পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতে আদায় করা শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ হুকুম। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ- ‘আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও জাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা: ৪৩)
এছাড়াও জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার।’ (বুখারি: ৬৪৫, মুসলিম: ৬৪০)
রাসুল সা. আরও বলেন, ‘আজান দেওয়া এবং প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে যে কী মর্যাদা আছে তা যদি মানুষ জানতে পারত, তাহলে তা পাওয়ার জন্য তারা প্রয়োজনবোধে লটারি করত। দুপুরের নামাজের যে মর্যাদা আছে তা যদি তারা জানতে পারত, তাহলে তারা এটা লাভ করার জন্য প্রতিযোগিতায় লেগে যেত। এশা ও ফজরের নামাজের মধ্যে যে (তাদের জন্য) কী মর্যাদা রয়েছে, তা যদি জানতে পারত, তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এসে নামাজে উপস্থিত হতো।’ (মুসলিম: ৮৬৭)
তবে প্রচণ্ড বৃষ্টি, শীত, মারাত্মক অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে মসজিদে না গিয়ে ঘর-বাড়িতে নামাজ পড়া যাবে- এ বিষয়ে সব আলেম একমত। এছাড়াও রাস্তায় বেশি কাদা হলে, অতি অন্ধকার হলে, রাতে অতিমাত্রায় মেঘ হলে, ব্যক্তি দৃষ্টিহীন হলে, এমন বৃদ্ধ যিনি মসজিদে আসতে অক্ষম, রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকলে, ঘন ঘন প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হলে, এক পা বা উভয় পা কর্তিত হলে, এমন রোগ যার কারণে চলতে অক্ষম, ঘর থেকে বের হলে অসুস্থ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকলে জামাতে শরিক না হওয়ার অবকাশ আছে।
ক্ষুধার্ত ব্যক্তির সামনে খাবার—এমন অবস্থায়, সফরের প্রস্তুতি গ্রহণের সময়, জামাতে নামাজ আদায় করতে গেলে কোনো সম্পদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে, জামাতে যাওয়ার কারণে ট্রেন/ফ্লাইট/গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলেও জামাতে শরিক না হওয়ার অনুমতি আছে। (বুখারি: ১১২৬, ৬২৬, ৬২৭; বদরুল মুনির: ৪/৪১৯; জমউল জাওয়ামে: ১/৩০৫৮; মুসনাদে আহমদ: ৫৩০২; ইবনে মাজাহ: ৭৮৫; আবু দাউদ: ৪৬৪)
অতএব, কোনো অঞ্চলে প্রচণ্ড বৃষ্টি হলে বা বন্যা-ভূমিধ্বস দেখা দিলে অথবা উল্লেখিত ওজরগুলো কারো থাকলে মসজিদে না গিয়ে ফরজ নামাজ বাড়িতে পড়তে ইসলামে বাধা নেই। এ সময় মসজিদে না গিয়ে সতর্কতামূলক ঘরে জামাতে নামাজের ব্যাপারে বিশ্ববিখ্যাত বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দের মুফতিরাও ফতোয়া দিয়েছেন।
তবে সবসময় একটি কথা মনে রাখা উচিত, পুরুষের ফরজ নামাজের সম্পর্ক মসজিদের সঙ্গে। বিনা ওজরে জামাত ছেড়ে দেওয়া বড় গুনাহ। নবীজি সা. কখনও জামাত তরক করতেন না। এমনকি অসুস্থ অবস্থায় যখন তিনি হাঁটতে পারতেন না, তখনও দুই সাহাবির কাঁধে ভর করে পা টেনে টেনে নামাজের জামাতে হাজির হয়েছেন। জামাতবিহীন একা একা নামাজ পড়েননি। যে ব্যক্তি জামাত ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায়, সে গুনাহগার হবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৪)
এক হাদিসে রাসুল সা. বলেন, ‘আমার প্রাণ যার হাতে, তার শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেই আর নামাজের আজান দেওয়ার জন্য হুকুম দেই। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে মুসল্লিদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামাতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই।’ (বুখারি: ৬১৮)
তাই মুমিন মুসলমানের মসজিদে জামাতের ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকা উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এনএ/