।।কাউসার লাবীব।।
আরব বিশ্বের ২২টি দেশের মধ্যে রমজানের শেষ দশ দিন শুরু হওয়ার সাথে সাথে ১০টি আরব দেশের মসজিদে ইতিকাফ শুরু হবে। অন্যদিকে মিশর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে নিজ নিজ ঘরবাড়িতে ইতিকাফ করার আহ্বান জানিয়েছে।
ইতিকাফ হল রমজান মাসে, বিশেষ করে মাসটির শেষ দশ রাতে মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বৈশিষ্টপূর্ণ ধর্মীয় আচারগুলির মধ্যে একটি। এতে ইতিকাফকারী প্রচুর পরিমাণে আল্লাহর জিকির, মোনাজাত ও সালাত ও তিলাওয়াত করে থাকেন। মুসলিম পুরুষগণ ইতিকাফ সাধারণত মসজিদে বসেই করে থাকেন। তবে কয়েক বছর করোনা সংক্রমণের কারণে নিজ নিজ বাড়িতে ইতিফাক করার পরামর্শ দিয়েছেন আরব দেশগুলোর অনেক স্কলার।
এ বছর যে আরব দেশগুলো মসজিদে ইতিকাফের অনুমতি দিয়েছে-
গত ২২ মার্চ সৌদি আরব দুই বছর পর করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক পর রমজানে হারামাইন শারিফাইনে (বায়তুল্লাহ এবং মসজিদে নববী) ইতিকাফের অনুমতি প্রদান করে।
এদিকে সৌদি প্রেস এজেন্সি বুধবার জানিয়েছে, মসজিদে নববীতে বৃহস্পতিবার ইতিকাফ পরিষেবার জন্য মনোনীত স্থানগুলির ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী অনুমোদিত সংখ্যার নিবন্ধন সম্পন্ন করার পর দেখা যায় রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফের জন্য ৪ হাজার নারী পুরুষ অনুমতি পেয়েছে।
তবে হারামাইন শারিফাইন বিষয়ক প্রধান, শায়েখ আবদুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আস-সুদাইস নির্দেশ দিয়েছেন যেন বায়তুল্লাহ ইতিকাফকারীদের কোনো সংখ্যা নির্ধারণ না করে আগত সকল ইতিকাফকারীকে ইতিকাফের অনুমতি ও তাদের সেবা করার জন্য সমস্ত উপায়ের ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে জর্ডানের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া মুখপাত্র হুসাম আল-হিয়ারি গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এই বছর আওকাফ মন্ত্রণালয় মসজিদে নামাজ পড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। সেখানে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে ইতিকাফের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, সবকিছুই যেনো পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।’
গত ১২মার্চ কুয়েতি সংবাদপত্র, ‘আল-কাবাস’, আওকাফ মন্ত্রকের অজ্ঞাত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলে যে ‘এ বছর ইতিকাফের ছোঁয়ায় মসজিদগুলিতে প্রাণসঞ্চলতা ফিরে আসবে।’
ইরাকে রমজানের শেষ দশ দিনে মসজিদগুলিতে ইতিকাফ শুরু হবে। কারণ জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটি (সরকারি) গত মাসের শেষের দিকে রমজান মাসে মসজিদে নামাজ পুনরায় শুরু করার মাধ্যমে করোনার বিধিনিষেধ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গাজা উপত্যকায় আওকাফ মন্ত্রকের প্রচার বিভাগের পরিচালক আমির আবু আল-ওমারিন গণমাধ্যমকে বলেছেন যে ‘মন্ত্রণালয় ইতিকাফের জন্য স্ট্রিপ জুড়ে মসজিদগুলি প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি ইমামদেরকে সার্বিক বিষয়ে তত্ত্ববধান করার নির্দেশনা দিয়েছে।’
পশ্চিম তীরে ২০২১ সালের রমজান থেকেই করোনা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মসজিদগুলি ইবাদতের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে এবং রমজানে ইতিকাফের আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও খার্তুমের রাজধানী এবং সুদানী শহরের অনেক মসজিদে রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ শুরু হবে। তবে এখনও পর্যন্ত কোন সরকারী আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি।
ইয়েমেনে বেশিরভাগ মসজিদে বিশেষ করে শহরগুলিতে ইতিকাফের ব্যাপক ব্যবস্থা থাকে। সে দেশে ইতিকাফ সাধারণত এনডাউনমেন্ট এবং গাইডেন্স মন্ত্রক দ্বারা ঘোষণা করা হয় না। বরং এটি ইয়েমেনি সাধারণ মুসলমানদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই ব্যাবস্থা হয়।
মৌরিতানিয়ায় এ বছর হাজার হাজার মানুষ মসজিদে ইতিকাফ শুরু করবে। বিশেষ করে রাজধানী নোয়াকচট এবং প্রধান শহরগুলিতে। তাছাড়া সে দেশের বেশকিছু মসজিদে রমজান মাস জুড়ে রোজাদারদের জন্য ইফতার বিতরণের ব্যাপক আয়োজন চলছে।
লেবাননের দার আল-ফতওয়ার সহকারী মহাপরিদর্শক শায়েখ হাসান মেরেব বলেছেন, রমজানের শেষ দশ দিনের বিশেষ ইবাদত এবং মসজিদগুলিতে ইতিকাফের বিষয়ে এই বছর কোনও ব্যতিক্রমী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়টি মসজিদের ইমামগণ আঞ্জাম দিবেন।
সোমালিয়ায়ও ইতিকাফের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে সাধারণত সে দেশে ইতিকাফ সম্পর্কে কোনও সরকারী সিদ্ধান্ত জারি করা হয় না এবং ইতিকাফ স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মুসলমানদের ইচ্ছে অনুযায়ী সম্পন্ন হয়।
যে আরব দেশে এ বছরও নিজ নিজ ঘরে ইতিকাফ করা হবে-
গত ১৫ এপ্রিল মিশরীয় এনডাউমেন্টস মন্ত্রণালয় করোনা সংক্রমণ এড়াতে মসজিদগুলোতে ইতিকাফের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত দুই বছর যেভাবে দেশের সাধারণ মুসলমানগণ নিজ নিজ বাড়িতে ইতিকাফ করে সেভাবেই ইতিকাফ সম্পাদনের ওপর তাগিদ দিয়েছে দেশটি।
ইতিকাফের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি যে আরব দেশগুলো-
বিভিন্ন আরব দেশে রমজানের শেষ দশদিন মসজিদে ইতিকাফ করার অনুমতির ঘোষণা দিলেও কিছু দেশ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অবস্থান জানাননি।
এদের মধ্যে রয়েছে, আলজেরিয়া, লিবিয়া, মরক্কো, কাতার, তিউনিসিয়া, সিরিয়া, বাহরাইন, আমিরাত, ওমান সালতানাত, কমোরস এবং জিবুতি। সূত্র: আনাদুলু এজেন্সি
-কেএল/এএ