কাউসার আইয়ুব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদরের অন্তর্গত একটি গ্রামের নাম ভাদুঘর। তুলির আঁচড়ে আঁকা গ্রামটি দেখছে ছবির মতো লাগে। পুরনোকাল থেকেই এ জেলার মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে আছে বড় বড় আলেম মনিষীদের পদধূলি। তাই অফিস আদালত থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক পর্যন্ত ইসলামের সোনালী রঙে রঙিন দেখা যেত। সবুজের সমারোহ। অতিথি পাখির আনাগোনা। গ্রামে পুরুষদের মাথায় সাদা টুপিগুলো বেলি ফুলের মতো ভাসে।
জন্ম: কারী আব্দুল আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ গ্রামের এক জন ধর্মগুরু। শিশু সাদিকুল ইসলাম তার ঔরস অলংকিত করে ভূধরায় শুভ আগমন করেন। পহেলা জানুয়ারি ১৯৪৮ সালের তারিখের দিনটি আজও স্বর্ণাক্ষরে ডায়েরির পাতায় লেখা রয়েছে। শান্ত সুবোধ সাদিকুল ইসলাম ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে।বেড়ে উঠে বাবার বাড়িতে।
শিক্ষাজীবন: শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়েছে স্কুল থেকে। প্রথমিক শ্রেণিগুলো ভালোই কাটছিলো সাদেকুল ইসলামের। কোনো এক দিনের ঘটনায় স্কুলের দিনগুলো হঠাৎ মলিন হয়ে পারে। ঘটনাটি ছিলো বাবার মৃত্যুর। বাবার মৃত্যুতে পুরো পরিবার অভিবাবক শুন্য হয়ে পরে।
সাদিকুল ইসলাম তিন ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। পিতা হারানোর ফলে পারিবারিক ব্যস্ততার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলে নিজেকে। ব্যস্ততার পাশাপাশি নিয়ম তান্ত্রিক ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া তার জন্য কষ্টকর ছিলো। তাই এক বছর পর্যন্ত বন্ধ ছিল তার লেখাপড়া। বাল্য বয়সে মাথা থেকে পিতার ছায়া উঠে যাওয়া তখন ততটা না বুঝলেও পদে পদে এর জন্য কাঁদতে হয়েছে তাকে বহুবার।
এক সকালে তরুণ সাদেকের কানে ভেসে আসে কোরআন তেলাওয়াতের একটা সুর। তেলাওয়াতের এ সুর তার ভেতর পর্যন্ত ছুয়েছে। আয়াতটি আজও তার কানে বেজে উঠে। বরাবরই আকর্ষণ করে তাকে। এ আকর্ষণই তার ভেতরে আগুনের একটি শিখা জালিয়ে ছিলো। সে দিন অবচেতন মনে প্রতিজ্ঞা করে আমিও শিখবো কোরআন তেলাওয়াত। এবং ইসলামের এ মহা জ্ঞানে ডুব দিবো। তাছাড়া আমার পিতা তো একজন কারী ছিলেন তো আমি কেন কুরআন পড়বো না।
এপ্রেরণা নিয়েই বি-বাড়িয়ার বড় হুজুর নামে খ্যাত মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সাহেবের কাছে কোরআনের সবক নেয়। নাদিয়াতুল কুরআন বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব রাহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছে সকালে সকালে কোরআন পড়তে যান। পাশাপাশি রাতের বেলা শামসুল হক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি নামে পরিচিত তার কাছে ব্যক্তিগতভাবে ফার্সি পহেলী এবং তালিমুল ইসলাম সহ আরও কিছু কিতাব পড়ে। এরপর মাওলানা আব্দুল ওয়াহাবের পরামর্শে দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামিয়া ইউনুছিয়ায় কিতাব বিভাগে ভর্তি হন। পারিবারিক ঝামেলার ফলে জামিয়া ইউনুছিয়াতে বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করে লেখাপড়া চালাতে থাকেন।
কিন্তু এ পড়ালেখাতে তেমন তৃপ্তি ছিল না। ছিল না তেমন একাগ্রতা। তাই এভাবে পড়ালেখায় জন্য ওস্তাদের পরামর্শে মামার বাড়ী চলে যায়। মামার বাড়ির কাছে মিফতাহুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যায়। এবং উর্দু ফার্সি আরবি ব্যাকরণ এর উপর বিশেষভাবে মনোযোগী হয়।
বিশেষ করে মাওলানা আব্দুল হাই এর কাছে হেদায়াতুন্নাহু কিতাবটি গুরুত্ব সহকারে পড়েন এবং এদারায়ে তালীম বোর্ডে প্রথম স্থান অর্জন করেন। আব্দুল হাই রহ. এর পরামর্শে ঢাকা লালবাগ মাদ্রাসায় চলে আসেন। কাফিয়া শরহে জামী দুটি জামাত এখানে পড়েন। বিশেষত হাফেজ্জী হুজুর রহমাতুল্লাহর কাছে কিতাব পড়েন এবং আসরের পর হযরত শামসুল হক ফরিদপুরীর ইসলাহী মজলিস বসেন।
একপর্যায়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে যান এবং হেদায়া থেকে তাকমিল পর্যন্ত বাংলাদেশের উম্মুল মাদারিস "মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী" তে পড়ালেখা করেন। বিশেষত আল্লামা আহমদ শফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কাছে জালালাইন শরীফ ও মেশকাত শরীফ পড়েন। আর বুখারী প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড পাড়েন আব্দুল কাইয়ুম রাহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছে। আবু সালেস সালেস রাবে মাওলানা আবুল হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহির কাছে পড়েন। আবু দাউদ তিরমিজি মাওলানা আব্দুল আজিজ রহমতুল্লাহি আলাইহি এর কাছে। মাহমুদুল হক আহমদুল হক রাহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছেতিরমিজি। মাওলানা আব্দুল আজিজ রহমতুল্লাহি আলাইহির কাছে ইবনে মাযা পড়েন। আহমদুল হক রাহমাতুল্লাহ আলাইহি মাওলানা আব্দুল হামিদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আবু দাউদ পড়েন মাওলানা সাঈদীর কমদ শাহিন তাহাবী শরীফ মাওলানা নজির আহমদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছে ইবনে শরহে আকাইদ মোহাম্মদ আলী রহমাতুল্লাহ ওয়া মোবাইল তাহাবী শরীফ শরহে শরহে আকাইদ পড়েন মাওলানা মোহাম্মদ আলী রহমাতুল্লাহ আলাইহির কাছে কাজী আবুল হাসান চৌধুরী কাজী হামদুলিল্লাহ আবুল হাসান রহমতুল্লাহ।
মাঝখানে এক বছর এক রমজানে তিনি মাওলানা হাফিজ্জি হুজুর রহমতুল্লাহি আলাইহির জামাতা আব্দুল হাই পাহাড়পুরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহমাতুল্লাহ আলাইহির জামাতা প্রফেসর মাওলানা গিয়াস উদ্দিন মাওলানা দ্বীন মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ আলাইহির কাছে সংক্ষিপ্তভাবে পুরনো কোরআনের তাফসীর পড়েন এবং তাকে দীন মোহাম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পাগড়ী প্রদান করেন।
এক রমজানের ক্বারী ইব্রাহিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছেলের কাছে বিশেষভাবে কেরাতের উপর লেখাপড়া করেন এবং পরবর্তীতে তিনি ইসলামী ফিকাহ ওপর গভীর জ্ঞান অর্জনের জন্য তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধান মুফতি শফি রহ. এর কাছে যান। দারুল উলুম করাচি ভর্তি হন এবং ফিকার পর দুই বছরের কোর্স শেষ করেন। এ বিষয়ে পিএইচডি করেন।
মুফতী শফি রহ. এর নজরকারে তার পড়ালেখা। তাই সেখানেই খেদমতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেশের ভালোবাসা তাকে বেশিদিন দূরে রাখতে পারেনি। তিনি দেশের মাটিতে খেদমত করবেন শুনে যাত্রাবাড়ী মাদরাসা থেকে স্বাগত জানিয়ে ফতোয়া বিভাগের খেদমতের জন্য আনা হয়েছে। তিনি এসে যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় ইফতা বিভাগ চালু কারেন।
-এসআর