বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫ ।। ৮ মাঘ ১৪৩১ ।। ২২ রজব ১৪৪৬


ইজতেমা শুরুর আগেই ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ, মানুষ বসছে সড়কের পাশে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

|| নুর আলম সিদ্দিকী ||

টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে আগামীকাল শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি)। তবে এর একদিন আগেই ভরে গেছে ইজতেমার মাঠ। সারাদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঢল নেমেছে তুরাগ তীরে। বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসছেন তারা।

মুসল্লিদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে ইজতেমা মাঠের খিত্তাগুলো। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা।

তবে এর আগে আজ দুপুরের আগেই ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা, সড়ক ও ভবন কানায় কানায় ভরে গেছে। 

ইজতেমা ময়দান থেকে শরিফ মাহমুদ জানান, এবার লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে ইজতেমা ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। বাস, ট্রাক, ট্রেন ও হেঁটে টুপি-পাঞ্জাবি পরিহিত মুসল্লিরা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসছেন। রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের এই আগমন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

১০৫টি খিত্তায় বিভক্ত ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিরা তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। মুসল্লিদের সুযোগ-সুবিধায় পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টয়লেট ও পয়ঃনিষ্কাশনসহ সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ছাড়াও মুসল্লিদের চিকিৎসায় টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বাড়তি উদ্যোগ।

চুয়াডাঙ্গা থেকে আগত সাদিক মাহমুদ বলেন, ‘গতকাল দুপুরে চলে এসেছি আমরা। গতকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসছে। তবে আজ মানুষের ঢল নেমেছে।’ 

চাঁদপুর থেকে আগত মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে ৫ জন এসেছি। আমাদের খিত্তায় অবস্থান করছি। এবার অনেক লোক সমাগম হবে। কারণ দুই দিন আগেই এত বেশি মুসল্লি আগে কখনো দেখিনি।’ 

আগামীকাল শুক্রবার বাদ ফজর বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হবে। প্রাথমিক বয়ান করেন তাবলিগের শীর্ষ  মুরব্বি  মাওলানা আহমদ লাট, তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা ওমর ফারুক।

এদিকে আয়োজক কমিটির আরেক সদস্য প্রকৌশলী মো. মাহফুজ জানান, বিশ্ব ইজতেমার মূল পর্ব শুক্রবার থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার থেকেই দলে দলে তাবলিগের অনুসারীরা ইজতেমা ময়দানে এসে অবস্থান নিয়েছেন। তারা মাঠের ভেতরে ঢুকে নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। 

আয়োজকরা জানান, এবারের জুমার নামাজে ইমামতি করবেন কাকরাইলের মুরুব্বি মাওলানা জোবায়ের। 

প্রতিবারই জুমার নামাজে অংশ নিতে তাবলিগের অনুসারী ছাড়াও গাজীপুর ও আশপাশের জেলা থেকে আসা মানুষ বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিতে থাকেন।

ইজতেমা ময়দান ছাপিয়ে কামারপাড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের অলিগলিতেও কাতারবদ্ধ হয়ে জুমার নামাজে অংশ নেবেন এসব মানুষ। 

এবার ময়দানের পশ্চিমে তুরাগ নদের পূর্ব পাশে নামাজের মিম্বর এবং উত্তর-পশ্চিম পাশে বিদেশি মুসল্লিদের কামরার পাশে বয়ান মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। নামাজের মিম্বর থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমাম এবং বয়ানের মঞ্চে বয়ানকারী অবস্থান করেন। বয়ান মঞ্চ থেকে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করা হবে।

১৬০ একর বিশাল মাঠে বিশ্ব ইজতেমার জন্য প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মাঠটিতে বাঁশের খুঁটির ওপর ছাউনির মধ্যে বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি। দেশীয় তাবলিগের অনুসারীদের জন্য জেলাওয়ারি আলাদা খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। 

বিদেশি তাবলিগ অনুসারীদের জন্য মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে আধুনিক সুবিধা সংবলিত আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিত বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে একই বছর দুই বার বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভারতের মাওলানা সাদের একটি বিতর্কিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে দুই গ্রুপ দুই পর্বে ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ