আব্দুল্লাহ বিন রফিক; আওয়ার ইসলাম
ইসলামের ইতিহাসে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় মসজিদের কথা কমবেশি আমরা সবাই জানি। কাবা প্রথম, দ্বিতীয় মসজিদে নববী আর তৃতীয় মসজিদুল আকসা। কিন্তু চতুর্থ মসজিদের কথা? খুব কম মানুষের মুখেই এর নাম শোনা যায় তাই না? আজকের আয়োজনটা এ মসজিদ নিয়েই।
ইসলামের ইতিহাসে কোন মসজিদটা চতুর্থ মসজিদের মর্যাদা পেয়েছে? বলার পর নিশ্চই জানতে খুব ইচ্ছে করে? বলছি। মিশরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে যে মসজিদ ইসলামের ইতিহাসে সেটিই চতুর্থ মসজিদের মর্যাদা লাভ করেছে। মসজিদে আমর ইবনুল আস। মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতাও পূণ্যাত্মা সজ্জন সাহাবী আমর ইবনুল আস রা. নিজেই। হযরত আমর ইবনুল আস সর্বপ্রথম মিশরে আসেন খ্রিষ্টীয় ৬৩৯ সাল মোতাবেক ২১ হিজরিতে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আমর ইবনুল আস রা.-কে প্রথমে জর্দানের রাজধানী আম্মানে পাঠান। হজরত আবু বকর রা. তাঁকে পরে সিরিয়ায় স্থানান্তর করেন।
সিরিয়ার শামে থেকেই ইসলামের পক্ষে সিরিয়ার বিজয়-পতাকা ছিনিয়ে আনেন। এরপর খলীফা হযরত ওমর রা.-এর শাসনামলে তাঁকে পাঠান হয় ফিলিস্তিনে। হযরত আমর ইবনুল আস রাফা সীমান্ত হয়ে তিনি ফিলিস্তিনে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে ৬৩৯ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ২১ হিজরিতে আবার এই রাফা সীমান্ত ধরেই তিনি মিশর পারি দেন । মিশরে এসে ২২ ও ২৩ হিজরির দিকে তিনি মিশরের প্রাণকেন্দ্র নির্বাচন করেন। ফুসতাতকে ঘোষণা করেন মিশরের রাজধানী এবং রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এখানে যে মসজিদটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন এটিই মসজিদে আমর ইবনুল নামে পরিচিত।
আমর মসজিদ নামেও এর বেশ পরিচিতি আছে। এখনও মসজিদটি এই ফুসতাত অঞ্চলেই বিদ্যমান। এই মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে জনশ্রুতি আছে, হজরত ওমর রা.-এর আদেশে যখন আমর ইবনুল আস মিশরের তৎকালীন রাজধানী আলেকজান্দ্রিয়ায় আক্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন তখন আক্রমণের পূর্বে তিনি নীলনদের পূবপাশে শিবির স্থাপন করেন। এক পাখি তার তাবুতে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। তাই তিনি তাবু গুটিয়ে নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। বিজয় অর্জনের পর নতুন রাজধানী স্থাপনের প্রয়োজন দেখা দেয় তখন তিনি সেই স্থানেই রাজধানী করেন এবং সে স্থানটিতেই মসজিদে আমর নির্মাণ করেন। তবে কালচক্রে বিভিন্ন ধাপে ধাপে এর মাঝে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
প্রথম যখন এটা নির্মাণ করা হয়েছিলো তখন এটি ছিলো আয়তাকার। দৈর্ঘ্যে ছিলো ২৯ মিটার এবং প্রস্থে ১২০ মিটার। ছাদ ছিলো নিচু। এটি নির্মাণে পাম গাছের খুটি, পাথর ও ইটে মাটির ব্যবহার করা হয়। ছাদ ছিলো পাম গাছে আচ্ছাদিত। মেঝে ছিলো পাথরের। হজরত আমরের সেনাবাহিনী নামায পড়ার মতো যথেষ্ট জায়গা ছিলো সে মসজিদে। মসজিদের কোনো মিনার ছিলো না। পরবর্তীতে বিভিন্ন শাসক এসে এর সম্প্রসারণ ঘটান।
৬৭৩ খ্রিষ্টাব্দে গভর্নর মাসলামা ইবনে মুখাল্লাদ আল-আনসারী মসজিদটি পূণর্ণির্মাণ করেন। এ সময় মসজিদের চারকোণে চারটি মিনার সংযুক্ত করা হয় এবং মসজিদকে করা হয় আরও দ্বিগুণ।
৬৯৮ খ্রিষ্টাব্দে খলীফা আব্দুল আজিজ বিন মারওয়ান মসজিদের আরও সংস্কার করেন। ৭১১ তে যুক্ত করা আরও কয়েকটি মেহরাব। ৮২৭ খ্রিষ্টাব্দে খলীফা আব্দুল্লাহ বিন তাহিরের সম্প্রসারণের ফলে মসজিদ বর্তমান আকারে এসে দাঁড়ায়। এরপর আব্বাসীয় খলীফা মামুন, ফাতেমীয় খলীফা আল-মুনতাসির বিল্লাহ ও সালাহুদ্দীন আইয়ূবী রহ.ও এই মসজিদের অবকাঠামোতে ব্যাপক সংস্কার এনেছিলেন। ১৮৭৫ সালে মসজিদটি আবারও সংস্কার করা হয়। ১৯৮০ সালে মসজিদের প্রবেশপথ দৃষ্টিনন্দন সজ্জায় নির্মাণ করা হয়।
আরআর