বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

১২ লাখ শিশু-কিশোর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দেশের বর্তমানে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছে। তাদের মধ্যে অর্ধেক নারী। এ ছাড়া ১২ লাখের বেশি শিশু ও কিশোর টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি জানেই না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। পরবর্তী সময় তাদের ৬৫ শতাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। অথচ এদের চিকিৎসায় সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা নেই। নেই এ রোগের খুব বেশি বিশেষজ্ঞও (এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট)। তাই রোগটির চিকিৎসা ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ঢাকার বাইরে বারডেমের যে অধিভুক্ত সমিতি আছে, সেগুলোতে আসলে চিকিৎসা হয় না। তাদের কাজ প্রচার প্রচারণার করা। এ ছাড়া প্রতিরোধের জন্য সচেতনতামূলক কিছু কাজ করেন। জেলা হাসপাতালগুলোতে এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগে কিছু চিকিৎসা হয়, তবে সেটা অপ্রতুল। এ সেবা আরও বাড়ানো উচিত। তিনি জানান, টাইপ-১ রোগীর জন্য বিনামূল্যে ইনসুলিন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেটা বাস্তবায়ন হলে রোগীরাও উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১ কোটি ৩০ লাখ রোগীর মধ্যে প্রায় ৫৯ লাখ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। সে হিসাবে ৪৫ শতাংশ রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন। বাকি ৫৫ শতাংশ রোগী চিকিৎসার বাইরে রয়েছেন। অসংক্রামক রোগ হলেও ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসাসেবা ব্যয়বহুল হওয়ায় শতভাগ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা যাচ্ছে না। বারডেম হাসপাতাল, ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক (এনএইচএন) ও বিআইএইচএসের ৩৫টি কেন্দ্র, ৬১টি অধিভুক্ত সমিতি ও ২৯টি সাব এফিলিয়েটেড অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে রাজধানীসহ সারা দেশে ডায়াবেটিস সেবা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ‘ডিসটেন্স লার্নিং প্রজেক্ট’-এর মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রায় ২০ হাজার জেনারেল প্র্যাকটিশনারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডায়াবেটিস সেবা সম্প্রসারণ হচ্ছে।

অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, প্রাইভেট চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিক রোগী নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রতিষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রাইভেট চিকিৎসকের কাছে রোগী নিয়মকানুন জেনে সেটা প্রয়োগ করতে করতে রোগটা জটিল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে শিক্ষিত হবে। ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানতে হবে।

চিকিৎসকরা জানান, শরীরের ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাব হলে, কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে গেলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ সময় রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে কিংবা যথাসময়ে চিকিৎসা না নিলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি জটিলতা, অন্ধত্ব, মাড়ির রোগ এবং অঙ্গহানির মতো শারীরিক জটিলতা হতে পারে। এসব কারণে মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ে।

তারা জানান, ডায়াবেটিক রোগীর ধরন অনুযায়ী প্রায় ৯৫ ভাগ রোগী টাইপ-২ ডায়াবেটিকে আক্রান্ত। টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগীর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তারা আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ-ছয় বছর পর চিকিৎসকের কাছে আসেন। শুধু ডায়াবেটিস থাকার কারণেই জীবন থেকে তাদের ১০ বছর ‘নেই’ হয়ে যায়। দেশের সাধারণ মানুষের আয়ুষ্কাল ৭৩ বছর হলেও, ডায়াবেটিক রোগীর আয়ুষ্কাল ৬৩ বছর।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বে প্রতি ১০ জনে ১ জন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস যেহেতু বহুলাংশেই (৮০% পর্যন্ত) প্রতিরোধযোগ্য, ফলে এখনই যদি এ রোগের প্রতিরোধ না করা হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।

সমিতির তথ্যমতে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৪ জনের মধ্যে ৩ জনেরও বেশি লোক নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে বাস করে। প্রায় দুই কোটি মহিলা গর্ভাবস্থায় হাইপারগ্লাইসেমিয়ায় (উচ্চ রক্তের গ্লুকোজ) আক্রান্ত হয়। যা প্রতি ৬ জন মহিলার মধ্যে ১ জন। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ের ১৫ শতাংশ ব্যয় হয় ডায়াবেটিস চিকিৎসায়। আক্রান্তদের প্রতি ২ জনের মধ্যে ১ জন রোগীর ইনসুলিন বা ট্যাবলেট কেনার সামর্থ্য নেই।

অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে হলে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, ডায়াবেটিসকে জানতে হবে। প্রতিরোধের উপায়গুলো নিজে শিখে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।

-এসআর

 

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ