সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


একজন গায়িকার ইসলাম গ্রহণ ও পরবর্তী অনুশোচনা: মাওলানা তারেক জামিল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।

প্রিয় ভাইয়েরা! দুই বছর আগের কথা। আমি আমেরিকায় যাই। তখন হায়দারাবাদের আমীরুদ্দীন নামে একজন আমাদের সাথে গাশতে যায়। সেখানে আরব মুসলমানদের একটি এলাকা ছিলো।

আমরা সেখানে দাওয়াত দেওয়ার জন্য রওয়ানা হই। যাওয়ার পর দেখতে পাই তারা সকলেই মদ খেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। আর একজন মেয়ে উলঙ্গ স্টেজে নাচতে ছিলো। সাথে একজন ছেলে তবলা বাজিয়ে মেয়েটিকে উৎসাহিত করতেছিলো।

যখন তারা সকলকে একত্র করে দাওয়াত দেওয়া শুরু করেছিলো, তখন ওই মেয়েটি তাদের পিছনে এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের দাওয়াতী কথাবার্তাগুলি মনোযোগের সাথে শুনতেছিলো।

অন্যরা তো নেশায় মত্ত ছিলা। তাদের তো আর দীনের কথা বুঝার মতো কোন পরিবেশ ছিলো না। কিন্তু পিছন থেকে মেয়েটি তাদেরকে বললো, আপনা বলতে থাকুন। আমি আপনাদরে কথাগুলি বুঝতেছি। তাবলীগের সাথীরা মাথা নীচু করে মেয়েটিকে দীনের কথাবার্তা বুঝানোর চেষ্টা করছিলেন। দীনের কথাবার্তা শোনার পর মেয়েটি বললো, হঁ্যা।

আপনাদের কথাগুলি ঠিক আছে। আমি মুসলমান হতে চাই। আর ওইযে তবলা হাতে লোকটি সে আমার স্বামী। সেও মুসলমান হতে চায়। আপনারা আমাদেরকে মুসলমান বানান। তখন তারা উভয়ে মুসলমান হয়ে যায়।

তাবলীগের সাথীরা মেয়েটিকে বললো, ঠিক আছে। এখানে জামাত থাকবে। তুমি কাপড় পরিধান করে পর্দার সাথে আলোচনা শোনার জন্য আসতে পারেন। মেয়েটি প্রতিদিন পর্দার সাথে এসে দীনি আলোচনা শুনতো। আর তাদের কাছ থেকে বুঝে নিতো। যখন তাবলীগের সাথীদের সময় শেষ হয়ে যায়, তখন তারা মেয়েটিকে বললো, কোন বিষয়ে সমস্যা হলে ফোনে সমাধান জেনে নিবেন।

দুই মাস বা আরো বেশি সময় পর ওই মেয়ের ফোন আসে। ফোনে বলে আপনি কি আমাকে চিনেন কর্নেল সাহেব? উত্তরে কর্নেল সাহেব বলেন, হঁ্যা। তুমি ওই মেয়ে না। দুই মাস আগে আমি তোমাকে দেখেছিলাম। এবং মুসলমান বানিয়ে ছিলাম। তখন ওই মেয়ে বললো, কর্নেল সাহেব! আপনি আমার জীবন পরিবর্তনের মাধ্যম হয়েছেন। আমাকে মুসলমান বানিয়েছেন। ইসলাম গ্রহণের আগে আমরা স্বামী—স্ত্রী মিলে একরাতে পাঁচ লাখ ডলার উপার্জন করতাম।

কিন্তু আমরা মুসলমান হওয়ার পর বুঝতে পারলাম মেয়েদের দ্বারা উপার্জন করা ইসলাম সমর্তন করে না। তখন আমি স্বামীকে বললাম, এখন থেকে শুধু আপনি কামাই করবেন। আমি শুধু ঘরে থাকবো। ঘরের কাজকর্ম করবো। কিন্তু আমি ঘরে বসে যাওয়াতে স্বামী কাজের কোন পথ বের করতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে আমার স্বামী শ্রমিকের কাজ শুরু করে।

এখন আমার স্বামী দিনে মাত্র চল্লিশ ডলার পান। আমেরিকাতে পাঁচ শত ডলার থেকে চল্লিশ ডলারে নেমে আসা আত্মহত্যার সমান। আমরা সংসার চালাতে গিয়ে ঘর বিক্রি করে দিই। গাড়ি বিক্রি করে দিই। বর্তমানে একটি ছোট্ট ফ্লাটে আমরা থাকি। আর আপনি বলেছিলেন, আমরা যেনো পরিবারকে দীনের দাওয়াত দিই। এখন তো আমাদের কোন গাড়ি নেই।

আমরা পাবলিক বাসে সফর করি। আজ আমরা দাওয়াতের উদ্দেশ্যে পরিবারের কাছে যাচ্ছিলাম। আমার হাতে একটি ডান্ডা ছিলো। যা আমি ধরে রেখেছিলাম। যখন বাসে উঠতে ছিলাম তখন আমার বাহু থেকে জামার কিছু অংশ খুলে যায়। এই কারণে কি আমার জাহান্নামে যেতে হবে? এই বলে সেই মেয়ে কান্নাকাটি শুরু করলো।

অথচ, অল্প কয়দিন আগে এই মেয়েই স্টেজে উলঙ্গ হয়ে নাচ গান করতো। কিন্তু এখন এই মেয়ের শরীর থেকে অল্প কাপড় খুলে যাওয়াতে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। জাহান্নামে যাওয়ার ভয় অন্তরে প্রবেশ করে নেয়। এমন হলো কেনো? পরিবেশের কারণে। আগের পরিবেশে তাকে উলঙ্গ হতে উদ্ভুদ্ধ করেছিলো। কিন্তু বর্তমান পরিবেশ তাঁকে এই সুন্দর পরিবেশে নিয়ে এসেছে।

যখন পরিবেশ নোংরা ছিলো তখন আমাদের মেয়েরাই উলঙ্গ হওয়া শিখতে ছিলো। এবং স্টেজে ওঠে উলঙ্গ হয়ে নাচ গান করতে প্রতিযোগিতা করতো। কিন্তু যখন ইসলামের পরিবেশে চলে আসলো তখন তাঁর মধ্যেই সামান্য কাপড় খুলে যাওয়াতে চোখে কান্না চলে আসলো। অন্তরে জাহান্নামের ভয় চলে আসলো। আল্লাহ তায়ালার ভয় অন্তরে চলে আসলো।

সূত্র: মাওলানা তারিক জামিল সাহেবের বয়ানের অনুবাদ

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ