ওমর ফারুক মজুমদার, ঘটনাস্থল থেকে ফিরে :
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে নানুপর মাদরাসায় বেদাতিদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে কমপক্ষে ২৩ জন। আহতদের মধ্যে নানুপুর জমিরিয়া ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা বেলাল উদ্দিনও রয়েছেন। ২৬ আগস্ট শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় উপজেলা নানুপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। কওমী আকিদার নানুপুর জমিরিয়া ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থীর সাথে স্থানীয় সংগঠন ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতাল ও নাজিরহাটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন নানুপুর জমিরিয়া ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা বেলাল উদ্দিন। তিনি চমেক হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন। সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে উপজেলার নাজিরহাটস্থ ঝংকার মোড়ে জঙ্গিবাদের প্রতিবাদ ও নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যার বিচারের দাবীতে সমাবেশে যোগ দিতে ছয়টি চাঁদের গাড়ি যোগে দক্ষিন ফটিকছড়ি থেকে ইসলামী ফ্রন্টের একদল নেতাকর্মী-সমর্থক যাচ্ছিলেন। তারা যানজট এড়াতে মাইজভান্ডার সড়কের বিকল্প সড়ক হিসেবে নানুপুর-রোসাংগিরী সড়কটি ব্যবহার করছিলেন। মিছিলসহকারে যাত্রাপথে নানুপুর জমিরিয়া ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা সংলগ্ন পৌছালে তাদের মিছিল ইট নিক্ষেপ করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে মিছিল থেকে কিছু যুবক মাদ্রসায় প্রবেশ করেন। তারা অভিযোগ নিয়ে প্রথম মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা বেলাল উদ্দিনের কাছে যান । অভিযোগটি সঠিক নয় বলে জানালে মাদ্রাসার পরিচালকের সাথে বাকবিতান্ডা সৃষ্টি করে ইসলামী ফ্রন্টের কর্মীরা । অভিযোগকারীদের একজন মাদ্রাসার পরিচালকের দিকে তেড়ে আসলে অন্য এক শিক্ষক তা মোবাইলে ছবি তুলতে চাইলে তা কেড়ে নেয় ইসলামী ফ্রন্টের কর্মীরা। এ নিয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে মাদ্রাসার সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও জড়ো হন। অপরদিকে মিছিলকারীরাও মাদ্রাসায় ঢুকে পরিচালক মাওলানা বেলাল উদ্দিনকে টেনে হিঁছড়ে বাইরে নিয়ে যায়। হুজুরকে নিয়ে টানাহেচড়া করতে দেখে মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও তাদের পিছু নেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক মাওলানা মো. বেলাল (৫৫), শিক্ষা পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন (৩০), দরোয়ান মো. জাহাঙ্গীর (২৪), বাবুর্চি মো. মিনহাজ (১৭), মোজাহের (১৯), ছাত্র মো. জোনায়েত (১৩), মো. আনোয়ার (২০), আবদুল কাইয়ুম (১৬), মো. শওকত (২৭), খোরশেদ (১৮), মো. শোয়াইব (১৫), মো. রাকিব (১৭), লুৎফুর রহমান (১৭), জসিম (১৮) ও একরাম (১৫) আহত হয়। অপর পক্ষের ইসলামী ফ্রন্টের সমর্থক নওশাদ (২৫), নিশাদ (২০), নজিবুল হক (২৫), আবির (২৫), মোস্তাক আহমেদ (২৩), মো. শাহজাহান (২৬), মো. জাহেদ (২২), হুমায়ুন কবির (৩৫) আহত হয়। মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা লিসানুল হক বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম শুক্রবার হিসেবে বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের কোন শিক্ষার্থী বা কেউ জড়িত থাকার কথা নয়। মাইক বাজিয়ে এসে অতর্কিতভাবে ইসলামী ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা আমাদের মাদ্রাসায় হামলা চালায়। তিনি বিষয়টি তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। ইসলামী ফ্রন্ট ফটিকছড়ি দক্ষিণ শাখার সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের যাত্রাপথে মাদ্রাসা এলাকায় পৌঁছালে গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারে। বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে নানুপুর মাদরাসার আরেক শিক্ষক মাওলানা আবদুর রহমান জানান, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। আসলে ফারুকী হত্যার কারণে মাদরাসার সামনে এসে অযথাই ওরা ওহাবি নিপাত যাক ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিল। এ সময় ছাত্ররা তাদের এমন স্লোগান দিতে নিষেধ করলে তারা খিপ্র হয়ে হামলা করতে আসে। ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ইউসুফ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। এখনো ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। মামলা দিলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আরআর