১২ জুলাই এক বিবৃতিতে দৈনিক জনকণ্ঠে ১১ জুলাই প্রকাশিত ‘নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে বেশ কিছু মসজিদ মাদ্রাসার ওপর’ শিরোনামের সংবাদে হাটহাজারী মাদ্রাসাকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
তিনি বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা সম্পর্কে দৈনিক জনকণ্ঠের মিথ্যাচারিতা হতভম্ব হওয়ার মতো। জনকণ্ঠের সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অনেক মাদ্রাসায় জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। মাদ্রাসায় সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায় না। এ জন্য মাদ্রাসাগুলোতে জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।’ তিনি বলেন, এই বক্তব্য নির্জলা মিথ্যাচার, উস্কানীমূলক এবং মাদ্রাসা তথা ইসলামি শিক্ষার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। যেখানে সম্প্রতি বিভিন্ন সন্ত্রাসী তৎপরতায় ধনী পরিবারের সন্তান ও দেশের অভিজাত বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নাম ধারাবাহিকভাবে আসছে, সেখানে জনকণ্ঠের মাদ্রাসা বিরোধী মিথ্যা প্রচারণা যে ইসলাম ও শান্তি বিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ, তা বুঝতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, প্রকাশনার শুরু থেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে দৈনিক জনকণ্ঠের হলুদ সাংবাদিকতা ও মিথ্যাচারিতা সম্পর্কে দেশের সকলেই অবগত আছেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে নানাভাবে বারংবার আঘাত হেনে মুসলমানদের বিক্ষুব্ধ করে চরমপন্থা ও জঙ্গীবাদের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্যে পত্রিকাটি শুরু থেকেই গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু তাদের সেই পাতা ফাঁদে আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতা কখনো পা দেয়নি। একের পর এক মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক নিউজ করে পত্রিকাটি বার বার দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের অপচেষ্টা করেই চলেছে। হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ১১৭ বছরের ইতিহাসে প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাসে কোন বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার তো প্রশ্নই ওঠে না, এমনকি কোন ফটকাবাজির মতো ক্রীড়ামোদের নজিরও কেউ দেখাতে পারবে না।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, ‘কবে কোন তারিখে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসায় বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার তথ্য ও দলীল উপস্থাপন করে প্রমাণ করুন।’ তিনি বলেন, সরকার ও প্রশাসনকে মাদ্রাসার বিরুদ্ধে উস্কানী দিয়ে সংশ্লিষ্ট সংবাদে দৈনিক জনকণ্ঠ আরো লিখেছে, ‘অনেক মাদ্রাসায় জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে।’ তারপর লিখেছে, ‘মাদ্রাসায় সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায় না। এ জন্য মাদ্রাসাগুলোতে জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।’ তিনি এই অপপ্রচারেরও তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, দেশের মাদ্রাসাসমূহে জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না, বরং সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, চুরি-ডাকাতি, নারী নির্যাতন, খুন, গুম, অপহরণসহ সকল প্রকার জুলুম-অত্যাচার ও অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করে ছাত্রদের আদর্শ মুসলিম ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, দেশের সকল ক্বওমি মাদ্রাসার কার্যক্রম প্রকাশ্যেই পরিচালিত হয়। অনেক স্কুল-কলেজের মতো দেশের যে কোন ক্বওমি মাদ্রাসার ক্যাম্পাসে প্রবেশে কোন বিধিনিষেধ নেই। যে কেউ যে কোন সময় বিনানোটিশে কওমি মাদ্রাসাসমূহ ঘুরেফিরে শিক্ষাকার্যক্রমসহ সবকিছু দেখতে পারেন। কওমি মাদ্রাসাসমূহের মসজিদে প্রতিদিন সর্বস্তরের মানুষ জামাতে শরীক হয়ে নামায আদায় করেন।
আল্লামা আহমদ শফী দৈনিক জনকণ্ঠ সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা ও মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মিথ্যা নিউজের জন্যে স্পষ্ট ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের বিষয় উল্লেখ করে পত্রিকাটি বর্জনের ডাক দেয়ার কথা বলেন।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর