[caption id="attachment_3648" align="alignleft" width="498"] ফ্রান্সের মুসলিমরা রাস্তার সময়ও নষ্ট করেন না। পকেটে রাখা ছোট্ট কুরআন খুলে রাস্তাতেই পড়তে থাকেন...[/caption]
ফাহিম বদরুল হাসান; ফ্রান্স থেকে : প্রায়ই জিজ্ঞাসিত হই, ফ্রান্সে কি নামাজ পড়া যায়? মসজিদ আছে কি, মুসলিম নারীরা পর্দা করতে পরেন, রোজা কি রাখা যায় ইত্যাদি।
আসলে প্রশ্নগুলো অযৌক্তিক নয়। কারণ, ফ্রান্সের ইসলাম এবং মুসলিম বিষয়ে বিশ্ব-সাহিত্য কিংবা গণমাধ্যম সর্বদা একটু বেশি হলুদ রাঙ দিয়েছে। সাদাকে আকাশি বলা তো দূরে থাক, উল্টো কালো বলে রটিয়েছে। যুগ যুগ ধরে। ফ্রান্সকে ইসলাম এবং মুসলিমদের জন্য ইউরোপের ইসরাইলের রূপ দেয়া হয়েছে। যেমন বহির্বিশ্বে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, ফ্রান্সে হিজাব নিষিদ্ধ। অথচ, এটি সম্পূর্ণ অসত্য। হ্যাঁ, নিকাব নিষিদ্ধ ছিল, যদিও এখন অনেকেই পরেন। শিথিলতা বুঝাই যায়।
এই শিথিলতা হবেই বা না কেন, আইন তো নাগরিকদের জন্য। যেখানে মুসলমানদের সংখ্যা অফিসিয়াললি দশ শতাংশের অধিক (যদিও পনের শতাংশের বেশি বলে ধারণা), সেখানে মুসলমানদের মূল্যবোধকে মূল্যায়ন করাই মানবতা।
ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সের মুসলমানরাই সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী এবং প্রভাব বিস্তারকারী। রামাজান দিয়ে যদি উদাহরণ দেয়া যায়। এখানে রাত সাড়ে তিনটা থেকে পরদিন বিকাল দশটা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আঠারো ঘন্টা রোজা। সাড়ে এগারোটায় ইশার নামাজ শুরু হয়ে তারাবিহ শেষ করতে করতে রাত প্রায় একটা বাজে। আবার তিনটায় তাহাজ্জুদের জামাত। দীর্ঘ রোজা রেখে শত শত মানুষ তারাবিহ এবং তাহাজ্জুদে মসজিদে হাজির!
রাত আটটায় নিদ্রা-যাওয়া দেশটির এ মাসের রাত্রি একটু ব্যতিক্রম তথা নির্ঘুম- যা প্রশাসন পর্যন্ত নাড়া দিয়ে যায়। দিনের বেলায় রেস্টুরেন্ট, কফি শপ, সুপার মার্কেটগুলোতে কেমন যেন খা খা করে। বিশেষত প্যারিসের পরিবেশ অনেকটাই বদলে যায়। যেন সবাই মুসলিম। দেশটাও মুসলিম।
রামাজানের আরেকটু প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে গত দু বছর থেকে। ফ্রান্সে বিশাল আকারে বাৎসরিক দুটো ‘বিশেষ মূল্যছাড় (soldes)" থাকে, যার জন্য মানুষ অনেক আগে থেকে বাজেট রেডি করে মুখিয়ে থাকে। তখন মার্কেটগুলোর অবস্থা থাকে, বাংলাদেশের ঈদের বাজারের মত উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু, দুবছর ধরে ছাড়টা রমজানে পড়ে যাওয়াতে মার্কেটগুলোর অবস্থা কোরবানির ঈদের দিনে মাছবাজারের মতো।
[caption id="attachment_3646" align="alignnone" width="833"] ইফতারের আগে মুনাজাতরত ফ্রান্সের মুসলিমরা[/caption]
রমজানে ফ্রান্সে বেড়াতে এলে আরো কিছু বিষয় আপনাকে চমকে দেবে। যেমন- বাসে ট্রেনে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত। বাসের জন্য অপেক্ষা করছে, কিংবা ট্রেনে বসে আছে কেউ, দেখবেন- ব্যাগ থেকে কুরআন বের করে ডুবে গেছে। নামাজের সময় হয়েছে, আপনি ট্রেনে। দু-চারটা মোবাইল থেকে ‘আল্লাহু আকবার’ আওয়াজ আপনাকে ফ্রান্সে মুসলিমদের অবস্থান মনে করিয়ে দেবেই। এভাবেই দিন দিন এগিয়ে চলছে দীন।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর