ডেস্ক রিপোর্ট : সপ্তম শ্রেণির ক্লাসঘরে ঢুকে প্রশাসনের কর্তা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘বল তো, আমাদের দেশের নাম কী?’’ উত্তর শুনে থ পরিদর্শকেরা। বর্ধমানের কাশিয়ারা-রাইপুর হাইস্কুলের ওই ছাত্র সটান বলে দিল, ‘‘বাংলাদেশ!’’ কয়েক জন ছাত্র জানাল, উত্তর জানা নেই। যা দেখে স্কুল পরিদর্শনে বেরনো জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের প্রতিক্রিয়া, হাঁড়ির একটি চাল টিপলে যেমন ভাত বোঝা যায়, এই উত্তর থেকেই স্পষ্ট, শিক্ষায় গোড়ায় গলদ ঠিক কতটা।
বিহারে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কলা বিভাগে প্রথম হওয়া ছাত্রী রুবি রায় এক সাক্ষাৎকারে পলিটিক্যাল সায়েন্সকে ‘প্রডিক্যাল সায়েন্স’ বলার পরে সাড়া পড়েছে সেখানকার পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে। ওই ছাত্রীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যের হাল নিয়েও যে প্রশ্ন থাকছে, সোমবার বর্ধমানের কয়েকটি স্কুলে পরিদর্শনে উঠে আসা চিত্র থেকেই তা পরিষ্কার।
স্কুলের সমস্যা, পড়াশোনার মান খতিয়ে দেখতে আচমকা স্কুলে হানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্ধমান জেলা প্রশাসন। জেলাশাসককে মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে ‘মনিটরিং কমিটি’। মাসখানেক ধরে নানা স্কুলে যাচ্ছেন কমিটি সদস্যেরা। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন এ দিনই প্রথম পরিদর্শনে যান। সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের সভাপতি অচিন্ত্য চক্রবর্তী ও জেলা পরিকল্পনা আধিকারিক (সর্বশিক্ষা অভিযান) শারদ্বতী চৌধুরী।
এ দিন প্রথমে মেমারির কুচুট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় দলটি। সেখানে চতুর্থ শ্রেণিতে ঢুকে তাঁরা পড়ুয়াদের ‘আই লিভ ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’ লিখে দেখাতে বলেন। কিছু পড়ুয়া ‘আই লিভ ইন’ পর্যন্ত পারলেও কেউ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ লিখে উঠতে পারেনি। পাশের হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বই দেখে ইংরেজি ‘রিডিং’ পড়তে বলা হলে সে পারেনি। কর্তারা ক্লাসের শিক্ষককেই ‘রিডিং’ পড়ে দেখিয়ে দিতে বলেন। তাঁর উচ্চারণ শুনেও বিরক্ত হন তাঁরা। কাশিয়ারা-রাইপুর হাইস্কুল ও আউশা প্রাথমিক স্কুলে যান জেলাশাসক। আউশার স্কুলটিতে দেশের রাজধানী জানতে চাইলে এক পড়ুয়া জানায়, ‘ঢাকা’। পরে অচিন্ত্যবাবু বলেন, ‘‘আমাদের কমিটি প্রায় দেড়শো স্কুল ঘুরে রিপোর্ট তৈরি করছে। বুধবার সেই রিপোর্ট দেখে শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হবে।’’ শারদ্বতীদেবী জানান, এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষা দফতর। শিক্ষকের গাফিলতি পেলে ব্যবস্থাও নিতে বলা হয়েছে। এ দিনই এক প্রধান শিক্ষক ও এক শিক্ষককে নিয়ম ভেঙে ছুটি নেওয়ার জন্য শো-কজ করা হয়। টিফিনের পরে স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়ায় শো-কজ করা হয়েছে আর এক প্রধান শিক্ষককে। পড়ুয়াদের আরও বেশি স্কুলে আনতে পার্শ্ব শিক্ষকদের সপ্তাহে অন্তত এক দিন বাড়ি-বাড়ি যেতে বলা হবে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা