আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে দূরপাল্লার বাসের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিন শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে টিকিট বিক্রি।
২ মে ঈদের দিন ধরে টিকিট দেওয়া শুরু করেছে বাস কোম্পানিগুলো। কিছুদিন আগে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাসভাড়া বাড়ানোর পর এটাই প্রথম ঈদযাত্রা। ভাড়া বৃদ্ধিতে এমনিতেই নাভিশ্বাস যাত্রীদের, তার ওপর এবারও কয়েক গুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছে উত্তরবঙ্গের বাস কোম্পানিগুলো। কিন্তু এসব জানেনই না পরিবহন নেতা ও সরকারের দায়িত্বশীলরা।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তানজীব শরীফ। ঢাকা থেকে ঈদে গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ে ফেরার জন্য টিকিট কাটতে ঢু মেরেছেন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সহজ ডটকম-এ। কিন্তু সেখানে যেতেই তার চোখ কপালে। উত্তরবঙ্গের অপারেটর নাবিল পরিবহন তাদের বিজনেস ক্লাস এসি বাসের ১ হাজার ৭০০ টাকার টিকিটের মূল্য দিয়ে রেখেছে ২ হাজার ৭০০ টাকা।
তানজীব শরীফের কথার সূত্র ধরে টিকিট বিক্রয়কারী অনলাইন প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকম-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা মিলল তার কথার সত্যতা। শুধু অনলাইন নয়, নাবিল পরিবহনের কাউন্টারেও এই দামে টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবি, ‘ঈদ এলে এমন হয়। মালিকপক্ষ থেকে যে দামে বিক্রি করতে বলা হয়েছে সেটাই করা হচ্ছে।’ এ ছাড়া ঈদযাত্রায় একপাশে ব্যবসা হয়, অপর পাশে বাস একেবারে ফাঁকা আসে। ফলে দুই পাশ মিলিয়েই ভাড়া নিতে হয় বলেও দাবি তাদের।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে, ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে একজন যাত্রী ভ্রমণ করবেন একবার। আর ভাড়া দেবেন আসা-যাওয়ার?
বর্তমান পরিবহন কোম্পানিগুলোর অবস্থা দেখে তা-ই মনে হচ্ছে। আর কোনো উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে এক হাজার টাকা বেশি দিয়েই ২৯ এপ্রিলের টিকিট কেটেছেন তানজীব।
তিনি বলেন, ‘পঞ্চগড়ে যাওয়ার জন্য হানিফ এবং নাবিলেরই এসি বাস আছে। এর মধ্যে হানিফের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে কাটতে হবে। ইফতারের পর অফিস শেষে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটা কঠিন। তার মধ্যে টিকিট পাওয়ারও নিশ্চয়তা নেই।’ তার মতে, অনলাইনে ঈদের টিকিট ছাড়ার পর থেকেই সিট বুক হতে থাকে। যার কারণে আর দেরি করেননি।
সহজ ডটকম-এর ওয়েবসাইট ঘেঁটে ও নাবিল পরিবহনের কাউন্টারে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে পঞ্চগড় রুটে তাদের দুটি এসি বাস চলাচল করে। এর মধ্যে একটি স্ক্যানিয়া ব্র্যান্ডের বিসনেস ক্লাস, আর অপরটি হিনো ব্র্যান্ডের ইকোনমি ক্লাস।
২৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিজনেস ক্লাস (কোচ নং: ১১২-এসি) বাসটির ভাড়া ১ হাজার ৭০০ টাকা এবং ইকোনমি ক্লাস (কোচ নং: ৫২০-এসি) ১ হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু ২৫ এপ্রিলের পর থেকে পাল্টে যাবে সব হিসাব। ওই দিন থেকে ১ মে পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ টাকার ভাড়া ২ হাজার ৭০০ আর ১ হাজার ১০০ টাকার ভাড়া ২ হাজার করে নিচ্ছে কোম্পানিটি।
পাশাপাশি তাদের নন-এসি বাসেও সিটপ্রতি ৯০-১০০ টাকা করে ভাড়া বাড়িয়ে অনলাইনে তালিকা প্রকাশ করেছে।
শুধু পঞ্চগড় রুটেই নয়, উত্তরের আরেক জেলা দিনাজপুরেও একই অবস্থা। ওই পথে নাবিল পরিবহন ও এস আর ট্রাভেলস ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিজনেস ক্লাস এসিতে চলমান ভাড়া ১ হাজার ৩০০ করে রাখলেও ২৫ এপ্রিল থেকে একই বাসে ভাড়া নিচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকা করে। পাশাপাশি নন-এসিতেও ভাড়া বাড়িয়ে ৭৫০-এর জায়গায় নিচ্ছে ৭৯০ টাকা করে।
ঢাকা থেকে রংপুর পর্যন্ত ২৫ এপ্রিলের পর থেকে সব বাস কোম্পানি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ওই রুটে চলাচলকারী বিজসেন ক্লাস এসি বাসগুলো ভাড়া নিচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা করে। আর ২৫ তারিখ থেকে সেই ভাড়া হয়ে যাচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা।
ঈদযাত্রাকে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। আর এসব বিষয়ে অভিযোগ করারও কোনো জায়গা নেই।
যদিও সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীকে জানানোর পর তিনি সব খোঁজ নেবেন বলে জানান। বলেন, কেউ বেশি ভাড়া নিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ২৩ এপ্রিল। টিকিট স্টেশনে কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনেও বিক্রি হবে। সূত্র: সময় নিউজ।
এনটি