ফয়জুল আল আমীন : দিনের পর দিন বৃক্ষ বা গাছ আমাদের জীবন-জীবিকার উপাদান জুুগিয়ে আসছে। আল্লাহ মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থে, মানুষের নান্দনিক চেতনাকে শানিত করার জন্য এবং প্রকৃতির মধ্যে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব অনুধাবন করার জন্য গাছ সৃষ্টি করেছেন। গাছ সৃষ্টির প্রতীক, সৌন্দর্যের প্রতীক। পবিত্র কুরআনে গাছ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তিনিই লতা ও বৃক্ষ উদ্যানগুলো সৃষ্টি করেছেন এবং খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদবিশিষ্ট খাদ্যশস্য, জলপাই বাগিচা সৃষ্টি করেছেন। তারা একে অন্যের সদৃশ এবং বিসদৃশ। যখন গাছ ফলবান হয় তখন গাছের ফল আহার করবে। আর ফসল তোলার দিনে তার দেয় প্রদান করবে এবং অপচয় করবে না।’ সুরা আনআম : ১৪১
গাছগাছালি আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। গাছ থেকে পাওয়া অক্সিজেন আমাদের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। একটি গাছ বছরে প্রায় ১৩ কেজি কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। গাছ প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতীক। শুধু মানুষ কেন, গাছপালা ছাড়া কোনো প্রাণীই জীবন ধারণ করতে পারবে না। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রধানত দায়ী বৃক্ষহীনতা। দিন দিন কমে যাচ্ছে গাছের সংখ্যা। গাছপালার স্বল্পতার কারণে ভূপৃষ্ঠে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ভয়াবহভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
গাছ লাগানো বা বৃক্ষরোপণ সদকায়ে জারিয়া। গাছ মানুষের শান্তি ও মঙ্গলের প্রতীক। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা. সব সময়ই বৃক্ষরোপণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতেন। তিনি গাছের সঠিক পরিচর্যা ও যতœ করার উপদেশ দিতেন। চার খলিফা যথাক্রমে হজরত আবু বকর রা., হজরত ওসমান রা., হজরত ওমর রা. ও হজরত আলী রা. সবাইকে বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করতেন এবং গাছের উপকারিতা বর্ণনা করতেন। পবিত্র কোরআনের ‘সুরা কাফ’ এ মহান আল্লাহপাকের বাণীতে গাছ সৃষ্টির এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার কথা ধ্বনিত হয়েছে, ‘আমি বিস্তৃত করছি ভূমিকে, স্থাপন করছি পর্বতমালা এবং তা হতে উদগত করছি নয়ন প্রীতিকর সব ধরনের উদ্ভিদ। এটি আল্লাহর অনুরাগী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। আকাশ থেকে আমি বর্ষণ করি উপকারী বৃষ্টি এবং এর দ্বারা আমি সৃষ্টি করি উদ্যান, শস্যরাজি ও সমুন্নত খেজুর বৃক্ষ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর। আমার বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ আমি বৃষ্টি দ্বারা সঞ্জীবিত করি মৃত ভূমিকে।’ সুরা কাফ : ৭-১১
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে আজ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। বৃক্ষের মতোই সৃষ্টিজগতের সেবা করতে চায় গণমাধ্যমের এই নতুন মুখ। হে দয়াময় আল্লাহ, আপনি আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সহায় হোন।
বৃক্ষরোপণকে ইসলামে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যে গাছ লাগাবে এবং তা পরিচর্যা করবে, সে অনবরত পুণ্য পেতে থাকবে। মহানবী সা. বৃক্ষের শোভাম-িত সুশোভিত পরিবেশ ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন বৃক্ষপ্রেমী। জীবনে বহুসংখ্যক গাছ তিনি নিজ হাতে রোপণ করেছেন। অসংখ্য হাদিসে তিনি বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করেছেন তাঁর অনুসারীদের। বৃক্ষরোপণকারী মরে যাওয়ার পরও এর সওয়াব অনবরত পেতে থাকবে। নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ করা রাসুলের সুন্নত। মহানবী সা. বলেন, ‘কোনো মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপণ করে কিংবা কোনো ফসল ফলায়, তাহলে ওই বৃক্ষ কিংবা ফসল থেকে জীবজন্তু, পশু-পাখি ও অন্য সবার আহার্য অংশের বিনিময়ে তাকে সওয়াব দান করা হবে।’ মুসলিম : ২/১৫
তিনি আরো বলেন, ‘তুমি যদি নিশ্চিতভাবে জান কিয়ামত এসে গেছে, তবুও তোমার হাতে কোনো গাছের চারা থাকলে তা রোপণ করবে।’
শেষোক্ত হাদিস থেকেই বোঝা যায় ইসলাম বৃক্ষরোপণকে কত গুরুত্ব দিয়েছে। তাই আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে আজ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। বৃক্ষের মতোই সৃষ্টিজগতের সেবা করতে চায় গণমাধ্যমের এই নতুন মুখ। হে দয়াময় আল্লাহ, আপনি আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সহায় হোন।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / এফএ