সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


রমজান: সহমর্মিতার পাঠশালা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি এনায়েত কবীর।।

ভালো ফলন পাওয়ার জন্য ভূমিকে শুধু আগাছা ও পরগাছা থেকে মুক্ত রাখাই কি যথেষ্ট? না, বরং সেখানে ভালো মানের শস্যও রোপণ করা লাগে। তেমনিভাবে পাপের আগাছা ও জঞ্জাল থেকে রোজাকে মুক্ত রাখার সাথে সাথে সাওয়াব ও ইতিবাচক আরো অনেক কাজ করা উচিত। সাওয়াব ও ইতিবাচক কাজের একটি ধরণ হতে পারে সহমর্মিতা। কারণ হাদিসে পাকে এই রমজান মাসকে সহমর্মিতার মাস বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

এক হাদিসে নবিজী ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে তার কাজের লোকদের বোঝাকে হালকা করে দিবে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। সহীহ ইবনে খুযাইমা ১৮৮৭।

কারণ মালিকপক্ষের মত শ্রমিকরাও তো রোজা রেখে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়। আর কোন বান্দার সাথে আল্লাহর তেমনটাই করেন সে যেমন অন্যের সাথে করে। তাই আল্লাহ তা'আলা অধিনস্তদের কষ্ট লাঘব করে দেওয়ার কারণে মালিককে জাহান্নামের কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়ে দিবেন।

হযরত আবূ হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত। এক অভাবী লোক নবিজির কাছে এসে কিছু সাহায্য চাইল। তখন নবীজি বাড়িতে লোক পাঠালেন। বাড়ি থেকে জানানো হলো, আমাদের কাছে পানি ছাড়া কিছু নেই।

নবিজি বললেন, কে আছ তাকে মেহমান হিসেবে নিজের সাথে খাওয়াতে পার? তখন এক আনসারী সাহাবী বললেন, আমি। এ বলে তিনি মেহমানকে নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন, নবীজির মেহমানকে সম্মান কর।

স্ত্রী বললেন, বাচ্চাদের খাবার ছাড়া আমাদের ঘরে অন্য কিছুই নেই। আনসারী বললেন, তুমি আহার প্রস্তুত কর এবং বাতি জ্বালাও এবং বাচ্চারা খাবার চাইলে তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দাও।

সে বাতি জ্বালাল, বাচ্চাদেরকে ঘুম পাড়াল এবং সামান্য খাবার যা তৈরী ছিল তা উপস্থিত করল। বাতি ঠিক করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মত শব্দ করতে লাগলেন এবং মেহমানকে বুঝাতে লাগলেন যে, তারাও সঙ্গে খাচ্ছেন।

তাঁরা উভয়েই সারা রাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি নবিজির নিকট গেলেন, তখন তিনি বললেন, আল্লাহ্‌ তোমাদের গত রাতের কান্ড দেখে হেসে দিয়েছেন অথবা বলেছেন খুশী হয়েছেন এবং এ আয়াত নাযিল করেছেন।

“তারা অভাবগ্রস্ত সত্ত্বেও নিজেদের উপর অন্যদেরকে অগ্রগণ্য করে থাকে। আর যাদেরকে অন্তরের কৃপণতা হতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলতাপ্রাপ্ত।” সূরা হাশর ৯, সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৭৯৮।

সহমর্মিতার অপূর্ব নজির

ইয়ারমুক যুদ্ধের কথা। যুদ্ধের এক পর্যায়ে হযরত হুযায়ফা রা. তার চাচাতো ভাইকে খুঁজছিলেন। সাথে ছিল সামান্য পানি। হযরত হুযায়ফা রা তার চাচাত ভাই কে পেলেন। কিন্তু তখন তার শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছিল। অবস্থা আশংকাজনক। হযরত হুযায়ফা রা. তাকে বললেন, তুমি কি পানি পান করবে? তার কথার কোন উত্তর দিতে সক্ষম না হয়ে হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত করল।

আহত ব্যক্তি হযরত হুযায়ফা রা কাছ থেকে পানি হাতে নিতেই পাশে এক সৈন্যকে পানি পানি বলে চিৎকার করতে লাগল। পিপাসার্ত ঐ সৈনিকের বুকফাটা আর্তনাদ শুনে তার পূর্বে তাকে পানি পান করানোর জন্য হযরত হুযায়ফা রা কে ইঙ্গিত দিলেন। হযরত হুযায়ফা তার নিকট গিয়ে বললেন, আপনি কি পানি পান করতে চান? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

তিনি পান করার জন্য পাত্র ওপরে তুলে ধরতেই পানির জন্য অন্য একজন সৈন্যের চিৎকার শুনতে পেলেন। তিনি পানি পান না করে হযরত হুযায়ফা রা. কে বললেন, তার দিকে দ্রুত ছুটে যাও এবং সে পানি পান করার পর কিছু থাকলে আমাকে দিয়ো। হযরত হুযায়ফা আহত সৈন্যর কাছে গিয়ে দেখলেন সে শহীদ হয়েছে। অতপর দ্বিতীয় জনের কাছে এসে দেখলেন তিনিও শহীদ হয়ে গেছেন।

অতপর চাচাতো ভাইয়ের কাছে ফিরে এসে দেখেন তিনিও শাহাদতের অমীয় সুধা পান করে জান্নাতবাসী হয়ে গেছেন। পানির পাত্রটি তখনও হযরত হুযায়ফা রা এর হাতে। এতটুকু পানি।

অথচ তা পান করার মত এখন আর কেউ বেঁচে নেই। যাদের পানির প্রয়োজন ছিল তারা আরেক জনের পানির পিপাসা মেটানোর জন্য এত ব্যাকুল ছিলেন যে অবশেষে কেউ সে পানি পান করতে পারেননি। সবারই প্রাণ ছিল ওষ্ঠাগত। অপূর্ব সহমর্মিতা কারণে সবাই একে অপরের জন্য পানি ফিরিয়ে দিয়েছেন। আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৭/৮-১১। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে। সর্বক্ষেত্রে সহমর্মী হওয়ার তৌফিক দান করুন।

লেখক: শিক্ষক, শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ