শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসানের ইন্তেকালে খেলাফত মজলিসের শোকপ্রকাশ কাল ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে বিএনপি মহাসচিবের শোক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ যেসব সুপারিশ সংস্কার কমিশনের বাংলাদেশিদের সুখবর দিলো ইতালি, পুনরায় ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হাসিনা ও তার দোসরদের পুনর্বাসনে কোনো সাফাই নয়: সারজিস মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে সিলেট মহানগর জমিয়তের শোক পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু দাবি পূরণে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের

বাসায় বাসায় তারাবি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

basai tarabiআহসান শরিফ, ফিচার এডিটর : আমি যদি এ কুরআনকে অবতীর্ণ করতাম কোন পাহাড়ের ওপর, তবে তুমি দেখতে তা আল্লাহর ভয়ে অবনত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এ সব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য এ কারণে বর্ণনা করি, তারা যেন চিন্তা ভাবনা করে। সূরা ৫৯, আয়াত ২১

পবিত্র কুরআনের ফজিলত অন্য সব ধর্মগ্রন্থ থেকে বেশি। কোরআন স্থায়ী, ওগুলো অস্থায়ী। কুরআন অপরিবর্তনশীল। ওগুলো পরিবর্তনকৃত। কেবল কুরআন মাজিদের হেফাজতের দায়িত্বই তো নিয়েছেন আল্লাহ। এ জন্যই তো চৌদ্দশ বছর পরেও পবিত্র কুরআন অবিকৃত। কেয়ামত পর্যন্ত এভাবেই থাকবে এটি। কোন জালেমের জুলুম কুরআনের একটি হরফও হেরফের করতে পারবে না। একবার তো কুরআন শরিফের তিরিশ হাজার কপি একসঙ্গে জালিয়ে দিয়ে শয়তানরা চেয়েছিল আল্লাহর দীন মুছে দিতে, কিন্তু পারেনি। পারবেও না। কাগজের কোরআন মুছতে পারলেও লক্ষ-কোটি হাফেজে কুরআনের হৃদয় থেকে তো আর মুছা যাবে না! এটাই মহান আল্লাহর কারিশমা। কুরআন অবতীর্ণের মধ্য দিয়ে প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তেলাওয়াত শুরু করেছেন। তিনি প্রতি রমজানে হজরত জিব্রাঈলের সঙ্গে এক খতম দাওর করতেন। জিব্রাইল শোনাতেন তাঁকে, তিনি শোনাতেন জিব্রাঈলকে। নবিজির এ আমল উম্মতের কাছে ব্যাপক সমাদৃত। সারা বছর মুমিন তেলাওয়াত করতে না পারলেও রমজানে অবশ্যই করবে। তেলাওয়াত না জানলে হাফেজদের পেছনে দাঁড়িয়ে শুনবে। খতমে তারাবির এ কাজটি এ দেশে মসজিদভিত্তিক হচ্ছে, মুসল্লিদের বড় অংশ মসজিদেই তারাবি পড়ছেন। ব্যবসায়ীদের একটি অংশ মসজিদে পড়ার সুযোগ পান না। তারা বাসায় বা অফিসে খতমে তারাবির ব্যবস্থা রাখেন। এ ছাড়া মসজিদে ব্যাপকহারে মহিলাদের জন্য তারাবির ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই বাসায় তারাবি পড়ছেন। বাসায় তারাবি পড়ানোর সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা হয় কজন হাফেজের সঙ্গে।

হাফেজ মাওলানা মুরাদ হোসাইন। জাঙ্গালিয়া, কালিগঞ্জ, গাজীপুরে তার জন্ম। বাবা ডা. রুহুল আমিন। নরসিংদীর পলাশ চরনগদ্দিবাজার হাফেজিয়া মাদ্রাসায় মামা হাফেজ নেসার আহমদের কাছে তার হিফজ শুরু। শেষ করেন তারা মসজিদে, বিখ্যাত হাফেজ ইউসুফ এর কাছে। মেধাবী এ হাফেজ ক্লাসে প্রথম ছিলেন। ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় তাকমিল সমাপ্ত করে বর্তমানে ইসলামপুরে কাপড়ের ব্যবসা করছেন। দাওরায়ে হাদিস [মাস্টার্স] সমাপ্তির পর দীনের কাজে এক বছরের জন্য তাবলিগে বের হলে তাবলিগের মুরব্বি হাজি সিরাজুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। হাজি সাহেবের অনুরোধে তার পাতলা খান রোডের বাসায় পাঁচ বছর ধরে তারাবি পড়াচ্ছেন হাফেজ মুরাদ। মূলত স্বাধীনতার পর থেকেই এ বাসায় খতমতারাবি পড়ানো হচ্ছে। এর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে হাজি সিরাজ বলেন, ‘পুরুষরা তো মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে, বাসায় থেকে মহিলাদের বেশির ভাগই তারাবি আদায় করে না। এ জন্যই বাবা বাসায় তারাবির ব্যবস্থা করেছেন। পুরুষরা নিচতলায় তারাবি পড়ে, মহিলারা পড়ে দোতলায়। এলাকার প্রায় দুইশ মহিলা এখানে নামাজ আদায় করে।’

হাফেজ মুরাদ বলেন, ‘পনের দিনে আমরা খতম করি। এতে ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা। পরের দিনগুলোতে তারা কম সময়ে সূরা তারাবি আদায় করেন। তা না করলে অনেকেই হয়তো তারাবি পড়তে পারতেন না।’

সম্ভ্রান্ত দীনদার ফ্যামিলির সন্তান হাফেজ আরমান হাবিব। তার বাবা হুমায়ুন কবির দুলাল। সেতুভাঙ্গা, চৌমুহনি, নোয়াখালীতে তার জন্ম। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ২য়। তিনি বর্তমানে হাজারিবাগে আধুনিক কর্মমূখি প্রতিষ্ঠান ‘মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকা’য় শিক্ষা গ্রহণ করছেন। ধানমন্ডির এক বাসায় দশদিনে খতম দিচ্ছেন মেধাবি এ হাফেজ। তিনি বলেন, লোকজন অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরি হলেও তারাবি পড়তে পারছেন। বাসায় ব্যবস্থা না হলে তাদের তারাবি পড়ার সুযোগ হয়তো হত না। এ ছাড়া হাফেজ অনুপাতে মসজিদ হচ্ছে না। বাসায় তারাবি পড়ায় হাফেজদের শোনানোর একটা ব্যবস্থাও হয়।’

হাফেজ ও আলেম পরিবারের সন্তান হাফেজ তলহা আহমাদ খান। বাবা হাফেজ নেসার আহমাদ খান। ফুলদী, কালিগঞ্জ, গাজীপুরে তার জন্ম। পুরো ফ্যামিলিতে প্রায় ২০ জন হাফেজ ও আলেম রয়েছেন। তেজগাঁও নূরানি মাদ্রাসায় তিনি হিফজ সমাপ্ত করেন। মুখে দাড়ি না হওয়ায় বয়স হলেও মসজিদে তারাবি পড়ানোর সুযোগ হচ্ছে না হাফেজ তলহার। তিনি বলেন, ‘ইসলামে ইমামতির বৈধতা দিয়েছে এমন হাফেজদেরও দাড়ি না হওয়ায় তারাবিতে নিতে চায় না। সমাজ নিজেদের মর্জিমাফিক এক ধরনের নিয়ম বানিয়ে নিয়েছে। এটা অন্যায়।’
দশ বা পনের দিনে তারাবি পড়ার সুবিধার সঙ্গে অসুবিধাও আছে। খতম হয়ে গেলে এরপর তারাবি পড়ে না এমন রেকর্ডও কম নয়। তবে নামাজ পড়া সবার দায়িত্ব। অলসতা করে লাভ কী? জীবদ্দশায় অর্জিত নেক আমল ছাড়া কবরে নিয়ে যাওয়ার আরও কি কিছু আছে? তাহলে হাফেজদের তেলাওয়াত শোনানোর ব্যবস্থা বেশি করে নিজেদের আমলের পাল্লা ভারি করলে ক্ষতি কোথায়?

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /এআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ