মাহিন মাহমুদ; ওমান থেকে
ওমানের সালালাহ। খুবই সুন্দর এবং মনোরম একটি এলাকা। মাস্কাট থেকে বাসে পুরো একদিনের পথ। ভাড়া মাস্কাট থেকে পাঁচ রিয়াল। বাংলাদেশের মুদ্রায় এক হাজার টাকা। দিনে দু'টা বাস যাতায়াত করে সালালায়। একটা খুব ভোরে, অন্যটা ভর সন্ধ্যায়।
কী আছে সালালায়? হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালামের নাম শোনেনি এমন কেউ নেই। দীর্ঘ আঠার বছর পোকা-মাকড়ের জ্বালা সয়েছিলেন তিনি। অসুস্থ নবীকে তার অন্যান্য স্ত্রীরা ফেলে চলে গেলেও, একমাত্র বিবি রহিমা তার সেবা করেন। আনুগত্য এবং ভালোবাসা দিয়ে সুস্থ্ করে তোলেন প্রিয় স্বামীকে।
ওমানে দু'জন নবীর কবর আছে। একজন হলেন নবী আইয়ূব। অপর জন নবী ইমরান আলাইহিস সালাম। ইমরান আ. প্রায় ষাট হাত লম্বা ছিলেন। তার কবরটি দেখলেই এর ধারণা পাওয়া যায়। এত লম্বা নবী ছিলেন তিনি? এমনই প্রশ্ন সহজেই চলে আসে দর্শনার্থীদের মনে। বিশ্বের বহু দেশ থেকে লাখ লাখ দর্শনার্থী ভিড় করেন, আল্লাহর এই দুই প্রিয় মানবের মাজার দেখতে। মুসলমানরাতো আছেনই, অনেক অমুসলমানরাও ছুটে আসেন এই পূণ্যভূমিতে। তাদের ধারণা, এতে করে ইশ্বরের কৃপা লাভ করা যাবে। তবে, অনেক মুসলমানকে কবরগুলোতে সিজদা দিতেও দেখা যায়, যা সম্পূর্ণই হারাম একটি কাজ।
আরবের অন্যান্য দেশগুলোতে কবরপূজা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হলেও, এখানে তেমন কোন নিষেধাজ্ঞা লক্ষ্য করা যায় না। নিষেধাজ্ঞা নেই মহিলাদের প্রবেশেও। এছাড়াও সালালায় দেখার মত আছে চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য।
ওমানের প্রায় পুরোটাই মরুভূমি আর পাথরের দেশ হলেও, সালালাহ যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন। সবুজ, শ্যামল, সুজলা, সুফলা। যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মতই বিভিন্ন ফল-ফসল, তরি-তরকারি উৎপন্ন হয় এই এলাকায়। এখানকার ফসলাদিই দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যায় গাড়িতে করে। আর এই উৎপাদনের পিছনেও বাঙালি শ্রমিকদেরই অবদান বেশি। তারাই দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করে ফল ও ফসলের বাগান গড়ে তুলেছেন এখানে। ওমানের অন্যান্য স্থানে বছরে একবারও বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায় না।
কিন্তু সালালাহ সম্পূর্ণ আলাদা। সবসময়ই বৃষ্টি থাকে। আকাশ কালো করে যখন তখন নেমে যায় রহমতের বারিধারা। আছে সমুদ্র সৈকত, পাহাড় ইত্যাদি সহ আরও অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। সুতরাং প্রবাসি বাঙালিরাও বসে থাকেন না। ঈদের ছুটি কিংবা যে কোন ছুটির দিনে সুযোগ পেলেই ছুটে যান প্রাকর্তিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি এবং পুণ্যভূমি হিসেবে খ্যাত এই সালালায়। আপনিও ঘুরে যেতে পারেন সময় করে।
আরআর