়েই চলছে। এই নিয়ে নানাজনে নানা রকম মতামত দিচ্ছেন। কিন্তু কোনো ওষুধই ধর্ষণ বন্ধে কাজ করছে না।
ভারতে ২০১৫ সালে মোট ৩৪ হাজার ৬৫১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির অপরাধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) এ তথ্য জানিয়েছে।
এনসিআরবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষিতাদের মধ্যে ৬০ বছরের নারী থেকে শুরু করে ছয় বছরের কম বয়সী কন্যাশিশুও রয়েছে। তবে বেশিরভাগের বয়সই ১৮ থেকে ৩০-এর মধ্যে। মোট ধর্ষিতার মধ্যে এই বয়সীদের সংখ্যাই ১৭ হাজারের বেশি।
ধর্ষণের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৩৪ হাজার ৬৫১টি ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে ৩৩ হাজার ৯৮ জনই তাদের ধর্ষণকারীকে পূর্ব থেকে চেনেন। ২০১৪ সালের তুলনায় অবশ্য ধর্ষণের ঘটনা কিছুটা কমেছে ভারতে। ওই বছর এই সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার ৭৩৫। এছাড়া ২০১৫ সালে আরো ৪ হাজার ৪৩৭টি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, এনসিআরবি’র এই প্রতিবেদনে প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশিত হয়নি। বাস্তবে এসব ঘটনা আরো অনেক বেশি হবে। সামাজিকসহ বিভিন্ন কারণে অনেক ঘটনাই প্রকাশ পায় না। ভারতীয় নারী অধিকার সংগঠন অল ইন্ডিয়া প্রোগ্রেসিভ ওম্যানস অ্যাসোসিয়েশন’র সেক্রেটারি কবিতা কৃষ্ণ এ ধরনের প্রতিবেদন আরো সতর্কতার সাথে বিশ্লেষণ করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন।
তবে অনেক ক্ষেত্রে সম্মতিসূচক যৌন মিলনকেও ধর্ষণের মধ্যে গণ্য করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। কবিতা কৃষ্ণ বলেন, ‘অনেক ধর্ষণের ঘটনাই প্রতিবেদনে আসে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে সম্মতিসূচক যৌন মিলেনের পর মেয়ের মা-বাবা তাকে ধর্ষণ হিসেবে অভিযোগ দায়ের করে থাক।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে ভারতীয় এক মেডিক্যাল ছাত্রীর ধর্ষণের পর দেশটির ধর্ষণের ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর থেকেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে ভারতে আন্দোলন চলছে। দিল্লিভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) পরিচালক শ্রেয়া জানি জানান, যৌন হয়রানি এবং শিশুদের অপব্যবহার ভারতে একটি উদ্বেগের কারণ।
তিনি আরো বলেন, ‘অতীতে এসব অপরাধের বিষয় আলোচনা করাও ভারতে নিষিদ্ধ ছিল। এখন অনেক নারীই তাদের ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করে। অনেকেই এর বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে। নারীরা নিরবতা ভেঙে বেরিয়ে আসায় আমি আনন্দিত।
উল্লেখ্য, ভারতের অপরাধ ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালে দেশটিতে নারীদের বিরুদ্ধে মোট ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩৯৪টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে যৌন হয়রানি, পোশাক খুলে নেয়ার চেষ্টা, মেয়েদের বিদেশে পাচার, স্ত্রী ওপর নির্যাতন এবং অপহরণসহ আরো অন্যান্য অপরাধ রয়েছে।
আরআর