আরিফুর রহমান : বিশ্বব্যাপী শুধু মুসলিম নারীদের জন্য পোশাক তৈরিকারক ব্রান্ডগুলো বেশ জমজমাট ব্যবসা করছে। ফ্যাশানের দেশ ফ্রান্সেও গড়ে উঠেছে এমন ব্রান্ড যারা ইসলাম ধর্ম অনুমোদন করে এমন পোশাক বাজারে ছাড়ছে। যা আবার একইসাথে ফ্যাশানেবলও। কিন্তু এই ইসলাম সম্মত ফ্যাশানেবল পোশাক নিয়ে দেশটিতে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কি সেই বিতর্ক?
ফ্রান্সের আইকনিক নিদর্শন আইফেল টাওয়ারকে পেছনে রেখে একটি ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে এক কেতাদুরস্ত মডেল। সেখানে পোশাকের ফটোশ্যুট চলছে। বিভিন্ন কায়দায় হেলে-দুলে দাঁড়াচ্ছেন মডেল, আর তার সাথে হেলে-দুলে নানান কায়দায় ছবি তোলার চেষ্টা করছেন ফটোগ্রাফার।
তবে প্যারিসে ফ্যাশানশোর ক্যাটওয়ার্কে মডেলদের পরণে যেমন পোশাক দেখে সবাই অভ্যস্ত সেই পোশাকের সাথে এর দুস্তর তফাৎ। নানা স্টাইলিশ কাট-ছাঁট থাকলেও পুরো মাথা ও শরীর ঢেকে রাখা এই পোশাক দিয়ে। ধর্ম ও স্টাইল দুটোকে একসাথে মেলানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
সম্প্রতি এমন পোশাক বাজারে ছাড়ছে কয়েকটি ফরাসি ব্র্যান্ড। ফ্রান্সে প্রায় ৬০ লক্ষ মুসলিমের বসবাস। সুতরাং এমন পোশাকের চাহিদাও রয়েছে। কিন্তু দেশটিতে রয়েছে নিকাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা। স্কুল ও সরকারি অফিসে মাথা ও মুখ ঢাকা পোশাকের ওপরে রয়েছে কড়াকড়ি।
এমন একটি দেশে ইসলাম সম্মত পোশাক নিয়ে বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন অনেকেই। যেমন নারীবাদি সংগঠন ডেয়ার টুবি ফ্যামিনিস্টের সংগঠক মারি এলিবার্ট বলেন, ‘ইসলামি ফ্যাশানের এই ধারণাটা আমার কাছে কিছুটা স্ববিরোধী এবং কিছুটা গোলমেলে বলে মনে হয়। কারণ ইসলাম একটি ধর্ম। আমারমত নারীবাদির কাছে ধর্ম হল একটি সংস্থা যা পুরুষদের তৈরি। পুরুষরাই সেটা সংগঠিত করে ও নেতৃত্ব দেয়। তারা শালীনতার একটি ধারণা তৈরি করেছে এবং নারীর আচরণ কেমন হবে তারা তেমন কিছু ধারণা চাপিয়ে দেয়’।
শালীনতার নামে নারীকে পরাধীন করার চেষ্টা, এই গেল বিতর্কের একটি ইস্যু। অনেকেই আবার বলছেন সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে অন্য ধর্মের ওপরে জীবন আচরণ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
মুসলিম নারীদের পোশাক ব্রান্ড বারকা ফ্যাশানের উদ্যোক্তা লামিয়া মিস দাউইয়ি বলেন, ‘ওরা চায় সবাই একই রকম হবে। তাদের যেসব প্রথা বা রীতি রয়েছে তার সাথে যদি মানিয়ে না চলেন তখন তারা আপনা থেকে দূরে থাকবে অথবা আপনাকে এক ঘরে করে ফেলবে। হিজাবি ফ্যাশন এমন ধারণার বিরুদ্ধে লড়াই করে। নারীবাদ, বর্ণবৈষম্য, ধর্ম, রাজনীতি সবকিছু মিলিয়ে ইসলামি ফ্যাশন এখন ফ্রান্সজুড়ে হট টপিক’।