স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাতে একলক্ষ আলেম-ওলামার স্বাক্ষরে যে ফতোয়া ঘোষণা করা হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামি ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ইসলামি আইনে বিশেষজ্ঞ মুফতিরাই শুধু একমাত্র ফতোয়া ঘোষণা করতে পারেন। এক লাখ স্বাক্ষরকারী একটি বড় অংশ মুফতি না হওয়ায় এই ফতোয়া গ্রহণযোগ্য হবে না। (বিবিসি বাংলা)
মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, মতামতগুলি যে প্রক্রিয়ায় নেওয়ার কথা ছিল, সেই প্রক্রিয়ায় নেওয়া হয়নি। যে অর্থে ফতোয়া বলা হয় সে অর্থে এটি ফতোয়া হিসেবে স্বীকৃত এবং গ্রহণযোগ্য হবে না। যেসব মানুষের একলক্ষ স্বাক্ষর নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে তারা প্রত্যেকে মুফতি কি-না এবং তাদের সার্টিফিকেট আছে কি-না সেই ফতোয়া দেওয়া অধিকার রাখেন কি-না সে বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। এখানে শোনা যাচ্ছে কয়েক হাজার মানুষ এক জায়গায় বসে স্বাক্ষর করছে মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে। এটি একটি কৃত্রিম মতামত প্রকাশের ব্যবস্থা হলো কি-না সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
বাংলাদেশে পর পর কয়েকটি গুপ্তহত্যার প্রেক্ষাপটে কয়েকদিন আগে দশটি ফতোয়া জারি করা হয়। ধর্মের নামে মানুষ হত্যাকরীরা জাহান্নামে যাবে এধরনের দশটির মত ফতোয়া ঘোষণা করেছিলেন শোলাকিয়া মসজিদের ইমাম ফরিদউদ্দিন মাসুদ। ফতোয়া প্রণয়নের ক্ষেত্রে সমর্থক হিসেবে একলাখ আলেম ওলামার স্বাক্ষর নেওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং স্বাক্ষর নেওয়ার প্রক্রিয়া চলেছে লম্বা সময় ধরে।
ইসলামী শরিয়ত বা বিধিবিধান সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদেরকেই মুফতি বলা হয়। তারা একমাত্র ফতোয়া দিতে পারেন। এমন বক্তব্যই তুলেছেন মুফতি ফয়জুল্লাহ।
তবে ফতোয়া দেওয়ার ব্যাপারে ২০১১ সালে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছিল তাতে বলা হয় ধর্মীয় বিষয় ফতোয়া দিতে পারবেন যথাযথ শিক্ষিত ব্যক্তিরা। সেখানে বিশেষ কোনা শ্রেণির কথা উল্লেখ করা হয়নি।
কিন্তু ফরিদউদ্দিন মাসঊদের বক্তব্য হচ্ছে, তারা ফতোয়া দেওয়ার জন্য আদালতের রায় অনুসরণ করছেন। তিনি বলেন, যিনি হাদিস এবং কোরআনের বিশেষজ্ঞ তিনিই ফতোয়া দিতে পারেন। কিন্তু ফয়জুল্লাহ যদি মনে করেন নামের আগে মুফতি লাগাতে হবে তাহলে সেটি ঠিক নয়। এই প্রশ্নটি শুধু বিতর্ক সৃষ্টি করে।
ফতোয়া দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুফতি ফয়জুল্লাহ। ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামেরও যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন। এই দুটি সংগঠনের অন্য নেতাদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে তারা সাংগঠনিক ভাবে জঙ্গি বিরোধী ফতোয়া নিয়ে কোনো অবস্থান নেননি। অন্য কোনো ইসলামী সংগঠনও বক্তব্য দেয়নি। তবে দেশের প্রতিটি মাদ্রসায় অন্তত একজন করে মুফতি রয়েছেন এই মুফতিদের অনেকেই জঙ্গি বিরোধী ফতোয়া প্রণয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়া হয়েছে এমন দাবি নিয়েই মুফতি ফয়জুল্লাহ আপত্তি তুলেছেন।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে যে অবস্থান সেটি আমাদের স্পষ্ট এবং পরিষ্কার। সেই জায়গা থেকে আবার নতুন করে মতামত দেওয়ার কি আছে সেটি বুঝতে পারলাম না।
একের পর এক গুপ্তাহত্যার প্রেক্ষাপটে পুলিশ সচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচি নেয় তার অংশ হিসেবেই সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত ফরিদউদ্দিন মাসুদের নেতৃত্বে আলেম ওলামাদের একটি অংশ পুলিশের আইজির সাথে বৈঠক করেছিলেন। এরপর ফতোয়া তৈরির উদ্যোগ তিনি নিয়েছিলেন। ফলে সেখানে একটি রাজনৈতিক বিরোধীতাও রয়েছে। মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক চিন্তা থেকে তাদের উদ্যোগকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /ওএস