আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: রাজধানীর ৮০ ভাগ শিশুর শরীরে ক্ষতিকর মাত্রায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ইউনিসেফের উদ্যোগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআর,বি সম্প্রতি এই গবেষণা পরিচালনা করে।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইউনিসেফের উদ্যোগে আয়োজিত ‘লেড পয়জনিং ইন বাংলাদেশ: রিসার্চ এভিডেন্স ফর আর্জেন্ট অ্যাকশন’ শীর্ষক সেমিনারে আইইডিসিআর’এর গবেষক নওরোজ আফরিন গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন।
শিশুদের রক্তে সিসার উপস্থিতি জানতে রাজধানীর ৫০০টি এলাকার সমান সংখ্যক শিশুর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, ৮০ ভাগ শিশুর রক্তে ৫ মাইক্রোগ্রাম সিসা আছে।
আইসিডিডিআরবি গবেষক মাহবুবুর রহমান জানান, রক্তে যেকোন মাত্রার সিসাই মারাত্মক ক্ষতিকর। আর এসব সিসা অ্যাসিড ব্যাটারি রিসাইক্লিং, হলুদ ও রং কারখানা থেকে ছড়াচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বড়দের তুলনায় শিশুদের শরীরে সিসার প্রভাব বেশি। রক্তে সিসা মিশে গিয়ে মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে, ঢাকার বাইরে টাঙ্গাইল, খুলনা, সিলেট, পটুয়াখালী এই চার জেলায় শিশুদের দেহে সিসার মাত্রা পরীক্ষা করা হয়েছে। এই চার জেলার পরীক্ষিত ৯৮০ শিশুর সবারই রক্তে সিসার উপস্থিতি মিলেছে। এর মধ্যে ৫৩১ জন ছেলে শিশু এবং ৪৪৯ মেয়ে শিশু রয়েছে।
এদের বয়স সীমা ছিল ১৮ বছরের নিচে। গবেষণাটি ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে করা হয়েছে। এই চার জেলার মধ্যে খুলনা ও টাঙ্গাইল জেলা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ শিশুরই রক্তে সিসার মাত্রা যুক্তরাষ্টের সিডিসি নির্ধারিত মাত্রা ৩ দশমিক ৫ মাইক্রো গ্রামের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে ২৪ মাস থেকে ৪৮ মাস বয়সী শিশুদের শতভাগের শরীরেই সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এদিকে বাজারের বিভিন্ন পণ্য পরীক্ষা করে ৩৬৭টি পণ্যের মধ্যে ৯৬টিতে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চারটি শহরে স্থানীয়ভাবে তৈরি খেলনা, রং, অ্যালুমিনিয়াম ও সিলভারের হাঁড়িপাতিল, সবজি, চাল ও মসলার নমুনায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া যায়। চারটি শহরের মধ্যে আছে ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা। এছাড়া মাটি, ছাই, পোড়া মাটি ও হলুদের গুঁড়ায় সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে।
গবেষণার তথ্য বলছে, সিসা দ্বারা দূষিত হলুদের গুঁড়া গর্ভবতী নারীর শরীরে উচ্চ মাত্রার সিসার উপস্থিতির কারণ। পল্লী এলাকায় পরীক্ষা করা ৩০ শতাংশ গর্ভবতী নারীর শরীরে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নিলুফার নাজনীনসহ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, এনজিও এবং উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
-এটি