মুহাম্মাদ শামীম সরকার শাহীন : আধুনিক কাটিং ও কলম পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে গাইবান্ধার কৃষকরা সফলতার মুখ দেখছেন । সারাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ। আর এর পেছনে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম গল্প।
একদিকে সফলতা দেখে যেমন অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে অপরদিকে উদ্ভাবক নজরুল ইসলামের এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ গাইবান্ধা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলাতেও জনপ্রিয় হচ্ছে ।পুরাতন পদ্ধতিতে বাশ লাগানোর পর বাশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিলুপ্ত প্রায় বাঁশ ঝাড় দেখে গাইবান্ধার কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম বাঁশ ঝাড় রক্ষায় চেষ্টা করতে থাকেন । এক পর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে নিরলস গবেষণা শুরু করেন ১৯৬৮ সালে থেকে। প্রথমেই কাটিং পদ্ধতিতে বাশ চাষে করেন কিন্তু কোন ভাবেই এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষের সফলতা আসছিলো না ।
এভাবে প্রতি বছরই গবেষণা করতে থাকেন আর নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করেন ।
কিছুদিন পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দেশস্বাধীন হওয়ার পর আবার শুরু করেন কাটিং পদ্ধতিতে বাশ চাষ করার গবেষণা। তার পরও কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষে কোন ভাবেই সফলতা আসছিল না। বাশের চারাগুলো কিছুদিন পর পর মারা যাচ্ছিলো । তবুও তিনি পিছপা হননি। এভাবেই বিভিন্ন নিয়মে বাশ এর কাটিং পদ্ধতি চালিয়ে যায় । দীর্ঘ ১১ বছর এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষে ব্যর্থ হওয়ার পর ১২ বছরের সফলতার মুখ দেখেন ।
তার পর শুরু করেন এই কলম/কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ । প্রথমে নিজের বাড়িতে পরে গাইবান্ধার অন্তত ২০ গ্রামের ৩০ বিঘা জমিতে কাটিং পদ্ধতিতে বাশ চাষ করেন । এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে খুব অল্প সময়ে বাঁশ ব্যবহার উপযোগী হয়। বিক্রিও করা যায় এবং নিজের কাজেও লাগানো যায়। তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ জনপ্রিয় হলে তার ডাক পড়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ।
নজরুল ইসলামের উদ্যোগে দেশের কয়েকটি জেলায় এ পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করা হয়। সেখানেও তার সফলতা আসে ।এই পদ্ধতি বাঁশ চাষ করেন সাবেক সাঘাটা উপজেলার চেয়্যারম্যান আলতাফ হোসেন সরকার। ২০০৪ সালে তিনি উদ্ভাবক নজরুল ইসলামের পরামর্শে এই কাটিং পদ্ধতিতে ৩ বিঘা জমিতে বাঁশ চাষ লাগান । ২০০৮ সাল থেকে তিনি বাঁশ বিক্রয় ও নিজের প্রয়োজনে কাটতে শুরু করেন । এই বাঁশ ঝাড় থেকে বছরে এক থেকে দেড় লাখ টাকার বাশ বিক্রি করেন। এ পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি করেছেন । আরও প্রায় ২৫ লাখ টাকার বাশ বিক্রির উপযোগি হয়েছে উঠেছে।
বাঁশচাষী আলতাফ হোসেন সরকার জানান, এই পদ্ধতিতে বাঁশচাষ করে অল্প সময়ে বাঁশ বড় এবং মোটা হয়। তাছাড়া অন্য গাছ ও ফসলের চেয়ে অল্প সময়ে এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। এক পর্যায়ে শুধু গাইবান্ধায় নয় দেশের বিভিন্ন জেলায় উদ্ভাবক নজরুল ইসলামের এই বাঁশ চাষের মাধ্যমে তিনি সফলতা এনেছেন । কুমিল্লা, চাদপুর, সিলেট , পঞ্চগড়,নওগা, জেলায় তিনি এই পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করেছেন ।
নজরুল ইসলাম জানান, যতো দিন বেঁচে থকবেন কৃষকের পাশে থাকবেন এবং কৃষকের সাথে কাজ করবেন । দেশের যে কোন জেলার কৃষক চাইলে তার সাথে যোগাযোগ করে এই বাঁশ চাষ করতে পারবেন ।
এই বিষয়ে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, আ ক ম রুহুল আমীন নজরুল ইসলামের বাশ চাষের সফলতার কথা স্বীকার করে বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে তার কাজের উৎসাহ বাড়াতে কৃষকদের মাঝে প্রশিক্ষেণে ব্যবস্থা করা হবে ।