সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

ওরাই সফল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

13453950_1038219166225404_173011923_n copyসাকিব মুস্তানসির : প্রতিবন্ধী শব্দটিতেই কেমন যেন অবজ্ঞা ও অনুকম্পা লুকিয়ে আছে। শব্দটি কানে আসা মাত্রই আমরা ভ্রূ কুঁচকে অবহেলার চোখে দেখি। অনুকম্পায় পাশ কাটিয়ে যাই। একজন মানুষের পরিচয় আসলে মানুষ হিসেবেই। মানুষ কখনো প্রতিবন্ধী হয় না, হতে পারেনা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নানান রূপে রঙে তার সৃষ্টি জগত সাজিয়েছেন। এখানে সবাই সমান। কেউ ছোট নয় কেউ বড় নয়। প্রতিবন্ধীরা আমাদের মতই মানুষ। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় বরং উপযোগী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারাও অন্যান্য সুস্থ স্বাভাবিক মানুষদের মতই পরিবারের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে অবদান রাখতে পারে। এজন্য প্রয়োজন সুযোগ সৃষ্টি করা। কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানা এক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে ৯৬৬ জন শ্রবণ, বাকপ্রতিবন্ধী, বামন ও অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে মানসিক শক্তিদিয়ে পরাজিত করে অর্থনীতির মূল ধারায় নিজেদের যুক্ত করার মাধ্যমে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে চলেছেন এরা। পারিবারিক তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, সামাজিক অবহেলাকে লজ্জা দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নিজেদের প্রতিবন্ধকতাকে পরাজিত করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে রিসিভ এন্ড ডেলিভারি সেকশন, সুইং সেকশন, মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সহ উৎপাদনের অন্যান্য সকল বিভাগে সফলতার সাথে কাজ করে চলেছেন।

গাজীপুরের কোনাবাড়ী থেকে হাতের বাঁয়ে ভাঙাচোরা সড়ক ধরে কয়েক কিলোমিটার এগোলেই জরুন এলাকায় কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানা।তিনশ’ বিঘা জমির ওপর কেয়া গ্রুপের বিরাট চত্বরে কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানাটিই সবচেয়ে বড়। ৯ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট জায়গা। অপর পাশে এক ছাদের নিচে কেয়া কটন মিলস, কেয়া স্পিনিং মিলস ও কেয়া ইয়ার্ন মিলস। মাঝে ৬০ ফুট চওড়া সড়ক। সড়ক বিভাজকের ওপর কাঠবাদাম, কৃষ্ণচূড়া, চেরি ফল ও নারকেলগাছের সারি। কারখানাটিতে গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টি-শার্ট উৎপাদিত হয়। ইউরোপ ও আমেরিকায় কেয়া গ্রুপের নিজস্ব ব্র্যান্ড নামেই এগুলো রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে মাসে প্রায় ৭০ লাখ
মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে কেয়া গ্রুপ। তুলা থেকে সুতা, সেই সুতা থেকে কাপড় তৈরি করে রং করা এবং সবশেষে পোশাক—সবই হয় একই কারখানায়।

[caption id="attachment_1774" align="alignright" width="300"]13444231_1038219159558738_1869406996_n copy ৯৬৬ জন প্রতিবন্ধীকে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার মূল কারিগর কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল খালেক পাঠান।[/caption]

৯৬৬ জন প্রতিবন্ধীকে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার মূল কারিগর কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল খালেক পাঠান। আব্দুল খালেক পাঠান ১৯৭৭ সালে এসএসসি পাস করে গাজীপুরের একটি ইটভাটায় কাজ নেন। কয়েক বছর কাজ করার পর জমি ভাড়া নিয়ে নিজেই ইটভাটা দেন। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন টেক্সটাইল মিল করার। ১৯৯১ সালে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিলেন আবদুল খালেক। গড়লেন খালেক গার্মেন্টস অ্যান্ড নিটিং। পাঁচ বছর পর করলেন কেয়া কসমেটিকস। পরে ৩০০ বিঘা জমির ওপর কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানা। ২০০৩ সালে কারখানাটির উৎপাদন শুরু হয়। তখন আগের পোশাক কারখানাটি বন্ধ করে দেন।

প্রতিবন্ধীদের প্রতি সীমাহীন ভালবাসা আর সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে প্রথম থেকেই নিজের কারখানায় প্রতিবন্ধী শ্রমিক নিয়োগ দিতে শুরু করেন। নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি কাজে লাগিয়ে এদের ট্রেইনাপ করে মূল স্রোতে মিশিয়ে দেন। প্রথম প্রথম সাধারণ শ্রমিকরা এঁদের গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, দুই পক্ষের মাঝে বাকবিতণ্ডা এমন কি মারামারি পর্যন্ত হয়ে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ শ্রমিকরা কারখানা ভাংচুর করার পাশাপাশি কর্মকর্তাদের গায়েও হাত তোলে। তিন মাস উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হন পরিচালক। এত সংকটের মুখেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন আব্দুল খালেক পাঠান। প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের বেতন ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করেন। এক পর্যায়ে সাধারণ শ্রমিকরা তাঁর সাথে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়। তখন থেকে এই বিপুল সংখ্যক প্রতিবন্ধী শ্রমিক নির্বিঘ্নে কাজ করে আসছে।

মানুষ তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রতিবন্ধী হয় না, প্রতিবন্ধী হয় তার বিবেকের ভ্রান্ত ব্যাবহার আর অসুস্থ ক্রিয়াকলাপের কারণে। দ্বীনহীনতা ও কর্মহীনতার কারণে। মানুষ যখন তার সক্ষমতা ভুলে অলস অকর্মণ্য হয়ে পড়ে তখন তার চাইতে বড় প্রতিবন্ধী আর কেউ নয়। প্রতিবন্ধীদের প্রতি ভালোবাসা আর তাদের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার মহৎ উদ্যোগের কারণে আব্দুল খালেক পাঠান সচেতন মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।

আওয়ার ইসলাম ২৪ ডটকম / এফএফ

13453950_1038219166225404_173011923_n copy


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ