বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


পথশিশুদের অধিকার পাবে কবে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রফিকুল ইসলাম জসিম ।। আজ জাতীয় পথশিশু দিবস। দেশের পথশিশুদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবছর আমাদের দেশে পালিত হয় এই দিবস। ক্ষুধার জ্বালায় মায়ের কোল ছেড়ে শিশুরা যখন মা-বাবার ঘর ছেড়ে অজানার পথে পা বাড়ায় তখনই তাদের বলা হয় পথশিশু। অথচ কোনো শিশুই পথশিশু হয়ে জন্মায় না। জন্মের সময় প্রতিটি শিশুই তার অধিকার নিয়ে জন্মায়।

আমরা কি তাদের সেই প্রাপ্য অধিকারটুকু নিশ্চিত করতে পেরেছি মোটেই পারিনি! বরং আমরা ও আমাদের সমাজ তাদের অধিকারের বিষয়ে অধিকাংশ সময় শুধু অবহেলা করেছি।

আমাদের দেশে রাস্তাঘাট, শপিংমল, রেলস্টশন, গ্রামে, কিংবা শহরে অনেক জায়গাতেই পথশিশু দেখতে পাই। গতকাল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ভানুগাছ রেলস্টেশনে হঠাৎ দেখা মিললো প্রায় ১০/১২ জন পথশিশু। তারা সবারই বয়স ৮/৯ হবে৷ দূর থেকে একটু কাছে গিয়ে ক্যামেরা অন করে ভিডিও চিত্র করলাম৷ কিছুক্ষণ ভিডিও করার পর তাদের একজনের নজরে পড়ে এক ছেলে বললো,ক্যামেরা বন্ধ করেন৷ পরে আমি তাদেরকে বললাম,তোমাদের খাবার খাওয়াবো, টাকা দিবো৷ পরে ওরা রাজী হলো৷ মনে হলো টাকার জন্য অন্যায় কাজগুলো করবে তারা।

ওদের খাবারে টাকা নেই, ভিক্ষা করে টাকা জুটলে ওরা খাবে৷ কত বেলা না খেয়ে ওরা থাকতে হয়৷ ওদের কষ্টের কথা শুনে চোখের জল এলো৷ এই পথশিশুরা একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুড়ে বেড়ায়। তাদের বসবাসের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নেই। পথশিশুরা যেখানে খুশি সেখানে চলাফেরা করে। পথশিশু হিসেবে তাদের জীবন শুরু হয় সারা দিন ভিক্ষাবৃত্তি আর ঘোরাঘুরি করে।

অবহেলা, অসহায় এই শব্দগুলো যেনো পথশিশুদের জীবনের সাথে জড়িত। তারা ঠিক মতো খেতে পারে না, ভালো কাপড়চোপড় পরতে পারে না, তাদের মধ্যে শিক্ষার কোনো আলো নেই। অনেক সময় তাদের কপালে জুটত মানুষের মারধর কিংবা বকাঝকা। আর দিন শেষে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঘুমানো। ওরা কেউ পানি বিক্রির কাজ শুরু করে। কিন্তু শরীর নোংরা থাকায় কেউ তার কাছ থেকে পানিও কিনতে চাইত না।

শিশুরা যত ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পারে, তার সবই আছে পথশিশুদের৷ বিশেষ করে তাদের অধিকারের জায়গা থেকে, বঞ্চনার জায়গা থেকে, সব ধরনের ঝুঁকিতে থাকা শিশুরাই পথশিশু৷ একটা শিশুর সবার আগে বাসস্থানের অধিকার রয়েছে, নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে, খাদ্যের অধিকার রয়েছে, শিক্ষার অধিকার রয়েছে৷ এসব কিছুই কিন্তু পথশিশুদের জন্য প্রযোজ্য৷ এর কোনো অধিকারই তারা পাচ্ছে না৷ তার ওপর শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের ঝুঁকি থাকছে রাস্তা-ঘাটে৷ তাদের ওপর অর্থনৈতিক নিপীড়ন থাকছে এবং এর চেয়েও বেশি পরিমাণে যেটা, সেটা হচ্ছে মাদক এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে শিশুদের জাড়ানো হচ্ছে৷ ফলে সার্বিকভাবেই ভয়াবহ থেকেও ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পথশিশুরা রয়েছে৷

আজকে আমাদের চোখের সামনে পথশিশুরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর কোন প্রতিকার আমাদের সমাজে নেই। শিশু অধিকার বাস্তবায়নের স্লোগানের অভাব হয় না, কিন্তু বাস্তবায়ন করতে মাঠে ময়দানে মানবদরদী মানুষ পাওয়া যায় না।

অনেকে পথশিশুদের জন্য অনেক কিছু করেন। কেউ ঈদের সময় নতুন পোশাক কিনে দেন, কেউ পিঠা উৎসবের, আবার কেউ খেলাধুলার আয়োজন করেন কিন্তু এসব পদক্ষেপ পথশিশুদের দীর্ঘ মেয়াদে কোনো উপকার করে না। তাই আমাদের উচিত সরকারি, বেসরকারি, সাংগঠনিকভাবে বা ব্যক্তি উদ্যোগে হলেও এই পথশিশুদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা।

তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন করার ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়া। সবাই মিলে পথশিশুদের একটি সুন্দর স্বাভাবিক জীবন উপহার দেওয়া। তারাও যেন একজন মানুষ হিসেবে এই সমাজে বাঁচতে পারে। আর এই অধিকারগুলোর বাস্তবায়ন ঘটুক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ