আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে বলেছেন যুদ্ধ চান না। অথচ তিনি নিজেই দেশে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের খুন করছেন, গুম করছেন। তার নির্দেশ পালনের কারণে এলিট ফোর্স র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা।
আজ শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন রচনা প্রতিযোগিতা কমিটি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র হরণকারীরা যখন গণতন্ত্রের কথা বলে, তখন লজ্জা ধিক্কার ছাড়া কিছুই আশা করা যায় না। আজকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে (শেখ হাসিনা) বড় বড় কথা বলছেন যে যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না। কেউ চায় না যুদ্ধ, কেউ চায় না নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু তার মুখে এটা মানায় না।
তিনি নিজে এই দেশে হত্যার সঙ্গে জড়িত। গুম হয়ে গেছে আমাদের ছয় শতের অধিক মানুষ। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম থেকে শুরু করে আমাদের ছাত্রদলের অসংখ্য ছেলে। এই সমস্ত ছেলেগুলো চলে গেছে মায়ের কুল খালি করে। মা জানে না, বাবা জানে না, কোথায় তারা।
আজকে শত শত মানুষকে থানায় নিয়ে গিয়ে তারা পঙ্গু করে দিয়েছে। সহস্রাধিক মানুষকে তারা হত্যা করেছে।এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করেছে। এ কারণে আজকে এলিট ফোর্স র্যাব যারা দেশের সুনাম কুড়িয়েছিল অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে। এ সরকারের অন্যায় আদেশ মানতে গিয়ে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা পড়েছে।
সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা পড়েছে এটা নিয়ে সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তারাই নির্দেশ দাতা তাদের সবার আগে নিষেধাজ্ঞা আসা প্রয়োজন। নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যে জনগণ দিয়ে দিয়েছে। মানুষ বলে দিয়েছে তোমাদেরকে আর দরকার নেই।
যুবদলকর্মী শাওনের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে যে মুন্সিগঞ্জের শাওন ইটের আঘাতে নিহত হয়েছেন। অথচ শাওনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে গুলির আঘাতে মৃত্যু হয়েছে। গুলির আঘাতে শাওনের মস্তিষ্কে ব্যাপক ক্ষত হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের শতকরা ৪২ জন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। আর তারা (আওয়ামী লীগ) কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এ অবস্থার অবসান আজকে তরুণদেরকে ঘটাতে হবে। আজকে তরুণদেরকে জেগে উঠতে হবে, বাংলাদেশের মানুষদেরকে জেগে উঠতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে শাওন, আব্দুর রহিম নূরে আলমের রক্তকে বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। তাদের রক্তের প্রতি সত্যিকার অর্থে শ্রদ্ধা জানাতে হলে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে প্রতিহত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগে উন্নয়নের কথা খুব বেশি বলতো এখন একটু কম বলে। উন্নয়ন কখনোই টেকসই হবে না যদি সেখানে গণতন্ত্র না থাকে। আর গণতন্ত্র কখনোই ফলপ্রসূ হবে না, যদি সেখানে পাল্টাপাল্টির সিস্টেম না থাকে এবং মানুষ ভোট দিতে না পারে।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি ছাড়া কোন ব্যক্তি নেই বাংলাদেশে। তখনো তাই শুরু করেছিল কিন্তু পারেনি। এখন আবার শুরু করেছে। এক ব্যক্তি শাসন, এক ব্যক্তির মতবাদ, এক ব্যক্তির সব। কিন্তু এগুলো টিকে না। এ ধরনের কর্তৃত্ববাদ, এ ধরনের ফ্যাসিবাদ কখনোই টিকবে না। অন্যায় করে, নির্যাতন করে; ভালোবাসা না থাকলে প্রেম না থাকলে কখনো কি কাউকে চিরস্থায়ী করা যায়?
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ বিনির্মাণে, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য যে ভূমিকা রয়েছে তার ইতিহাস তুলে ধরা। বিশেষ করে গত ১৪ বছরে যারা সরকারে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করছে। বাংলাদেশের ৫০ বছরে ইতিহাসকে বিকৃত করে শুধুমাত্র তাদের স্বার্থে নতুন করে ইতিহাস রচনা করার অপচেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, আমরা জানি ইতিহাস রচনা করে ঐতিহাসিক এবং ইতিহাসবিদরা। এছাড়া কেউ ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে না। তারা হয়তো সাময়িক রচনা লিখতে পারেন। এর প্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং ৫০ বছরের বাংলাদেশের ইতিহাস আমরা প্রত্যেকের হাতে তুলে দেব।
এর আগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়দের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ডক্টর এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল সাবেক উপ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম ও ছাত্রদের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
-এটি