মীর মোঃ নুরুল করিম: সংস্কার ও র্পযাপ্ত তদারকির অভাবে চাঁদগাজী ভূঁঞা মসজিদ নামক তিনশ বছরের পুরনো মসজিদটি বিলুপ্তির পথে। সংস্কারের অভাবের কথা স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিকট একাধিকবার অবহিত করার পরও কোন সুফল পাননি বলে অভিযোগ করেন স্হানীয় লোকজন ও মুসল্লিরা।
ইতিহাস বলে, ১১২২ বঙ্গাব্দে ২৮ শতক জায়গার উপর একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ স্থাপন করেন চাঁদগাজী ভূঁঞা নামক এক প্রভাবশালী জমিদার। ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার অদূরের মহামায়া ইউনিয়নে অবস্হিত মসজিদটির পূর্ব নাম চাঁদ খাঁ মসজিদ। ৪৮ ফুট দৈর্ঘ ও ২৪ ফুট প্রস্হ্য এই মসজিদটি নির্মান করতে ব্যবহার করেন ইট ও চূর্কি। ৩৫ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন মসজিদটির দেয়ালে করা হয়েছে নানান দৃষ্টিকর্ষিত কারুকার্য।
মসজিদটির ছাদে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন তিনটি গম্বুজ, যা মসজিদটির সৌন্দর্যকে বহূগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য কারুকার্য খচিত কাঠের দরজা ক্ষতিগ্রস্হ হয়ে যাওয়ায় নতুন তিনটি দরজা স্হাপন করা হয়। মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে প্রাচীন ঐতিহাসের সকল চিহ্ন। নির্মানের সময় এলাকায় স্বাদু পানির প্রয়োজন মেটাতে ১৮ শতক জায়গা নিয়ে একটি সুবিশাল দিঘী খনন করা হয়। স্বচ্ছ জলের এই দিঘীটির কারনে মসজিদের পরিবেশ আরো দৃষ্টিনন্দিত হয় এবং মসজিদের আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পেয়েছে নতুন মাত্রা।
প্রাচীন দৃষ্টিনন্দন এই স্হাপত্যটি সংস্কারের অভাবে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। সংস্কার ও তদারকির অভাবে দেখা দিয়েছে মসজিদের দেয়ালে ছোট-বড় ফাটল এবং খসে পড়ছে পালেস্তাগুলো। সামান্য বৃষ্টি হলেই মসজিদের ছাদ চুইয়ে পানি ভেতরে আসে বলে অভিযোগ করেন মুসল্লিরা। স্হানীয়রা জানান- যে কোন সময় যে কোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৯২ সালে প্রাচীন স্হাপত্য হিসেবে সংস্কারের জন্য ৩লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন বাংলাদেশ সরকারের প্রত্মতাত্ত্বিক বিভাগ। অর্থ সল্পতার কারনে মসজিদটির সংস্কারের কাজ পুরোপুরি ভাবে সম্পন্ন হয়নি। ফলে যে কোন মূহুর্তে মসজিদের ছাদসহ অন্যান্য অংশ ধসে পড়তে পারে।
প্রাচীন এই মসজিদটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় শিক্ষালয়। মসজিদটিতে বর্তমানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুম্মার নামাজ ও ঈদের নামাজ আদায় করা হয। মসজিদ প্রাঙ্গনের উত্তর পাশ্বের্ ’দারুল কোরআন চাঁদগাজী’ ও দক্ষিনে ’চাঁদগাজী তালিমুল কোরআন নূরানী মাদ্রাসা’ নামক দুটি মাদ্রাসা রয়েছে। সেখানে প্রায় তিনশ’র অধিক ছাত্র-ছাত্রী ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহন করেন। এছাড়া চাঁদগাজী ভ’ঁঞার নামানুসারে মসজিদটির অদূরে প্রতিষ্ঠিত হয়- বাজার, স্কুল, কলেজ, ইসলামিক পাঠাগার সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সংস্কার ও পর্যাপ্ত তদারকির অভাবে ফেনী জেলার এই অসামান্য ঐতিহ্যবাহী স্হাপত্যটি ধ্বংসের পথে। আর এই ঐতিহ্যবাহী স্হাপত্যটি রক্ষা করা যেন সকলের প্রাণের দাবী।
চাঁদগাজী ভূঁঞার সপ্তম বংশধর মুফতি আব্দুল গণি বলেন-’মসজিদের ভবন সম্পর্কিত নানান ভয়-ভীতি নিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন মুসল্লিরা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি সংস্কার করা জরুরি।’ ঐতিহ্যের এই মসজিদটি সম্পর্কে মহামায়া গণ পাঠাগারের সভাপতি মোঃ ইউনুছ খান বলেন- ‘মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্হান থেকে লোকজন আসেন। মসজিদটি সংস্কারের অভাবে নিজের সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে, হারাচ্ছে নিজের অস্তিস্ত¡। আমাদের এই ঐতিহ্য রক্ষার্থে সবার এগিয়ে আসা জরুরি।