|| তানবিরুল হক আবিদ ||
রাজধানীর গেন্ডারিয়া ঢালকানগরে অবস্থিত দেশের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মাদরাসা বাইতুল উলুমে আবনা ও ফুযালা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠানসূচি অনুযায়ী চারটি অধিবেশনে সমাপ্ত হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন ২০০২ থেকে ২৪ শিক্ষা বর্ষ সমাপনকারী ছাত্রবৃন্দ।
আজ শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় অনুষ্ঠিত হয় এ সম্মেলন।
২০০২ থেকে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে যে সকল ছাত্র প্রতিষ্ঠানটি থেকে শিক্ষা সমাপন করেছেন। তাদেরকে নিয়ে এই সম্মেলন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদ্রাসা বাইতুল উলুমের মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ ছিল আনন্দমুখর। প্রধান ফটকে বড় করে লেখা "স্বাগতম হে আবনা ও ফুযালাবৃন্দ"। মসজিদের নিচতলায় সাদা কাপড়ে উপস্থিত এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বয়সী শত শত ছাত্র। কারো চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ, কেউ পূর্ণ যুবক। কেউ মুহতামিম-শায়খুল হাদিস, কেউবা সাধারণ শিক্ষক।
কোরআন তেলাওয়াত ও নাতে রাসুলের মাধ্যমে সকাল নয়টায় শুরু হয় প্রথম অধিবেশন। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন মুফতি মোহাম্মদ ইউনুস দ.বা.। এরপর নির্ধারিত বিষয়ে আলোচনা করেন মুফতি সাব্বির আহমদ, মাওলানা ইউনুস ঢালী, মাওলানা আব্দুল হাফিজ, মাওলানা সাঈদ নূর, মুফতি জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তব্যে মুফতি জহিরুল ইসলাম বলেন, পাঠদানের আদর্শ পদ্ধতি হলো:-
১. আমাকে যে কিতাব পড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হবে সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া। চাই সেটা যে কিতাব হোক না কেন।
২. যে (ফন) বিষয়ের কিতাব দেয়া হবে সেই বিষয়ে উস্তাদ মুজতাহিদ মানের হতে হবে।
৩. দরসে যাওয়ার পূর্বে মুতালা করা এবং উপস্থাপনার ছক ব্রেনে একে ফেলা।
তিনি আরো বলেন, একজন সফল উস্তাদ ও ছাত্রদের কাছে সফল শিক্ষক হওয়ার জন্য করণীয়:-
১. নিজের এস্তেদাদ থাকা।
২. তাদরিস ব্যতীত অন্য সকল ব্যস্ততা মুক্ত হওয়া।
৩. ছাত্রদের সময় দেয়ার মন-মানসিকতা থাকা।
বেলা ১১:৩০ থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় অধিবেশন। নাস্তা, প্রতিনিধি নির্ধারণ ও নিবন্ধন কার্যক্রম চলে এ অধিবেশনে।
তৃতীয় অধিবেশনে সারা দেশ থেকে আগত ফুজালা ও আবনাবৃন্দের অভিব্যক্তি শোনা হয়।
এই প্রতিষ্ঠানের ফুযালা ছাত্র ময়মনসিংহ জামিয়া ইসলামিয়ার নাজিম মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম এর সুনাম সুখ্যাতি আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়েছে। এখানকার আসাতিজায়ে কেরামের আয়োজন অবদান অবশ্যই ব্যতিক্রমধর্মী। যা আমরা ব্যক্তি জীবনে পদে পদে অনুভব করি। আমি নিচের জামাত থেকে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত এই মাদ্রাসায় পড়েছি। ২০০৩ সালে দাওরা হাদিস সমাপন করি। মাদ্রাসার দ্বিতীয় দাওরায় হাদিস সমাপনকারী ব্যাচ আমরা। ২০ বছর আগে এই জামিয়া থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি। আজ আসাতিজা কেরামের সঙ্গে দেখা করতে পেরে আমি আপ্লুত।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন মুফতি হাবিবুল্লাহ মিসবাহ। তিনি বলেন, আমাদের এই সম্মেলনের লক্ষ্য হলো: প্রিয় মানুষ, ওস্তাদদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। আর এই ধারাবাহিকতা সচল রাখতে গঠন করা হয়েছে "রাবেতায়ে আবনায়ে বাইতুল উলুম"।
এ পরিষদের উদ্দেশ্য হলো:-১. মাদ্রাসা দারুল উলুম এর আদর্শকে সম্মিলিতভাবে প্রচার করা। ২. ফারিগিন ছাত্রদেরকে ভিন্নমত ও পথ থেকে রক্ষা করা। ৩. কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা নিরসনে আসাতেযায়ে কেরামের পরামর্শ গ্রহণ করা। ৪. ব্যক্তিগত সমস্যা নিরসনে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা। ৫. আসাতেযায়ে কেরামের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা।ফুয়ালায়ে কেরামের পারস্পারিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখা, ইত্যাদি।
চতুর্থ অধিবেশন দোয়ার মাধ্যমে শেষ করেন এই প্রতিষ্ঠানের মুহতামিম মুফতি জাফর আহমদ দা .বা.।
তিনি ফারেগিন ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে বলেন, যারা আল্লাহ প্রদত্ত তাদেরই স্থায়ী সিলসিলা চালু রাখতে চায় বাইতুল উলুম । আমার উদ্দেশ্য একটাই- কিছু যোগ্য মানুষ তৈরি করা। আমি যখন শুনি, আমার ছাত্র অমুক মাদ্রাসার মুহাদ্দিস, মুহতামিম, শাইখুল হাদিস, তখন আমার মন খুশিতে ভরে ওঠে।
এ সময় তিনি ছাত্রদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, জীবনে যাই করো না কেন নিজেকে তাদরিসের সঙ্গে যুক্ত রাখবে। যদিও সেটা মক্তবে হোক না কেন। শুধু ব্যবসা বা অন্য কোন পেশা বেছে নেবে না।
উল্লেখ্য, মাদ্রাসা বাইতুল উলুমের ফুযালা ও আবনা সম্মেলন বৃহতাকারে এবারই সর্বপ্রথম। এ কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে হাতে নেয়া হয়েছে নানাবিধ উদ্যোগ। গঠন করা হয়েছে পরিচালনা কমিটি।
হাআমা/