আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: অনিয়ম, কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এ কারচুপির পেছনে ইভিএমের কোনো ভূমিকা নেই বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের ফলে নির্বাচনে কারচুপি করা সহজ হয়েছে কিনা, সাংবাদিকরা এমনটি জানতে চাইলে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ইভিএমের বিষয় নয়, এটি হিউম্যান এলিমেন্ট। এখানে আমরা যান্ত্রিক বা মেকানিক্যাল কোনো সমস্যা দেখিনি। ভোটে ইভিএম কোনো সমস্যা সৃষ্টি করেনি। ভোটকেন্দ্র প্রিজাইডিং অফিসার ও অন্যান্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।’
এক আসনে উপ-নির্বাচন করতে হিমশিম খাওয়া ইসি কীভাবে ৩০০ আসনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এমন প্রশ্ন অনেকেই তুলবেন। তবে সেটা সময় বলে দেবে। এখন একটি আসনে সঠিক হচ্ছে না বলে জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনেও সুষ্ঠু হবে না, এটি বলা ঠিক হবে না।
এ নির্বাচন থেকে আমরা কিছু সর্তকতা অবলম্বন করতে পারব। আগামী নির্বাচন যেন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে করতে পারি, তার একটি নির্দেশনা পাওয়া যাবে।’
অনিয়ম ও জালিয়াতিতে কারা জড়িত, এমনটি জানতে চাইলে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কাদের কারণে আজকের এ ভোট বন্ধ করতে হয়েছে, তা নিয়ে এখনো আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।’
নির্বাচনে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আপনারাও একটা সময় আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। আপনারা দেখেছেন। আমরা প্রথম থেকে লক্ষ্য করেছি, ভোটগ্রহণে অনিয়ম হচ্ছে। অনেক কেন্দ্রে আমরা গোপন ভোটকক্ষে অবৈধ অনুপ্রবেশ দেখেছি। অবৈধভাবে প্রবেশ করে ভোটারদের ভোট দিতে সহায়তা করছেন অথবা বাধ্য করছেন। এটা আমরা সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করেছি।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা সহকর্মীরা সকাল ৮টা থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এটি পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা কেউ কক্ষ ত্যাগ করিনি। অনিয়ম ও অবৈধ কাজগুলো বেশ মোটাদাগে হয়েছে। যার ফলে আমরা প্রথমে তিনটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছি। এরপরে ১৬ কেন্দ্র ও তৃতীয় দফায় ১২ কেন্দ্র বন্ধ করেছি। চতুর্থ দফায় কয়টি এবং সর্বশেষ আরও তিনটিসহ মোট ৪৩ কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দিয়ে সাড়ে ১২টায় পর্যবেক্ষণ কক্ষ ত্যাগ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অফিসারদের দায়িত্ব দিয়ে এসেছি। এসময় লক্ষ্য করলাম, আমাদের কতগুলো কেন্দ্রে সিসিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছিলাম না।
কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষাপটে পরে আমরা আরও সাতটি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করি। মোট ৫০টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করা হয়। এ ছাড়া রিটার্নিং অফিসারও একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট বন্ধ করেন।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বিষয়টি আমরা কমিশনের সব সদস্য বসে পর্যালোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করতে থাকি। আমরা নিশ্চিত হই, ৫০ কেন্দ্রের ভোট বন্ধ হয়ে গেলে বাকি যেসব কেন্দ্র থাকে, সেখানকার পরিবেশ বিচার করে সঠিক মূল্যায়ন হবে না। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, ভোটগ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
কোনো একটি পক্ষ বা কোনো একটি প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী প্রভাবিত করতে পারছেন। ফলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, ইমপারশিয়ালি ফেয়ারলি ভোটগ্রহণ হচ্ছে না ‘
তিনি বলেন, ‘৫১ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধের পর আইন-কানুন পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদে যে দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত। ভোটগ্রহণ বন্ধ।’
এ উপ-নির্বাচনে পুনরায় তফসিল হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা আইন ও বিধি বিধান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব এবং যে সিদ্ধান্ত হবে, সেটা আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’
এদিকে, ইসির পক্ষ থেকে নির্বাচন বন্ধের ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন ছাড়া একযোগে বাকি চার প্রার্থী ভোট বর্জন করেছিলেন। ভোট বর্জন করা প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপর তফসিল অনুযায়ী আজ বুধবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
-এটি