ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ : কওমি মাদরাসার ছাত্র রাশেদ। শরহে বেকায়া জামাতের ছাত্র ছিল। ছাত্র হিসাবেও সে বেশ মেধাবী। দুই মাস পরিশ্রম করে রজব মাসে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) এ মুতাওয়াসসিতা জামাতে পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার ফলাফলও ভালো হবে আশা করছে। রাশেদ হিফজ পড়তে পারেনি। আবার মাদরাসার কেন্দ্রীয় পরীক্ষার পরে কোন কোর্সেও ভর্তি হয়নি। ফলে রাশেদের দিন কাটছে অনেকটাই অবহেলায়।
আমাদের সমাজে এটা শুধু একটা রাশেদের গল্প না। এমন অবহেলায় সময় কাটছে আরো অনেকের। রমজান মাসের আগে বেফাক পরীক্ষা শেষ হয়ে মাদরাসাগুলো দীর্ঘ দিনের ছুটি হয়ে যায়। যার ফলে অনেকেই রমজান মাসটা নিজের মত করে কাটাতে চায়। অথচ রমজান মাস হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসে কুরআন কারীম নাজিল হয়েছে। এ মাসে এমন একটি রাত আছে যে রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। তাই এই মাসের গুরুত্ব অন্যান্য মাসের চেয়ে অনেক গুণ বেশি।
একজন মাদরাসায় পড়ুয়া ছাত্র হিসেবে এই পবিত্র মাসকে যতটা গুরুত্ব দেয়ার কথা, সরেজমিনে দেখা গেছে অনেকেই সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং অনেকটা হেলায়-খেলায় কাটিয়ে দিচ্ছে এই গুরুত্বপূর্ণ মাসটা। আবার দীর্ঘ দিন ছুটি কাটানোর কারণে রমজানের পরে মাদরাসায় এসে পড়ায় মন দিতেও অনেক সময় পার হয়ে যায়।
[caption id="attachment_4015" align="alignright" width="160"] মুফতি মাহফুজুল হক বলেন, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ গায়রে হাফেজ ছাত্রদের কুরআন হেফজ করার প্রতি বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে। তাহলে দেখা যাবে একটি ছেলে কয়েক রমজানে যদি একটু একটু করে কুরআন মুখস্থ করে তাহলে দেখা যাবে এক সময় কুরআনের অনেক অংশ তার মুখস্থ হয়ে যাবে।[/caption]
বিভিন্ন অভিভাকদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলে জানা যায়, তারাও এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত। এই গুরুত্বপূর্ণ মাসটা একজন মাদরাসা পড়ুয়ারা গুরুত্বহীনভাবে কাটাবে এটা তারা মেনে নিতে পারছেন না। তারা এই বিষয়ের প্রতি মাদরাসার কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টি কামনা করেন।
অভিভাবকরা আরো জানান, একজন ছাত্রের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অবশ্যই ছুটির প্রয়োজন আছে। কিন্তু রমজানে এই ছুটি হওয়ার কারণে তারা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িও যেতে পারছে না। তাই দীর্ঘ দিন গ্রামে বা বাড়িতে থাকার কারণে তারা অনেক সময় বখাটে ছেলেদের সাথেও চলা-ফেলা করে। এটা একজন ছাত্রের জন্য কখনো শুভকর নয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদাবাদ মাদরাসার এক ছাত্র আব্দুল্লাহ মাহমুদ বলেন, আমরা আসলে অবহেলায় সময় কাটাচ্ছি বিষয়টা এমন নয়। বরং আমরা সমাজের সাধারণ মানুষের সাথে মেশার চেষ্টা করছি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে সারা বছর আমরা সমাজের মানুষের মাথে চলার সুযোগ পাইনা। এছাড়া আরেকটি বিষয় হলো বর্তমান দুনিয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য আমাদের অনেক কিছু জানা প্রয়োজন। সারা বছর মাদরাসায় থাকার কারণে দেখা যায় আমরা অনেক কিছুই জানি না। এমন কি আমরা কী শিখবো, কী জানবো তাও জানি না। তাই এ ছুটির মাসে সাধারণ মানুষের মাথে চলাফেলা করছি।
বিষয়টি নিয়ে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার পিন্সিপাল মুফতি মাহফুজুল হক আওয়ার ইসলামকে বলেন, এখন তো অনেক মাদরাসাতে বিভিন্ন প্রকর কোর্স হয়, সুতরাং এসব কোর্সে ছাত্রদের ভর্তি হওয়ার জন্য বেশি বেশি উৎসাহ দেয়া যেতে পারে। এছাড়াও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ গায়রে হাফেজ ছাত্রদের কুরআন হেফজ করার প্রতি বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে। তাহলে দেখা যাবে একটি ছেলে কয়েক রমজানে যদি একটু একটু করে কুরআন মুখস্থ করে তাহলে দেখা যাবে এক সময় কুরআনের অনেক অংশ তার মুখস্থ হয়ে যাবে।
[caption id="attachment_4016" align="alignright" width="159"] মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ বলেন, বেফাকের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ধরনের কোর্সের ব্যবস্থা থাকতে পারে। বিশেষত ভাষা ও সাহিত্যের উপর, কেননা মাদরাসার ছাত্ররা ভাষা ও সাহিতের বিষয়ে দুর্বল। এক্ষেত্রে শুধু বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে না থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের উপরও কোর্স হতে পারে।[/caption]
জামিয়া সাঈদীয়া কারিমীয়া মাদরাসার পিন্সিপাল মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ। টেলিফোনে তার সাথে কথা বললে আওয়ার ইসলামকে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে প্রধান দায়িত্ব হলো বেফাকের। বেফাকের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ধরনের কোর্সের ব্যবস্থা থাকতে পারে। বিশেষত ভাষা ও সাহিত্যের উপর, কেননা মাদরাসার ছাত্ররা ভাষা ও সাহিতের বিষয়ে দুর্বল। এক্ষেত্রে শুধু বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে না থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের উপরও কোর্স হতে পারে।
বেফাক আরো একটি কাজ করতে পারে তা হলো বেফাকের অধীনে যতগুলো মাদরাসা আছে এই রমজান মাসে সেগুলোর ভর্তির কার্যক্রম শেষ করে ফেলার এবং শাওয়াল মাসের সাত তারিখ থেকে দরস ও তাদরীস শুরু করার বিষয়টা বাধ্যকতা করে দিলে ছাত্রদের সময় অনেক কম নষ্ট হবে।
মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেন। বলেন, ছাত্ররা কোন কোর্সে ভর্তি না হয়ে দুটি কাজ করতে পারে: ১. সারা বছর যে কিতাব পড়েছে তার দুর্বল অংশগুলো এই রমজানে মুতা‘আলা করতে পারে ২. আগামী বছর যে কিতাব পড়বে সেই কিতাবগুলো মুতা‘আলা করতে পারে। বিশেষ করে প্রত্যেক কিতাবের মুকাদ্দামাগুলো পড়তে পারে। এই কাজগুলো করলে কিতাবী যোগ্যতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।
অবশ্য হাফেজ ছাত্ররা ব্যতিক্রম। তারা এই মাসটা ইবাদত বন্দেগিতেই কাটাচ্ছে। রমজানকে কেন্দ্র করে হাফেজরা বিভিন্ন মসজিদের হাফেজ সাহেব হিসাবে নিযুক্ত হয়েছে। অনেকে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজসহ তারাবির নামাজ পড়াচ্ছে। তাই তাদের রমজান ভালোই কাটছে।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর